ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,বরগুনা প্রতিনিধি,২৭ মার্চ : বরগুনার আমতলী থানা হাজতে হত্যা মামলার সন্দেহভাজন আসামী শানু হাওলাদারের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় আমতলীসহ দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হওয়ায় আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল বাশারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।আজ শুক্রবার বিকেলে পুলিশের প্রধান কার্যালয়ের এক আদেশে বরিশাল ডিআইজির নির্দেশে বরগুনা পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন স্বাক্ষরিত এক পত্রে তাকে প্রত্যাহার করে বরগুনা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের পশ্চিম কলাগাছিয়া গ্রামে গত বছরের ৩ নভেম্বর ইব্রাহিম নামে একজনকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ওই হত্যা মামলায় শানু হাওলাদারের সৎ ভাই মিজানুর রহমান হাওলাদার এজাহারভুক্ত আসামী। ওই মামলায় শানু হাওলাদারকে গত সোমবার রাত সাড়ে এগারটার দিকে সহেন্দভাজন আসামী হিসেবে আমতলী থানা পুলিশ আটক করে তাকে থানায় নিয়ে আসেন।এরপর আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল বাশার ও ওসি (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রি নিহত শানুর পরিবারের কাছে হত্যা মামলায় আসামি করার ভয় দেখিয়ে তিন লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। তবে টাকা দিতে অস্বীকার করে তার পরিবার। টাকা না পেয়ে শানু হাওলাদারকে থানা হাজতে রেখে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতন করে। নির্যাতনের খবর পেয়ে শানুর ছেলে সাকিব হোসেন গত মঙ্গলবার ওসি আবুল বাশারকে ১০ হাজার টাকা ঘুষ প্রদান করেন। কিন্তু তাতে তিনি তুষ্ট হননি। চাহিদা মত ঘুষের টাকা না পেয়ে পুলিশ শানু হাওলাদারের উপর নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেন।বুধবার পরিবারের লোকজন এসে আসামী শানু হাওলাদারের সাথে দেখা করতে চাইলে পুলিশ তাদের দেখা করতে দেয়নি, উল্টো পরিবারের লোকজনের সঙ্গে অশালীন আচরণ করে তাড়িয়ে দেয় এমন অভিযোগ করেছেন নিহতের ছেলে সাকিব হোসেন।পুলিশের দাবী, বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ছয়টার দিকে আসামি শানু টয়লেটে যাওয়ার কথা বললে পুলিশ তাকে টয়লেটে নিয়ে যায়। পরে এক ফাঁকে আসামি শানু হাওলাদার ওসি (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রির কক্ষে ফ্যানের সঙ্গে রশি পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।এ ঘটনায় বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ, এসপি পদায়ন) তোফায়েল আহম্মেদকে প্রধান করে এ ঘটনার তদন্তে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে দেন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বরগুনা সদর) মো. মহব্বত আলী ও সহকারী পুলিশ সুপার (আমতলী-তালতলী সার্কেল) সৈয়দ রবিউল ইসলাম।দায়িত্ব অবহেলার দায়ে তাৎক্ষনিক বরগুনা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন আমতলী থানার ওসি (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রি ও ডিউটি অফিসার এএসআই আরিফ হোসেনকে বৃহস্পতিবার দুপুরে সাময়িক বরখাস্ত করেছেন। তদন্ত কমিটির সুপারিশের আলোকে শুক্রবার বিকেলে পুলিশের প্রধান কার্যালয়ের এক আদেশে বরিশাল ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলামের নির্দেশে বরগুনা পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন স্বাক্ষরিত এক আদেশে আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবুল বাশারকে আমতলী থানা থেকে প্রত্যাহার করে বরগুনা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করেন।বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তদন্ত কমিটির প্রধান বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ, এসপি পদায়ন) তোফায়েল আহম্মেদ।আমতলী থানার ওসি আবুল বাশারকে আমতলী থানা থেকে প্রত্যাহার করায় নিহত শানুর পরিবারসহ আমতলীবাসীর মধ্যে সস্তি ফিরে এসেছে। এদিকে থানা হাজতে রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী এ ঘটনার সাথে জড়িত ওসি আবুল বাশারসহ সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেছেন।নিহত শানু হাওলাদারের ছেলে সাকিব হোসেন আমতলী থানার ওসি আবুল বাশারের প্রত্যাহারের খবরে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে তাকে আইনের আওতায় এনে বিচার দাবী করছি। তিনিই টাকা না পেয়ে আমার বাবাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। আমি এই হত্যাকারী ওসির দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।তদন্ত কমিটির প্রধান বরগুনা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ, এসপি পদায়ন) তোফায়েল আহম্মেদ বলেন, থানায় আসামির মৃত্যুর মূল কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত কাজ শুরু করেছি। অল্প সময়ের মধ্যেই তদন্ত কাজ শেষ হবে। তিনি আরও বলেন, তদন্ত কমিটির সুপারিশের আলোকে আমতলী থানার ওসি আবুল বাশারকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে বরগুনা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।