হোম কোয়ারেন্টাইনের নামে বর্বরতা (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,কোটালীপাড়া (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি,২৭ এপ্রিল : ঢাকার একটি হাসপাতালে স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে চাকরি করতেন জেসমিন (ছদ্মনাম)। গত মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) তিনি ছুটি নিয়ে বাড়িতে যান। এরপর স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার নির্দেশে এলাকাবাসী একটি নির্জন স্থানে পুকুরের মধ্যে তালপাতা দিয়ে ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে জেসমিনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব‌্যবস্থা করেন। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে সেখানেই অবস্থান করছেন তিনি।

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের লগন্ডা গ্রামের ঘটনা। বিষয়টি সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে প্রচার হলে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

ঢাকার ইমপালস হাসপাতালে চাকরি করতেন জেসমিন (২১)। করোনাভাইরাসের কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়। ছুটিতে ঢাকায় থাকতে না পেরে গ্রামের বাড়ি বাবা-মায়ের কাছে ফেরেন জেসমিন।

জেসমিনের বাড়ি ফেরার খবর পেয়ে সাদুল্লাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রশান্ত বাড়ৈ-এর নির্দেশে এলাকাবাসী তার বাড়ির কাছে নির্জন স্থানে পুকুরের ভেতর তালপাতা দিয়ে একটি ছোট্ট ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে দেন। সেখানেই হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বাধ‌্য করা হয় জেসমিনকে। সেখানে তার কোনো নিরাপত্তা নেই।

ভুক্তভোগী জেসমিন বলেন, ‘আজ প্রায় এক সপ্তাহ ধরে আমি এখানে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে মানবতার জীবন যাপন করছি। একজন স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে আমি অনেক মানুষকে স্বাস্থসেবা দিয়েছি। আর আজ এখানে থেকে আমার স্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে। আমার গ্রামের মানুষ যে এতটা নিষ্ঠুর হতে পারে, তা আমার জানা ছিল না।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে জেসমিনের মা বলেন, ‘আমার স্বামী নেই। আমার এই মেয়েটার আয়ে আমার সংসার চলে। আমার মেয়েটির এখনো বিয়ে হয়নি। তাকে এভাবে একটি পুকুরের মধ্যে ঝুপড়ি ঘরে রাখা হয়েছে। আমার মেয়েটির যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে এর দায় কে নেবে? এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা প্রশান্ত বাড়ৈ চাপ সৃষ্টি করে আমার মেয়েটিকে এখানে রেখেছে। আমি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

উপজেলার সাদুল্লাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রশান্ত বাড়ৈ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই। ওই মেয়েটিকে কেন ওখানে রেখেছে তাও আমি জানি না। এটা ওই মেয়েটির পরিবারের বিষয়। তবে আমি স্থানীয় রাজনীতি করি, আমার শত্রু  থাকতে পারে। এ ঘটনায় আমার নাম জড়ালো কেন আমি বলতে পারব না।’

কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুশান্ত বৈদ্য বলেন, ‘ওই মেয়টি বাড়িতে আসার পর পরিবারের লোকজন আমাকে জানায়। আমি তাকে আলাদা ঘরে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার কথা বলি। কিন্তু স্থানীয় লোকজন তাকে পুকুরের মধ‌্যে নির্জন ঘরে রেখেছে তা জানা ছিল না। থাকার ব্যবস্থা না থাবলে আমরা হাসাতালের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখতে পারতাম।’

কোটালীপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ লুৎফর রহমান বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই ঝুপড়ি ঘর ভেঙ্গে মেয়েটিকে উদ্ধার করি। পরে মেয়েটিকে আমরা বাড়িতে পাঠাই। ওই মেয়েটির সাথে যারা এই অমানবিক কাণ্ড ঘটিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মাহফুজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিষয়টি অত্যন্ত অমানবিক। এই স্বাস্থ্যকর্মীকে এলাকাবাসী এভাবে না রেখে আমাদের জানালে তাকে আমরা প্রতিষ্ঠানিক হোম কোয়ারেন্টিনে রাখতে পারতাম। আমরা তাকে ওখান থেকে এনে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করব। ওই নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে যারা এভাবে ঝুপড়ি ঘরের ভেতর রেখেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’