ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,ষ্টাফ রিপোর্টার, প্রতিনিধি,০৫ মে : করোনার এই দুর্যোগকালেও ইয়াবা কারবারিরা সক্রিয়। ভয়াবহ এই ভাইরাসও তাদের রুখতে পারেনি। মিয়ানমার থেকে প্রত্যেক দিনই ইয়াবার চালান দেশে আসছে। বড় কারবারিরা ইয়াবা দেশে এনে একটি অংশ স্টক করছেন। আরেকটি অংশ লকডাউনের মধ্যে জরুরি পণ্য পরিবহনের আড়ালে দেশের নানা প্রান্তে পৌঁছে দিচ্ছে ইয়াবা। সবজি, চাল, ডাল ও অ্যাম্বুলেন্সে স্থানান্তর হচ্ছে ইয়াবা। আবার ত্রাণের প্যাকেটে হোম সার্ভিস ডেলিভারির আড়ালে মাদকসেবীদের কাছে খুচরা ব্যবসায়ীরা ইয়াবা পাঠাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও ইয়াবা, ফেনসিডিলের চালান ধরা পড়ছে। সংশ্নিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কক্সবাজার র্যাব-১৫-এর অধিনায়ক উইং কমান্ডার আজিম আহমেদ ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কমকে বলেন, করোনার মধ্যেও ইয়াবার কারবারিরা সক্রিয়। মিয়ানমার থেকে চালানও আসছে। কিছু চালান এরই মধ্যে জরুরি পণ্য পরিবহনের আড়ালে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে গেছে। এমন কয়েকটি চালান ধরাও পড়েছে। লকডাউন অবস্থায় জরুরি পণ্য পরিবহনের আড়ালে ইয়াবা কারবারিরা যাতে মাদক পাচার করতে না পারে সে ব্যাপারে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তিনি আরও জানান, কক্সবাজার থেকে প্রচুর পানের চালান ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যায়। পানের চালানের মধ্যেও মাদক যাচ্ছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসি (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কমকে বলেন, করোনা সংক্রান্ত যাবতীয় পরিস্থিতি মোকাবিলাকে এখন এক নম্বর অগ্রাধিকার দিচ্ছে পুলিশ। তার পরও মাদক কারবারের তথ্য পেলে অভিযান চালানো হয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, যেহেতু জরুরি পণ্য পরিবহনগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিছুটা কম তল্লাশি করে, তাই মাদক কারবারিরা এ সুযোগ নিচ্ছে। নদী ও সমুদ্রপথেও কক্সবাজার থেকে ইয়াবার চালান বরিশাল ও আশপাশের জেলায় নেওয়া হচ্ছে।
নরসিংদীর একটি স্থানীয় সূত্র জানায়, সেখানে ত্রাণের প্যাকেটের আড়ালে মাদকসেবীদের বাড়ি বাড়ি ইয়াবা বড়ি পৌঁছে দিচ্ছে একটি চক্র। তারা একে নাম দিয়েছে করোনাকালে মাদকের ইমার্জেন্সি সার্ভিস।
পুলিশ-র্যাবের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ থেকে দুটি চালান জব্দ করা হয়। একটি চালান পাঠানো হয়েছিল মুরগির গাড়িতে। আরেকটি চালান ছিল কাভার্ড ভ্যানে। লবণবোঝাই ওই কাভার্ডভ্যান থেকে ৫৯ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। ওই কাভার্ডভ্যানের চালক জিয়া ও তার সহযোগী মুন্না ওরফে আলাউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্র বলছে, এপ্রিল মাসে র্যাব, পুলিশ ও বিজিবির অভিযানে প্রায় তিন লাখ পিস ইয়াবা কক্সবাজারে উদ্ধার করা হয়। বিজিবির সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে একজন। সর্বশেষ গতকাল সোমবার গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ৪০ হাজার পিস ইয়াবা বড়ি জব্দ করে বিজিবি। টেকনাফের নাফ নদীতে অভিযান চালিয়ে এটা উদ্ধার করা হয়।
এ ছাড়া ৭ এপ্রিল নাইক্ষ্যংছড়ি রাস্তার মাথা এলাকা থেকে ২০ হাজার ইয়াবাসহ একজন যুবককে আটক করা হয়। ৮ এপ্রিল শহরের নুনিয়াছড়া এলাকা থেকে ৩০ বোতল ফেনসিডিলসহ তিনজনকে আটক করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ১৭ এপ্রিল ৪ হাজার ইয়াবাসহ একজনকে আটক করে উখিয়া থানা পুলিশ। ১৯ এপ্রিল থেকে তিন হাজার ৯৬০ ইয়াবাসহ দু’জনকে আটক করে র্যাব। ১৭ এপ্রিল টেকনাফের শাপলাচত্বর এলাকা থেকে ৪ হাজার ইয়াবাসহ এক যুবককে আটক করা হয়।
এ ছাড়াও ১৯ এপ্রিল টেকনাফের শাহপরীর গোলারচর এলাকায় বিজিবির সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় জাফর আলম নামে এক মাদক ব্যবসায়ী। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে দুই লাখ ইয়াবাসহ অস্ত্র-গুলি উদ্ধার করা হয়।
দাউদপুর সীমান্তে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় ফেনসিডিল ও গাঁজা আটক করা হয়। পুলিশ সূত্র জানায়, রাজশাহী মহানগর পুলিশ অভিযান চালিয়ে সম্প্রতি অন্তত ১০ মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করে। ২১ এপ্রিল রাজধানীতে মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে ইয়াবা ও ফেনসিডিলসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। অভিযানের সময় গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে ১২০ পিস ইয়াবা ও ৫ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়।