করোনা ঝুঁকি এড়াতে হোটেলে থাকবে পুলিশ – ফাইল ছবি
ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,ষ্টাফ রিপোর্টার,১৮ এপ্রিল : জীবনঘাতী করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ও সাধারণ মানুষকে নিরাপদে রাখতে সাধারণ ছুটির মধ্যেও নিরবচ্ছিন্ন দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ৫০টি থানার পুলিশ সদস্যরা। পাশাপাশি পুলিশ লাইনস ও পিওএম সদস্যরাও আন্তরিকভাবে সরকারি দায়িত্ব পালন করছেন।
দীর্ঘদিন ধরেই থানা ব্যারাক ও পুলিশ ব্যারাকে গাদাগাদি করে থাকছেন এসব পুলিশ সদস্যরা। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকির কারণে কর্মরত পুলিশের অনেক সদস্য অনেকদিন ধরে বাড়িতে যেতে পারছেন না।
তাই করোনা ঝুঁকি এড়াতে পুলিশ সদস্যদের নিজ নিজ থানার আশপাশের আবাসিক হোটেলগুলোতে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে ডিএমপির একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
জানা গেছে, এরই মধ্যে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দুই সদস্য করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের একজন অতিরিক্ত উপকমিশনার, আরেকজন কনস্টেবল। ওই টিমের বাকি সদস্যদের হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। আরো কয়েকজন পুলিশ সদস্যের শরীরে প্রাথমিকভাবে করোনার উপসর্গ দেখা দিচ্ছে।
আবাসিক হোটেলে থাকার নির্দেশনার ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান বলেন, করোনায় যেন সব পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পারেন এবং বিশ্রাম নিতে পারেন, সেজন্য ডিএমপি কমিশনার একটি নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই নির্দেশনা সবাইকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। পুলিশ সদস্যরা এখন সুবিধা অনুযায়ী পার্শ্ববর্তী আবাসিক হোটেলগুলোতে অবস্থান করে নিজেদের ও পরিবারের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারবেন।
ডিএমপি সূত্র জানায়, রাজধানীতে ৫০টি থানার ও পুলিশ লাইনের অনেক সদস্য করোনার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজেদের বাসায় ফিরতে পারছেন না। এদের অনেকেই কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ দিন ধরে বাসায় ফেরেননি। করোনা পরিস্থিতির কারণেই পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার কথা ভেবে বাসায় ফিরতে পারছেন না তারা। আবার থানা কোয়ার্টার বা পুলিশ লাইনেও থাকতে হচ্ছে গাদাগাদি করে, যেখানে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার সুযোগ নেই। কোনো পুলিশ সদস্য করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে থানার সব সদস্যই এই ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়তে পারেন।
জানা গেছে, এমন পরিস্থিতিতে ঢাকায় কর্মরত পুলিশ সদস্যদের নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ডিএমপি কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম সম্প্রতি একটি বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন।
ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, যেসব পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালনের পর সামাজিক দূরত্ব মেনে শোয়ার বা বিশ্রামের জায়গা পাচ্ছেন না, তারা থানার আশপাশের আবাসিক হোটেলগুলোতে রুম নিয়ে থাকতে পারবেন। যেসব হোটেলে ‘গেস্ট’ নেই, সেসব হোটেলের একেকটি রুম নিয়ে একেকজন থাকতে পারবেন।
ঢাকার পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনাতে আরো বলা হয়েছে, সেসব পুলিশ সদস্য একনাগাড়ে দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের বিশ্রামে রেখে আরেকটি দলকে মাঠে নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি ইউনিটকে ভাগ ভাগ করে ডিউটি করতে বলা হয়েছে।
মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানান, পুলিশ সদস্যরা ছোট ছোট গ্রুপে ডিউটি করতে গিয়ে কেউ আক্রান্ত হলেও তাতে শুধু ওই গ্রুপটিকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠালেই চলবে। সে কারণেই ছোট ছোট গ্রুপে দায়িত্ব পালনের কথা বলা হয়েছে।
ডিএমপির পল্টন থানা সূত্র জানায়, পল্টন থানা এলাকায় প্রায় ২০টি আবাসিক হোটেলের রুম বরাদ্দ দেয়া হয়েছে পুলিশ সদস্যদের থাকার জন্য। এসব হোটেল এমনিতেও বোর্ডার ছিল না।
তেজগাঁও থানা পুলিশ সূত্র জানায়, ফার্মগেট এলাকার অন্তত ১০টি আবাসিক হোটেল পুলিশ সদস্যদের জন্য নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটিতে পিওএম সদস্যরা অবস্থান করবেন। একইভাবে মতিঝিল, বনানী, গুলশান, মিরপুর, কল্যাণপুর, গাবতলী, উত্তরা, যাত্রাবাড়ী, নীলক্ষেত ও এলিফ্যান্ট রোড এলাকার আবাসিক হোটেল বরাদ্দ নেয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়েও পুলিশের দায়িত্ব ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ করে দেয়া হয়েছে। কেউ ত্রাণ দিচ্ছে, কেউ লকডাউন মানাতে কাজ করছে, কেউ নিরাপত্তা বিধানে কাজ করছে, কেউ রোগীকে হাসপাতালে নিচ্ছে, আবার কেউ করোনায় মৃতদেহ সৎকারের কাজ করছে। এতে করে সবার ঝুঁকি কমেছে। দায়িত্ব পালন শেষে থানায় বা ব্যারাকে থাকতে যাদের কষ্ট হচ্ছে, তাদের নিকটস্থ আবাসিক হোটেলে থাকতে বলা হয়েছে। আর যেখানে হোটেল নেই, সেখানে তাবু টাঙিয়ে অস্থায়ী ঘর বানিয়ে থাকতে বলা হয়েছে। পুলিশ সদস্যরাও সে নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছেন।