থানায় আসামির মৃত্যু, ওসি বরখাস্ত

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম, বরগুনা ও আমতলী প্রতিনিধি,২৬ মার্চ : আমতলী থানায় একটি হত্যা মামলার সন্দেহভাজন আসামিকে থানা হাজতে রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। পরিবারের অভিযোগ, থানার ওসি আবুল বাশার ও ওসি (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রির দাবি করা তিন লাখ টাকা না দেওয়ায় নির্যাতন করে তাকে হত্যা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৬টার দিকে আমতলী থানাহাজতে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় আমতলী থানার ওসি (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রি ও ডিউটি অফিসার এএসআই আরিফ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত এবং তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

পরিবারের সদস্যরা জানান, গত বছরের ৩ নভেম্বরে উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের পশ্চিম কলাগাছিয়া গ্রামে ইব্রাহিম নামের এক কৃষককে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ওই হত্যা মামলায় শানু হাওলাদারের সৎভাই মিজানুর রহমান হাওলাদার এজাহারভুক্ত আসামি। গত সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ওই মামলার সহেন্দভাজন আসামি হিসেবে শানু হাওলদারকে থানায় ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর আমতলী থানার ওসি আবুল বাশার ও ওসি (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রি আসামির পরিবারের কাছে তিন লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন।

নিহত শানু হাওলাদারের ছেলে সাকিব হোসেন বলেন, বিনা অপরাধে আমার বাবাকে ওসি ধরে এনে তিন লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। আমি টাকা দিতে অস্বীকার করায় আমার বাবাকে নির্যাতন করেছেন তারা। এরপর  মঙ্গলবার দুপুরে আমি ওসিকে ১০ হাজার টাকা দিই। কিন্তু এরপর তিনি নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেন ও বারবার আমার কাছে ঘুষের টাকা দাবি করেন।

তিনি আরও বলেন, বুধবার সকালে আমি বাবার সঙ্গে দেখা করতে থানায় আসি কিন্তু আমাকে দেখা করতে না দিয়ে ওসি আবুল বাশার ও ওসি (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রি গালাগাল করে তাড়িয়ে দেয়। সারাদিন আমাকে বাবার সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি। ওসি বলেন যে, টাকা নিয়ে আস তারপর দেখা করতে দেব। এরপর বৃহস্পতিবার সকালে খবর পাই বাবা আর নাই।

সকাল সোয়া ছয়টার দিকে থানার একটি কক্ষের ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দেওয়া শানু হাওলাদারের লাশ পাওয়া যায় বলে জানান ওসি আবুল বাশার।

আসল ঘটনা পুলিশ ধামাচাপা দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছে বলে দাবি নিহতের স্বজনদের। তারা জানান, ঘটনার পর তাদের ও সাংবাদিকদের থানার ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। উল্টো থানাফটকে তালা লাগিয়ে দেয় পুলিশ। স্বজনরা থানা ফটকের সামনে আহাজারি করতে থাকলে আধাঘণ্টা পরে পুলিশ ফটক খুলে দেয়।

খবর পেয়ে বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন পিপিএম আমতলী থানায় আসেন। ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মো. তোফায়েল আহম্মেদকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেন তিনি। এ ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার কারণে তাৎক্ষণিকভাবে আমতলী থানার ওসি (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রি ও ডিউটি অফিসার এএসআই আরিফুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করেছেন পুলিশ সুপার। নিহত শানু হাওলাদারের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনার মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।

শানু হাওলাদারের শ্যালক রাকিবুল ইসলাম বলেন, দুলাভাইকে ধরে আনার পর থেকে আমি থানায় প্রাঙ্গণে ছিলাম। পুলিশ তাকে টাকার জন্য বেধরক মারধর করেছে। তার ডাক-চিৎকার শুনেছি। বহুবার চেষ্টা করেছি তার সঙ্গে দেখা করতে কিন্তু পুলিশ করতে দেয়নি। উল্টো আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে।

গুলিশালালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. নুরুল ইসলাম বলেন, শানু হাওলাদারকে বাড়ি থেকে ধরে এনে নির্যাতনে হত্যা করা হয়েছে। আত্মহত্যার ঘটনা পুলিশের সাজানো। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন তিনি।

আমতলী থানার ওসি মো. আবুল বাশার বলেন, সকালে শানু হাওলাদার ওয়াশরুমে যাওয়ার কথা বললে পুলিশ তাকে ওয়াশরুমে নিয়ে যায়। ওয়াশরুম থেকে ফিরে এসে এক ফাঁকে হাজতখানার ফ্যানের সঙ্গে গলায় রশি পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে।

হাজতখানায় কোনো ফ্যান নেই সাংবাদিকদের এ কথার জবাবে তিনি বলেন, ওসি (তদন্ত) মনোরঞ্জনের কক্ষে ফ্যানের সঙ্গে গলায় রশি পেঁচিয়ে আত্মত্যা করেন। টাকা না দেয়ায় তাকে নির্যাতনে হত্যা করার অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রশ্ন এড়িয়ে যান তিনি।

আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা শংকর প্রসাদ অধিকারী বলেন, শানু হাওলাদারের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছ। তবে ময়নাতদন্ত ছাড়া মৃত্যুর সঠিক কারণ বলা যাবে না।

বরগুনা জেলা পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন পিপিএম বলেন, এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টের পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশ টাকা না পেয়ে নির্যাতন করে হত্যা করেছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের প্রশ্ন এড়িয়ে যান তিনি। বলেন, অপরাধী যেই হোক নিরপেক্ষ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।