কাস্টমার কেয়ার থেকে ‘প্লাস চিহ্নযুক্ত’ ফোন এলেই সাবধান!

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,ষ্টাফ রিপোর্টার,০৭ জুন : মোবাইল ব্যাংকিং কিংবা ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডের সেবার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কাস্টমার কেয়ারের নম্বরের মতো হুবহু নম্বর থেকে ফোন দিয়ে বিভিন্ন অযুহাতে জানতে চাওয়া হচ্ছে গ্রাহকের বিস্তারিত তথ্য।  মূলত এগুলো কাস্টমার কেয়ারের নম্বর স্পুফিং (একধরনের প্রতারণা) করা প্রতারণামূলক ফোন।

তবে কাস্টমার কেয়ারের নম্বর মনে করে গ্রাহকরাও সহসাই পা দিচ্ছেন অভিনব প্রতারণার ফাঁদে! স্পুফিং করা ফোনে গ্রাহকের তথ্য জেনে মোবাইল ব্যাংকিং কিংবা কার্ডের সব অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্র।

আর নম্বর এক হলেও প্রতারকদের কলের ক্ষেত্রে সাধারণত নম্বরের আগে ‘প্লাস চিহ্ন’ থাকে বলে জানিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। উদাহরণ হিসাবে- কোনো কাস্টমার কেয়ারের নম্বর যদি ‘১২২১’ হয়, তাহলে প্রতারকদের দেওয়া ফোন কলে নম্বর হবে ‘+১২২১’।

শনিবার (০৬ জুন) রাজধানী এবং ফরিদপুরের ভাঙা এলাকা থেকে র‌্যাব-২ এবং র‌্যাব-৮ এর যৌথ অভিযানে এই চক্রের ১৩ সদস্যকে আটক করে।  রোববার (০৭ জুন) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম।

আটকরা হলেন- নাজমুল জমাদ্দার (১৯), হাসান  মীর (১৮), ইব্রাহিম  মীর  (১৮), তৌহিদ  হাওলাদার (২৩), মোহন  শিকদার  (৩০), পারভেজ  মীর (১৮), সোহেল  মোল্যা (২৬), দেলোয়ার হোসেন (৩৫), সৈয়দ  হাওলাদার (২০), রাকিব হোসেন  (২৪), মোহাম্মদ  আলী  মিয়া (২৬), পলাশ  তালুকদার  (৩৪) ও ইমন (২৫)।  এ সময় তাদের কাছ থেকে ১৪ লাখ ৮৩ হাজার ৪৬২ টাকা,  ৩১টি মোবাইল ফোন, ২টি ল্যাপটপ, ২টি  ট্যাব, ১২০টি  সিম, ১টি রাউটার এবং ১টি টিভি কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে।

দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে মানুষের বাইরে যাওয়া এড়াতে মোবাইল ব্যাংকিং কিংবা ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন বেড়েছে। আর এ সুযোগটি কাজে লাগিয়েছে প্রতারক চক্র। বেশকিছু অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত সাপেক্ষে এই চক্রের ১৩ সদস্যকে আটক করা হয়, যারা প্রত্যেকেই প্রাথমিকভাবে এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছ।

আটকদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি বলেন, একজন মাস্টারমাইন্ডের অধীনে ৩০-৩৫ জন সদস্য কাজ করে থাকেন।  সাধারণত ৫টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে এ কার্যক্রম সম্পন্ন করে থাকে চক্রটি।  প্রথমত, চক্রের ‘হান্টার টিম’র সদস্যরা মাঠপর্যায়ে গ্রাহকদের তথ্য সরবরাহ করে থাকে।  তারা বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তা, মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টদের নম্বর সংগ্রহ করে মাস্টারমাইন্ডদের সরবরাহ করে। দ্বিতীয় ধাপে ‘স্পুফিং টিম’র সদস্যরা কাস্টমার কেয়ার নম্বর কিংবা ব্যাংক কর্মকর্তার নম্বর ক্লোন করে।  এর ফলে প্রতারকরা যখন গ্রাহকদের টার্গেট করে ফোন দেয়, তখন হুবহু সংশ্লিষ্ট নম্বরটি দেখতে পায়।  এতে বিভ্রান্ত হয়ে অনেক উচ্চশিক্ষিতরাও ফাঁদে পা দিচ্ছেন।  প্রতিটি নম্বর স্পুফিং বা ক্লোন করতে এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা পায় এই টিমের সদস্যরা।

