দুর্র্ধষ প্রকৃতির খুনি মাজেদের ফাঁসি, জাতি উল্লসিত -তোফায়েল আহমেদ

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,নিজস্ব প্রতিনিধি,১০ এপ্রিল : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদ গ্রেফতারে বাঙালি জাতি উল্লসিত ও আনন্দিত বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রবীণ রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহমেদ।

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতির দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিল জাতির পিতার সপরিবারে হত্যাকান্ডে জড়িত যেসব খুনির দন্ডাদেশ কার্যকর করা হয়নি, কবে তাদের দেশে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করা হবে। ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত যে ৬ জন আসামি পলাতক, তাদের মধ্যে খুনি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদ অন্যতম। সে ছিল দুর্র্ধষ প্রকৃতির খুনি। সমগ্র জাতি এখন তার ফাঁসি কার্যকর দেখার অপেক্ষায় রয়েছে। একই সঙ্গে আমরা অপেক্ষায় আছি কবে পলাতক খুনি রাশেদ চৌধুরী, নূর, ডালিম ও মোসলেউদ্দিনকে দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করব।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাবেক রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধুকে যারা হত্যা করে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছিল, একটি স্বপ্নকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল, ক্যাপ্টেন মাজেদ ছিল তাদের অন্যতম। এই মাজেদ শুধু জাতির পিতার হত্যাকান্ডের সঙ্গেই যুক্ত নয়, ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতার হত্যার সঙ্গে জড়িত। এমনকি খুনি মাজেদ আমার এপিএস ১৯৭৩ ব্যাচের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শফিকুল আলম মিন্টু এবং আমার মেজভাই আলী আহমেদের খুনি।

খুনি মাজেদ একজন দুর্র্ধষ প্রকৃতির লোক উল্লেখ করে ডাকসুর সাবেক এই ভিপি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর আমাকে গ্রেফতার করে পুলিশ কন্ট্রোল রুমে রাখা হয়। সেখানে আমার সঙ্গে ছিলেন প্রয়াত আবদুর রাজ্জাক ভাই, সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম জিল্লুর রহমান ভাই এবং সাংবাদিক আবিদুর রহমান। এর মধ্যে আমাকে পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে রেডিও অফিসে নিয়ে খুনি ডালিম ও মাজেদ হাত-পা, চোখ বেঁধে অমানুষিক অত্যাচার করে। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষী না দেওয়ায় আমার এপিএস শফিকুল ইসলাম মিন্টুকে গ্রেফতার করে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে লাশ বুড়িগঙ্গা নদীতে ভাসিয়ে দেয়। মিন্টুর সন্ধানের দাবিতে তার স্ত্রী মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছেন। কেউ সন্ধান দেয়নি। এমনকি তৎকালীন স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের কাছেও গিয়েছিল। কেউ তাকে সাহায্য করেনি। ছোট ছোট তিনটি সন্তান নিয়ে দুঃসহ অমানবিক জীবনযাপন করেছে মিন্টুর পরিবার। মিন্টুর আরেকটি অপরাধ ছিল আমাকে যখন গৃহবন্দী করা হয়, তখন সে পুলিশের আইজি, মেজর জেনারেল সফিউল্লাহ (তৎকালীন সেনাপ্রধান)-সহ অনেকের সঙ্গে আমার ব্যাপারে যোগাযোগ করেছিল।

বঙ্গবন্ধুর খুনিদের জিয়াউর রহমান পুরস্কৃত করেছিলেন জানিয়ে প্রবীণ রাজনীতিক তোফায়েল আহমেদ বলেন, জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুরস্কৃত করেছিলেন। এই খুনি মাজেদকে প্রথমে বিদেশে, পরে দেশে এনে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে চাকরি দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের বিচার করা যাবে না, মর্মে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছিল। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন পর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের আইনি প্রক্রিয়া শুরু করে। এরপর ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে না পারায় বিএনপি এই বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। আমরা আবার ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর বিচার শুরু করি। দীর্ঘ ৩৪ বছর পর ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর হত্যাকান্ডের রায় হয়। খুব ধীরে দীর্ঘ বারো বছরে নিম্ন আদালত থেকে শুরু করে আইনের প্রতিটি ধাপ স্বচ্ছতার সঙ্গে অতিক্রম করে সর্বোচ্চ আদালতের মাধ্যমে স্বঘোষিত খুনিদের মৃত্যুদন্ডের রায় দেওয়া হয়। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ১২ আসামির মধ্যে কারাবন্দী পাঁচ আসামির ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি দিবাগত রাতে ফাঁসি কার্যকর হয়। তারা হলেন- সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মুহিউদ্দিন আহমেদ, বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ। বাকি ৬ জন পলাতক ছিল। এর মধ্যে মাজেদ গ্রেফতার হয়েছে। এর দ্রুত ফাঁসি দেখতে চাই। রশিদ, ডালিম, মোসলেউদ্দিন, নূর, রাশেদ চৌধুরী এখনো পলাতক।

খুনি মাজেদের অত্যাচারের বর্ণনা দিয়ে তোফায়েল আহমেদ আরও বলেন, এই মাজেদের নির্দেশে ১৯৭৫ সালের ৫ অক্টোবর আমার মেজভাই আলী আহমেদকে হত্যা করা হয়। আমি ময়মনসিংহ কারাগারে কনডেম সেলে এই খবর পাই। এর আগে ১১ জুলাই আমার বড় ভাই মারা যান। তিন ছেলের মধ্যে দুজন নেই, একজন জেলে। ফলে আমার মাকেও অমানুষিকভাবে জীবনযাপন করতে হয়েছে। তিনি বলেন, এখানেই শেষ নয়, আমাকে গ্রেফতারের পর আমি যে সরকারি বাসায় থাকতাম, সেখান থেকে সাত দিনের মধ্যে আমার পরিবারকে তাড়িয়ে দেয়। এমনকি খুনি মাজেদ বাসায় ঢুকে যত বিদেশি রাষ্ট্রনায়কদের সঙ্গে আমার ছবি ছিল, সেগুলো ভেঙে তছনছ করে দেয়। বাসা থেকে বের করে দেওয়ার পর আমার স্ত্রী কলাবাগানে একটি বাসায় আশ্রয় নিতে চেয়েছিল। কিন্তু সেই বাড়িতে মাজেদ গিয়ে তাদেরকে হুমকি-ধমকি দেয়। আশ্রয় নিতে দেয়নি। পরে বরিশালের সাবেক এডিসি ক্যাপ্টেন (অব) রব আজিমপুরে আমার স্ত্রীকে আশ্রয় দেন। আমি তার কাছে ঋণী।