ঘৃণা জানিয়ে দাঁড়াননি কোনো আইনজীবী

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),সিলেট প্রতিনিধি,২৯ সেপ্টেম্বর : সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে তরুণীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার সাইফুর রহমান, অর্জুন লস্কর ও রবিউল ইসলামকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। গতকাল সোমবার তাঁদের আদালতে হাজির করা হয়। তবে ঘৃণা জানিয়ে আদালতে ‘ধর্ষক’দের পক্ষে সিলেটের কোনো আইনজীবী দাঁড়াননি। এর আগে এজাহারভুক্ত আসামিদের তথ্যে গত রবিবার গভীর রাতে রাজন মিয়া (২৭) ও মো. আইনুদ্দিন (২৬) নামের আরো দুজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৯। এ নিয়ে এজাহারভুক্ত চার আসামিসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও র‌্যাব।

ছাত্রাবাসে তরুণীকে দল বেঁধে ধর্ষণের ঘটনায় করা মামলার এজাহারভুক্ত তিন আসামিকে গতকাল আদালত পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর মধ্যে গতকাল সকাল ১১টা ৫১ মিনিটের দিকে দুই আসামি সাইফুর রহমান (২৮)  ও অর্জুন লস্করকে (২৫) পুলিশের ভ্যানে করে শাহপরান থানা থেকে আদালতে নিয়ে আসা হয়। দুপুর ১২টার দিকে মহানগর হাকিম আদালত-২-এর বিচারক সাইফুর রহমানের আদালতে তাঁদের উপস্থিত করে সাত দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। আদালত দুই আসামির প্রত্যেককে পাঁচ দিন করে রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন। এরপর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মামলার আরেক এজাহারভুক্ত আসামি রবিউল ইসলামকে (২৫) একই আদালতে তোলা হলে আদালত তাঁরও পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

সিলেট মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) অমূল্য কুমার চৌধুরী বলেন, ‘মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আসামিদের সাত দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেছিলেন। পরে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।’

আসামিদের পক্ষে দাঁড়াননি কোনো আইনজীবী : চাঞ্চল্যকর এ মামলার আসামিদের পক্ষে সিলেট জেলা বারের কোনো আইনজীবী দাঁড়াননি। তবে বেশ কয়েকজন আইনজীবী রাষ্ট্রপক্ষের সহযোগিতা করে শুনানিতে অংশ নেন। এ ব্যাপারে সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ টি এম ফয়েজ বলেন, ‘আইনজীবীদের এ সিদ্ধান্ত ব্যক্তিগত। ঘৃণা প্রকাশের জন্যই স্বপ্রণোদিত হয়ে কোনো আইনজীবী আসামিপক্ষে মামলা পরিচালনা করতে যাননি।’ এখন পর্যন্ত সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতি আনুষ্ঠানিকভাবে এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যেহেতু আইনি সুবিধা মানুষের সাংবিধানিক অধিকার, তাই আইনজীবী সমিতি আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো পক্ষে না থাকার সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।’

নিজেকে নির্দোষ দাবি করে তিনজনের নাম বললেন সাইফুর : আলোচিত গণধর্ষণ মামলায় আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী না দাঁড়ানোয় আদালত আসামিদের কাছে তাঁদের কোনো বক্তব্য আছে কি না জানতে চান। রাষ্ট্রপক্ষের সহযোগিতায় থাকা একাধিক আইনজীবী বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এ সময় সাইফুর রহমান নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। তিনি আদালতকে বলেন, ‘রাজন, আইনুদ্দিন ও তারেক এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আমি জড়িত ছিলাম না।’

আদালত প্রাঙ্গণে ‘জানোয়ার’ স্লোগানে ধিক্কার : গতকাল সকাল ১১টা ৪০ মিনিট। কড়া পুলিশি পাহারায় প্রিজন ভ্যানে করে আদালতে আনা হয় দুই আসামি সাইফুর রহমান ও অর্জুন লস্করকে। আদালতে হাজির করার আগেই আদালত চত্বরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। মোতায়েন করা হয় বিপুলসংখ্যক পুলিশ। সাইফুর ও অর্জুনকে যখন আদালত চত্বরে হাজির করা হয় তখন বিক্ষোভ দেখায় উপস্থিত জনতা। উপস্থিত শতাধিক জনতা দুই আসামিকে দেখা মাত্রই ‘ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই’ স্লোগান দিতে থাকে। অনেকে আসামিদের লক্ষ্য করে ‘জানোয়ার, জানোয়ার’ বলেও স্লোগান দিতে থাকেন। কেউ কেউ ‘মার, মার’ বলেও হাঁক দেন। তবে পুলিশ তৎপর থাকায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

আরো দুই আসামি গ্রেপ্তার : এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া মামলার এজাহারভুক্ত আসামিদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজন মিয়া ও মো. আইনুদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-৯। গত রবিবার রাত ১টার দিকে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের কচুয়া নয়াটিলা গ্রাম থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে শায়েস্তাগঞ্জ পৌর শহর থেকে এই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি শাহ মো. মাহবুবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৯। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে এই দুজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এই নিয়ে এ ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গ্রেপ্তারকৃত বাকি আসামিরা হলেন সাইফুর রহমান (২৮), শাহ মাহবুবুর রহমান ওরফে রনি (২৫), অর্জুন লস্কর (২৫) ও রবিউল ইসলাম (২৫)।