তৃতীয় ধাপে সবচেয়ে প্রধান কাজটি করে থাকে ‘কাস্টমার কেয়ার’ টিমের সদস্যরা। তারা ১৫-২০ জন একসঙ্গে একটি রুমে বসে কথাবার্তা বলে একটি সত্যিকারের কাস্টমার কেয়ার সেন্টারের আবহ তৈরি করে।  গ্রাহককে ফোন দিলে আশপাশের নয়েজের মাধ্যমে তাকে বিভ্রান্ত করা হয়।

চক্রের মাস্টারমাইন্ড নিজেই দলটি পরিচালনা করেন। তারা কাস্টমার কেয়ার কর্মকর্তা সেজে কৌশলে গ্রাহকের কাছ থেকে গোপন পাসওয়ার্ড কিংবা ভেরিফিকেশন কোডসহ বিভিন্ন তথ্য নিয়ে নেন। সঙ্গে থাকা অন্যকেউ অ্যাপসের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করে অর্থ হাতিয়ে নেয়। এজন্য তারা নির্জন কোনো চর বা গাছপালা ঘেরা নিরাপদ জায়গা বেছে নেয়।

চতুর্থ ধাপে ‘টাকা উত্তোলন’ টিমের সদস্যরা গ্রাহকের কাছ থেকে অর্থ ট্রান্সফারের পরপর দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা এজেন্টদের মাধ্যমে নগদ টাকা উঠিয়ে নেয়। যেসব ব্যালেন্স উত্তোলন করা সম্ভব হয় না, সেসব দিয়ে বিভিন্ন কেনাকাটা করে নেয় তারা।

শেষ ধাপে ‘ওয়াচম্যান’ টিমের সদস্যরা স্থানীয়ভাবে ছোটখাট দোকান চালানোর কাজে সম্পৃক্ত।  যারা এলাকায় নতুন কোনো আগন্তুক কিংবা সন্দেহভাজন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সন্দেহ হলে মাস্টারমাইন্ডকে খবর দেন।  তারা ঘণ্টাভিত্তিক বা চুক্তিভিত্তিক কাজ করে থাকেন।

প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দলের মাস্টারমাইন্ড নিজের জন্য ৫০ ভাগ, সহযোগীদের জন্য ৩০ ভাগ, হান্টার টিমকে ২০ ভাগ এবং স্পুফিং টিমকে নম্বরপ্রতি এক-দেড় হাজার টাকা কিংবা কথা বলার সময়ের ভিত্তিতে টাকা দিয়ে থাকে।  এছাড়া লটারি বিজয়ী হওয়ার কথা বলেও সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলো চক্রটি।

আটকদের মধ্যে ৯ জনই মাস্টারমাইন্ড উল্লেখ করে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, আটক মোহন গত ২ মাসে প্রায় এক কোটি টাকা প্রতারণার মাধ্যমে উপার্জন করেছে বলে জানতে পেরেছি।  একটি গ্রুপকে আমরা ধরতে পেরেছি। সারা দেশে এমন ৪-৫টি গ্রুপ সক্রিয় থাকতে পারে, যাদেরকে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

গ্রাহকদের নম্বর হাতিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে এই চক্রের সঙ্গে মোবাইল ব্যাংকিং কিংবা ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা জড়িত কি-না খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানান তিনি।