সংবাদ সম্মেলন,নির্যাতন করেই হত্যা করা হয় বাকিটা সাজানো

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি,০১ এপ্রিল ২০২০ : বরগুনার আমতলী থানার ওসির (তদন্ত) কক্ষ থেকে শানু হাওলাদারের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশকেই দায়ী করেছে তার পরিবারের সদস্যরা।

মঙ্গলবার বরগুনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, পুলিশ ৩ লাখ টাকা ঘুষ চেয়েছিল, তা দিতে না পারার কারণেই শানুকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে।

হত্যার পরই মরদেহ ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে আত্মহত্যার নাটক সাজায় পুলিশ। পুলিশ চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ময়নাতদন্ত রিপোর্টে ‘আত্মহত্যা’ হিসেবে দেখানোর পাঁয়তারা করছে।

এ নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে বিভিন্ন মহল থেকে চাপ দেয়া হচ্ছে বলেও নিহতের পরিবারের অভিযোগ। নিহতের বড় ছেলে নাসির উদ্দীন শাওন লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। উপস্থিত ছিলেন নিহতের স্ত্রী ঝর্না বেগম, ছেলে সাকিব ও সিফাত, বোন মমতাজ ও জাহানারা ও আপন ভায়রা শাখাওয়াত হোসেন স্বপন।

বড় ছেলে শাওন বলেন, বাবাকে ২৩ মার্চ ধরে আনার পর ওসি (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রি ৩ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে না পারায় ওসি আবুল বাশারের নেতৃত্বে ওসি (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রিসহ বাবাকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে। নির্যাতনের খবর শোনার পর আমার ছোট ভাই সাকিব ওসি মনোরঞ্জন মিস্ত্রিকে বুধবার ১০ হাজার টাকা দিয়ে আসে।

তখনও বাবার সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হয়নি। পরের দিন ২৬ মার্চ ভোরে আমার বাবার মৃত্যু খবর শুনে থানায় ছুটে আসি। এ সময় আমাদেরকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। তড়িঘড়ি করে পুলিশ মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাবার চেষ্টা করলে আমরা বাধা দেই।

পরে আমাদেরকে মরদেহ দেখতে দেয়া হয়। শাওন কতগুলো ছবি দেখিয়ে বলেন, আপনারা দেখেন, আমার বাবার শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্মম নির্যাতনের চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। আঘাতের চিহ্নগুলো দেখে আমরা নিশ্চিত হই আমার বাবার মৃত্যু হয়েছে পুলিশি নির্যাতনে। শাওন বলেন, যেখানে একজন আসামিকে থানা হাজতে ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় রাখা যায় না।

সেখানে আমার বাবা মামলার আসামি না হওয়ার পরও আমতলী থানায় ৩ দিন আটকে রেখে নির্যাতন করা হল। থানা হাজতে যখন আসামি রাখা হয় তখন পুলিশ পাহারায় থাকে। কোনো আসামির আত্মহত্যা করার সুযোগ থাকে না।

কিন্তু আমার বাবাকে থানা হাজতে না রেখে কেন ওসি তদন্তের রুমে রাখা হল। পুলিশ বলেছে, তার দুই হাতে কড়া পরানো ছিল। যদি দুই হাতে কড়া পরানো থাকে, তাহলে সে গলায় ফাঁস দেয় কী করে। কোথায় পেয়েছে গলায় ফাঁস দেয়ার রশি। শাওন বলেন, থানা হাজতে আসামি থাকলে ডিউটি অফিসার সবকিছু দেখবেন এবং কোনো থানায় এসআই ছাড়া কাউকে ডিউটি অফিসার হিসেবে রাখা হয় না।

কিন্তু এই ঘটনায় ডিউটি অফিসার হিসেবে আরিফুর রহমানকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তিনি একজন এএসআই। আমাদের প্রশ্ন, এমন একজন জুনিয়র অফিসারকে কেন ডিউটি অফিসার হিসেবে রাখা হল। সংবাদ সম্মেলনে নিহতের তিন ছেলে, স্ত্রী, দু’বোন এবং স্বজনরা তদন্তপূর্বক দোষী পুলিশ সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার বরগুনার আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (তদন্ত) কক্ষ থেকে শানু হাওলাদারের (৫২) ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফায়েল আহম্মেদ প্রধানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে জানতে চাইলে তোফায়েল আহম্মেদ বলেন, ‘বিষয়টি এখন তদন্তাধীন। তাই এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।’

তদন্তে নির্যাতনের কোনো প্রমাণ পেয়েছেন কিনা? জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা তো মেডিকেল রিপোর্টই বলবে আমরা এখনও সেটি পাইনি। তবে যাদের বিরুদ্ধে গাফিলতি পাওয়া গেছে তাদের তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে যদি আরও দোষ পাওয়া যায় তাহলে আরও শাস্তি হবে। ময়নাতদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে বরগুনার সিভিল সার্জন হুমায়ুন শাহিন খান বলেন, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন থানায় পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। নির্যাতনের কোনো আলামত পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কথা বলব না কারও সঙ্গে। যা যা পেয়েছি তা লিখে দিয়েছি। দরকার হলে থানা থেকে জেনে নিন।