হোম কোয়ারেন্টাইনে কী করছেন চার ব্যারিস্টার

SHARE

বাম থেকে-ব্যারিস্টার তামান্না তাবাস্সুম (ফারিতা),ব্যারিস্টার আত্মজা ভট্টাচার্য্য স্বর্ণা,ব্যারিস্টার ফারিহা প্রিয়াংকা ও ব্যারিস্টার ফাহমিদা আক্তার প্রিভি

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,নিজস্ব প্রতিনিধি,০৭ এপ্রিল : করোনাভাইরাস ক্রমেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে দেশে। ভাইরাসের সংক্রামণ রোধে সারাদেশ কার্যত লকডাউন অবস্থায় রয়েছে। নিজেকে নিরাপদ রাখতে সব শ্রেণী-পেশার মানুষ হোম কোয়ারেন্টাইনে বা নিজ নিজ বাসাতেই অবস্থান করছেন।  সারাদিন কর্মব্যস্ত মানুষ এখন গৃহবন্দি। হাতে অফুরন্ত সময়। হোম কোয়ারেন্টাইনে কেমন আছেন, কীভাবে সময় পার করছেন তা নিয়ে কথা বলেছেন চারজন তরুণ ব্যারিস্টার। সময়কে কীভাবে কাজে লাগানো উচিত সে বিষয়ে তরুণদের পরামর্শও দিয়েছেন তারা।

ব্যারিস্টার ফারিহা প্রিয়াংকা। কাজ করেন এফ এম অ্যাসোসিয়েটস নামে একটি ল’ফার্মে। স্বামী বেলাল চৌধুরীও ব্যারিস্টার।

হোম কোয়ারেন্টাইনের দিনগুলো সম্পর্কে প্রিয়াংকা বলেন, ১৫দিন ধরে হোম কোয়ারেন্টাইনে আছি। অফিসের সবার সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখছি। প্রয়োজনীয় কাজগুলো সেরে নিচ্ছি। আমাদের ফার্মের অধিকাংশ ক্লায়েন্ট  বিদেশি। আমরা ইমেইল, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ক্লায়েন্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। এর মধ্যে করোনা থেকে কীভাবে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ রাখা যায় সে বিষয়ে একটি পত্রিকায় কলাম লিখেছি। সেটি ছাপাও হয়েছে। টুকি-টাকি রান্না করছি। এই যেমন- পিজা, থাই স্যুপ ইত্যাদি একেক দিন একেক ধরনের রান্না করি। এটা এক ধরনের নতুন অভিজ্ঞতা। ঘরের সব কাজ কম বেশি করছি। শ্বশুর-শাশুড়িকে সময় দিচ্ছি। আমার বর তো খুব হেল্পফুল। সব কাজে আমাকে সাপোর্ট দেয়। ওর সঙ্গে প্রচুর সময় ব্যয় করছি। সবার সঙ্গে মিলে-মিশে লাঞ্চ, ডিনার করছি। আমি মনে করি এতে পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় হচ্ছে। এছাড়া নিয়মিত শরীর চর্চা তো আছেই, রূপচর্চাও করি। বাসায় থেকে শখের ফটোগ্রাফিও করছি। আত্মীয়-স্বজনসহ কাছের মানুষদের করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সচেতন করে যাচ্ছি। নিয়মিত নামাজ আদায় করার চেষ্টা করছি। এভাবেই দিনগুলো কেটে যাচ্ছে।

ব্যারিস্টার ফাহমিদা আক্তার প্রিভি। কাজ করেন মজুমদার ল’চেম্বারে। স্বামী সিফাতুল ইসলামও ব্যারিস্টার।

হোম কোয়ারেন্টাইন নিয়ে ব্যারিস্টার ফাহমিদা বলেন, ২৩ মার্চ থেকে কোয়ারেন্টাইনে আছি। এর মধ্যে আর বাবার বাসাতেও যাইনি। আগে তো কোর্টে-চেম্বারে সময় কেটে যেতো। এখন নিজেকে ডেভেলপ করার জন্য সময়কে কাজে লাগাচ্ছি। নামাজ আদায় করছি নিয়মিত। আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করেছি। বিশেষ করে মুরুব্বীদের খেয়াল রাখছি। এ সংকটময় মুহূর্তে মানুষের উপকার করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। দূরে থেকে যতটুকু মানুষকে হেল্প করা যায় আমরা দুজনই সেটা করি। আর পরিস্থিতি বিচেনায় ভয় তো থাকবেই। শুধু ভয় পেলে চলবে না। সর্তক ও সচেতন থাকতে হবে। আমি মনে করি, হাতে এখন পর্যাপ্ত সময়। এই সময়কে প্রত্যেকের নিজের ডেভেলপমেন্টের জন্য কাজে লাগানো উচিত। আরেকটি কথা, সরকার যা করছে সেটা তো আমাদের ভালোর জন্যই করছে। এই মুহূর্তে যে যার অবস্থান থেকে মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত বলে মনে করি।

