সালিশের নামে বন্দী কিশোরদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছেন কর্মকর্তারাই

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),যশোর প্রতিনিধি,১৫ আগষ্ট : যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে সালিশের নামে কর্মকর্তারাই বন্দী কিশোরদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছেন এবং এ কাজে তাদের অনুগত কেন্দ্রের অপর সাত বন্দী সহযোগিতা করেছে। এরপর তথ্য গোপন ও বিনা চিকিৎসায় আহতদের ফেলে রাখায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।

শনিবার (১৫ আগস্ট) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন পুলিশ সুপার আশরাফ হোসেন।

তিনি বলেন, এই নির্যাতনকাণ্ডে কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়কসহ পাঁচ কর্মকর্তা সরাসরি জড়িত। সকালে তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়েছে। অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের সাত দিনের রিমান্ডে নেবার জন্য আবেদন করা হয়েছে।

আটককৃতরা হলেন, তত্ত্বাবধায়ক (সহকারী পরিচালক) আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, সহকারী তত্ত্বাবধায়ক (প্রবেশন অফিসার) মাসুম বিল্লাহ, কারিগরি প্রশিক্ষক (ওয়েল্ডিং) মো. ওমর ফারুক, ফিজিক্যাল ইনসট্রাক্টর একেএম শাহানুর আলম এবং সাইকোসোশ্যাল কাউন্সিলর মুশফিকুর রহমান।

পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন জানান, গত ৩ আগস্ট কেন্দ্রের হেডগার্ড নূর ইসলাম বন্দী কিশোর হৃদয়কে তার চুল কেটে দিতে বলেন। ঈদের আগে হৃদয় কেন্দ্রের প্রায় ২০০ শিশু-কিশোরের চুল কাটে। সেদিন সে হাতে ব্যথার কথা বলে চুল পরে কেটে দেয়ার কথা জানালে হেডগার্ড বিষয়টি অতিরঞ্জিত আকারে সহকারী তত্ত্বাবধায়ক মাসুম বিল্লাহকে অবহিত করেন। ওই সময় তত্ত্বাবধায়ক আব্দুল্লাহ আল মাসুদসহ অন্য কর্মকর্তারা সেখানে ছিলেন। নূর ইসলাম তাদের জানান, হৃদয় ও অপর বন্দী পাভেল নেশা করে এবং তারা সমকামী। ওই সময় অফিস কক্ষে আরেক বন্দী নাঈম উপস্থিত ছিল এবং সে পাভেলকে বিষয়টি জানায়। এরপর পাভেল ও তার সহযোগীরা হেডগার্ড নূর ইসলামকে মারধর করে তার একটি হাত ভেঙে দেয়।

তিনি জানান, ১৩ আগস্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জাতীয় শোক দিবস পালনের লক্ষ্যে একটি সভায় মিলিত হন। এই সভা শেষে উপস্থিত কর্মকর্তারা ৩ তারিখের ঘটনায় সম্পৃক্তদের ‘শায়েস্তা’ করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর মারধরের ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ ও সাক্ষীদের মাধ্যমে জড়িতদের শনাক্ত করে তাদের ১৩ আগস্ট ডরমেটরিতে ১৮ জনকে ডেকে পাঠান।

পুলিশ সুপার জানান, কেন্দ্রের কর্মকর্তারা তাদের অনুগত সাত কিশোর বন্দীকে ব্যবহার করেন ওই ১৮ জনকে নির্যাতন করতে। তারা প্রত্যেক কিশোরকে ধরে জানালার গ্রিলের ভেতর দিয়ে দুই হাত ঢুকিয়ে অপরপাশে আরেকজন দিয়ে হাত ধরায়, পা বাঁধে এবং মুখে কাপড় ঢুকিয়ে লাঠি ও লোহার পাইপ দিয়ে কোমর থেকে পা পর্যন্ত পিটিয়ে জখম করে।

কিশোরদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জানতে পারে, কর্মকর্তারা তাদের নির্দেশ দেন, অচেতন না হওয়া পর্যন্ত যেন পেটানো হয়। এর ফলে কিশোররা অচেতন হয়ে পড়লে তাদের ফেলে রাখা হয় এবং জ্ঞান ফিরলে আবারও একই কায়দায় দফায় দফায় মারধর করা হয়।

এসপি বলেন, সেদিন তাপমাত্রাও বেশি ছিল। সারা দিন কিছু খেতে না দেয়া ও চিকিৎসা না করে ফেলে রাখায় আহতরা অসুস্থ হয়ে পড়েন। অবস্থা গুরুতর হলে একজন কম্পাউন্ডারকে ডাকা হয়। সে ব্যর্থ হলে সন্ধ্যায় মরণাপন্ন অবস্থায় নাঈম নামে এক কিশোরকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবে চিকিৎসক জানিয়ে দেন, হাসপাতালে আসার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ ঘটনার প্রায় ৬ ঘণ্টা পর হাসপাতাল সূত্রেই এই রোমহর্ষক ঘটনার খবর জানতে পারে। এরপর কেন্দ্রে গিয়ে ডরমেটরি থেকে আরও দুই কিশোরকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে। একই সঙ্গে আহত ১৫ জনকে হাসপাতালে পাঠায়।

এসপি জানান, আমরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত সন্দেহে ১০ জনকে প্রথমে হেফাজতে নেই। পরে আরও ৯ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এরপর যাচাই-বাছাই করে পাঁচজনের সরাসরি সম্পৃক্ততা এবং পাঁচজনকে সাক্ষী হিসেবে পেয়েছি।

এদিকে, গ্রেফতার পাঁচ কর্মকর্তাকে দুপুরে যশোরের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহাদি হাসানের আদালতে সোপর্দ করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর রকিবুজ্জামান। শুনানি শেষে বিচারক আসামিদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে রিমান্ড শুনানির জন্য আগামী ১৭ আগস্ট দিন ধার্য করেন বলে আসামিপক্ষের আইনজীবী সালাহউদ্দিন শরীফ শাকিল নিশ্চিত করেছেন।