সাহেদের দাবি অসুস্থ, রিপোর্ট বলছে সুস্থ

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),বিশেষ প্রতিনিধি,১৯ আগষ্ট : দুর্নীতির দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় রিমান্ডে থাকা রিজেন্ট গ্রুপ ও রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম নিজেকে অসুস্থ দাবি করেছেন। কিন্তু পর্যায়ের স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট বলছে ভিন্ন কথা।

ফারমার্স ব্যাংক থেকে ঋণ আত্মসাতের মামলায় গত ১৭ আগস্ট রিমান্ডে প্রথম দিন জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাত থেকে বুকে ব্যাথায় কাতর সাহেদ। দুদকের দায়িত্বপ্রাপ্ত টিম দ্রুত গতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে নিয়ে যান চেক আপের জন্য। রাতেই ইসিজি, এক্সরে, ডায়াবেটিকস পরীক্ষা, রক্ত পরীক্ষা, হার্ডবিট ও প্রেসার চেক করা হয়। কিন্তু কোনো রিপোর্টেই কোনো অস্বাভাবিকতা ধরা পড়েনি। তবু ডাক্তারের পরামর্শে কিছু ওষধ খেতে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতে ব্যাথা কমেনি দাবি সাহেদের।

মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) সকালে দ্বিতীয় দিনের মতো রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা ছিল। রিমান্ড শুরু না করে সকালে পুনরায় হাসপাতালে ডাক্তারের পরামর্শে আবার ইসিজি, এক্সরে, রক্ত পরীক্ষা, হার্ডবিট ও প্রেসার পরীক্ষা কিন্তু রিপোর্ট আবারো স্বাভাবিক। রাতে প্রেসার ছিল ১০০/৮০ সকালেও প্রায় কাছাকাছি। অর্থ্যাৎ রিজেন্টের সাহেদ বারবার বুকে ব্যাথার কথা বললেও রিপোর্ট ও তার শারীরিক মুভমেন্টে কোনো অস্বাভাবিকতা পায়নি দুদক টিম।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের এক কর্মকর্তা ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি)কে বলেন, মূলত দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ এড়াতে সাহেদ এমন অসুস্থতার অভিনয় করছেন বলে মনে হচ্ছে। তিনি বারবার অসুস্থতার কথা বললেও বিভিন্ন রিপোর্টের সাথে কথার কোনো মিল পাওয়া যায়নি। তবু আমরা সতর্ক রয়েছি। তাকেও বোঝানোর চেষ্টা করছি অসুস্থতার কোনো অজুহাতই রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ এড়ানো যাবে না। কারণ ইতোমধ্যে দুদকের দুই মামলার আসামি সে। সামনে আরো মামলা হতে পারে। তাই প্রয়োজনে আদালত থেকে অন্য মামলায়ও রিমান্ড আনার সুযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে দুদকের জনসংযোগ (পরিচালক) কর্মকর্তা প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি)কে বলেন, রিজেন্টের সাহেদ অসুস্থ অনুভব করায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। পরীক্ষা-নিরাক্ষা করা হয়েছে। আমাদের টিম সার্বক্ষনিক পর্যবেক্ষণ করছে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুসরণ করেই তার বিষয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

পদ্মা ব্যাংক (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক) অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় তাকে দ্বিতীয় দিনের মতো মতো জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা ছিল। সাবেক ফারমার্স ব্যাংক অর্থ আত্মসাৎ মামলায় সাহেদ করিমকে সাত দিনের রিমান্ডে প্রথম দিন জিজ্ঞাসাবাদ করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান মিরাজ। সোমবার দুপুরে তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে দুদক কার্যালয়ে নিয়ে জেরা করা হয়।

এর আগে ১০ আগস্ট ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েস সাত দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন সাহেদের। তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আদালতে আবেদন করেন দুদকের মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান মিরাজ।

গত ২৭ জুলাই সাহেদ ও বাবুল চিশতীসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। ওই মামলার এজাহারে বলা হয়, রিজেন্ট হাসপাতালের জন্য পদ্মা ব্যাংক বা সাবেক ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান কর্পোরেট শাখা থেকে ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে এমআরআই মেশিন ক্রয়ের জন্য দুই কোটি টাকা ঋণের জন্য আবেদন করেন মো. সাহেদ। অথচ ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা ও ক্রেডিট রিক্স গ্রেডিং নিরুপন না করেই ফারমার্স ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাহী কমিটির সভাপতি মো. মাহবুবুল হক চিশতী ঋণ অনুমোদন করে। যা পরবর্তীতে ওই বছরের ১৫ জানুয়ারির ২১তম সভায় সাহেদের অনুকূলে দুই কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন হয়। যা পে-অর্ডারের মাধ্যমে এবং এমআরআই মেশিন ক্রয় করা হয়েছে এমন জাল কাগজপত্র দেখিয়ে ২১ জানুয়ারি শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের উত্তরা মহিলা শাখার মাধ্যমে দুই কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়। তবে শর্তানুযায়ী ১ কোটি টাকার এফডিআর করতে হয় সাহেদকে। ঋণ নেওয়ার পর কোনো কিস্তি পরিশাধ না করায় ঋণ হিসাবটি অনিয়মিত হওয়ার কারনে ব্যাংকের নিকট লিয়েন থাকা ওই এফডিআর থেকে এক কোটি টাকা সমন্বয় করা হয়। আর বাকি ১ কোটি টাকা অনাদায়ী থেকে যায় বা আত্মসাৎ হয়। যা সুদাসলসহ ২ কোটি ৭১ লাখ টাকা হয়েছে।

এছাড়া রিজেন্ট হাসাপাতালের নামে এনআরবি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে দেড় কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আরো একটি মামলা দায়ের হয়েছে সাহেদের বিরুদ্ধে।