ব্যারিস্টার আত্মজা ভট্টাচার্য্য স্বর্ণা। কাজ করেন লিগ্যাল কাউন্সিল নামে একটি ল’ফার্মে। স্বামী অনুরাগ ভট্রাচার্য্য সফর্টওয়ার ইঞ্জিনিয়ার।

হোম কোয়ারেন্টাইনে কীভাবে দিন কাটছে, জানতে চাইলে স্বর্ণা বলেন, ১৫ দিন ধরে হোম কোয়ারেন্টাইনে আছি। বাসা থেকে অফিস করছি। প্রতিদিন আগের মতোই সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭ পর্যন্ত অফিস করি। এখন ভার্চুয়্যাল অফিস পার্থক্য এটাই। চেম্বার থেকে স্যার কাজ বণ্টন করে দেন। হোয়াটসঅ্যাপ, ইমেইলে সব সময় যোগাযোগ হয়। কোনো আপডেট থাকলে স্যারকে জানাই। তবে মাঝখানে দুপুরের লাঞ্চের জন্য ব্রেক নেই। প্রতিদিন আমি ৪০ মিনিটের মতো ইয়োগা করি। এটা আগে থেকেই করি। এছাড়া মুভি, ডকুমেন্টরি দেখি, রহস্য জাতীয় উপন্যাস পড়ছি। আমার তিনটা বিড়াল রয়েছে। ওদের সঙ্গেও কিছুটা সময় কাটাই। এভাবে দিনগুলো কেটে যাচ্ছে।

পরামর্শের বিষয়ে স্বর্ণা বলেন, সবাইকে বলবো- আপনিও বাসায় থাকুন। করোনাভাইরাস থেকে নিজেকে নিরাপদ  রাখুন।

ব্যারিস্টার তামান্না তাবাস্সুম (ফারিতা)। বাবা ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম জুলফিকার ইসলাম।

হোম কোয়ারেন্টাইন নিয়ে তামান্না বলেন, অনেক দিন ধরেই হোম কোয়ারেন্টাইনে আছি। করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত থাকবো। এছাড়া তো আমাদের করার কিছু নেই। বাসায় থেকে বিশ্বের নামকরা ও নির্ভরযোগ্য গণমাধ্যমগুলো পড়ে নিজেকে সবসময় আপডেট রাখছি। নিজে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজনকে নিয়মিত সচেতন ও সর্তক থাকতে পরামর্শ দিচ্ছি। আমি মনে করি, এ পরিস্থিতিতে নিজে নিরাপদ থাকার পাশাপাশি কাছের মানুষদের নিরাপদ রাখাই একজন সচেতন নাগরিকের দায়িত্ব। বই পড়ে, টিভি দেখে কিছু সময় পার করি। আব্বু-আম্মুকে প্রতিদিন ৩/৪ ঘণ্টা সময় দেই। তাদের সঙ্গে বসে গল্প করি। সচেতনতামূলক কথা বলি। নামাজসহ ধর্মীয় বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। আবার বাসায় থেকে অনলাইনে আমার লন্ডনের এক স্টুডেন্টকে পড়াচ্ছি।

পরামর্শের বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যারিস্টার তামান্না বলেন, এ সময়টাকে আমরা সেলফ ডেভেলপমেন্টের জন্য ব্যয় করতে পারি। ধর্মীয় বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিলে মনে প্রশান্তি পাবেন বলে মনে করি। ফ্যামিলিকে পর্যাপ্ত সময় দিন। আরেকটি বিষয় অনুরোধ করবো, আমরা যেন গুজব না ছড়াই। নিজে নিরাপদে থেকে গরীব-অসহায় মানুষকে সাহায্য করি। এটা ঘরে থেকেও করা সম্ভব।