প্যারিসে শুক্রবার রাতের হামলার পর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসলামিক স্টেট-পরিচালিত আক্রমণের ধারা যেভাবে বাড়ছে- তার মধ্যে প্যারিসের আক্রমণটি এক মোড়বদলকারী ঘটনা।
এতে বোঝা যায়, মার্কিন-নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশনের উপর্যুপরি বিমান হামলার কারণে চাপের মধ্যে পড়া ইসলামিক স্টেট এখন চাইছে, ইউরোপ ও অন্যত্র আক্রমণ পরিচালনা বা অনুপ্রাণিত করতে।
বিবিসির নিরাপত্তা বিশ্লেষক ফ্রাংক গার্ডনার বলছেন, গত প্রায় দুই বছর ধরে ইসলামিক স্টেটের মূল মনোযোগ ছিল মধ্যপ্রাচ্যে তাদের একটি নিজস্ব ভুখন্ড দখল করা এবং তাতে নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা। রাক্কা ও মসুলে অবস্থানরত তাদের নেতৃত্বের কাছে এখনো এটাই প্রধান অগ্রাধিকার। এ জন্য তারা ইরাক ও সিরিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল দখল করে নিয়েছে।
কিন্তু ইউরোপ ও তার বাইরের উগ্রপন্থী জিহাদিদের মনেও যে তাদের প্রতি একটা আবেদন তৈরি হয়েছে- এ সম্পর্কেও তারা সচেতন। তাই ইসলামিক স্টেটের যে ‘রিক্রুটার’ বা সদস্য-সংগ্রহকারীরা অনলাইনে সক্রিয়, তারা এখন তাদের অনুসারীদের বলছে, সিরিয়ায় এসে যুদ্ধে যোগ দেবার বদলে তারা বরং নিজেদের দেশেই আক্রমণ পরিচালনা করতে পারে।
গত জুনে তিউনিসিয়ায় একটি সমুদ্রসৈকতে এক বন্দুকধারীর আক্রমণে ৩৮ জন পর্যটক নিহত হয়। ইসলামিক স্টেট এর কৃতিত্ব দাবি করে। তুরস্কের কর্তৃপক্ষ অক্টোবর মাসে আংকারায় যে আত্মঘাতী হামলায় ১০২ জন নিহত হয়- তার জন্যও আইএসকে দায়ী করে।
সিনাইয়ের আইএস-সহযোগীরা দাবি করে যে তারাই ২২৪ জন যাত্রী বহনকারী রুশ বিমানটি ভূপাতিত করেছে। এর পর মাত্র কয়েকদিন আগে লেবাননে যে বোমা হামলায় ৪৩ জন নিহত হয় – তারও কৃতিত্ব দাবি করে আই এস।
এর পর শুক্রবার রাতে ঘটে প্যারিসের রেস্তোরাঁ, বার ও থিয়েটারে হামলা – যাতে নিহত হয় ১২৯ জন।
ফ্রাংক গার্ডনার বলছেন, এগুলো বিচ্ছিন্ন বা একক আক্রমণকারীর কাজ নয়। এর প্রতিটিতেই ব্যাপক পরিকল্পনা, প্রস্তুতি, প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছে, অস্ত্র-বিস্ফোরক জোগাড় করতে হয়েছে, আত্মঘাতী আক্রমণকারী ঠিক করতে হয়েছে। এগুলো অনেকটাই আল-কায়েদার আক্রমণগুলোর মতো।
গার্ডনারের মতে, মার্কিন-নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশনের বিরামহীন বিমান হামলায় সম্প্রতি ইসলামিক স্টেটের একের পর এক নেতা নিহত হচ্ছেন। এতে সংগঠনটি চাপের মুখে আছে।
তা ছাড়া ১ হাজার মাইল দীর্ঘ তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তেও পরিস্থিতির গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হয়েছে। আগে এই সীমান্ত দিয়ে ইউরোপ থেকে হাজার হাজার যুবকের ইসলামিক স্টেটে যোগ দিতে আসতে কোন অসুবিধা হতো না।
কিন্তু এখন এ সীমান্তের সিরিয়ান অংশের অনেকটাই আইএস-বিরোধী কুর্দি মিলিশিয়াদের নিয়ন্ত্রণে। ইরাক হয়ে সিরিয়ায় আসার পথটি ইউরোপীয় জিহাদিদের পছন্দ নয়। জর্ডনের সীমান্ত এখন বন্ধ। লেবাননের সীমান্ত দিয়ে সিরিয়ায় আসতে গেলে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ধরার পড়ার ঝুঁকি খুব বেশি।
এ কারণে আইএসের নতুন রিক্রুটদের সিরিয়ায় ঢোকার রাস্তা সীমিত হয়ে পড়েছে। সে জন্যেই অনলাইনের নিয়োকর্তারা এখন তাদের বলছে, ঝুঁকি নিয়ে সিরিয়ায় আসার দরকার নেই, বরং নিজ দেশে থেকে সেখানেই আক্রমণ চালানোর উৎসাহ দেয়া হচ্ছে।
এর ফলে অন্তত কিছুদিনের জন্য ইউরোপে সন্ত্রাসী আক্রমণের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে, বলছেন ফ্রাংক গার্ডনার। সূত্র : বিবিসি বাংলা