ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,বিনোদন প্রতিনিধি,২৩ মার্চ : বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে করোনা আতঙ্ক। এর জেরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, খেলাধুলা, বিনোদন, থিয়েটার, জিমসহ সব ধরনের আর্থিক বাজার বন্ধ ঘোষণা করেছে। করোনা আতঙ্ক দারুণ প্রভাব বিস্তার করেছে বাংলাদেশের শোবিজাঙ্গনেও। বন্ধ রয়েছে সিনেমা হল। মুক্তি পাচ্ছে না কোনো নতুন ছবি। বেশ কিছু সিনেমার পাশাপাশি বন্ধ রয়েছে সব নাটকের শুটিং। মঞ্চেও হচ্ছে না নাটক। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব মিলনায়তনে তালা ঝুলছে। বাতিল হয়েছে অসংখ্য অনুষ্ঠান। অভিনয়শিল্পীদের মতো গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন গানের শিল্পীরাও। গানের শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনার কারণে চলতি মাসে বাতিল হয়েছে প্রায় শতাধিক গানের কনসার্ট। দেশে ও দেশের বাইরে প্রায় ১০টির মতো কনসার্ট ছিল জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী নাজমুস মুনিরা ন্যান্সির। কিন্তু করোনার কারণে বাতিল হয়ে গেছে সব অনুষ্ঠান। ১৩, ১৯ ও ২০ ন্যান্সির অনুষ্ঠান ছিল রাজধানী ঢাকায়। ২১ মার্চ অস্ট্রেলিয়ায় দুটি কনসার্ট ছিল তার। এ ছাড়া সামনের মাসে কানাডায় চারটি কনসার্টে গান গাওয়ার কথা ছিল এই কণ্ঠশিল্পীর। সব অনুষ্ঠান বাতিল হলেও আফসোস নেই তার। ন্যান্সি বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে যে ভয়াবহ অবস্থা চলছে, এতে সবাই আতঙ্কিত। এই মুহূর্তে সব ধরনের প্রোগ্রাম বাতিল হওয়া স্বাভাবিক। দেশের বাইরে আমার বেশ কিছু বড় বড় প্রোগ্রাম বাতিল হয়েছে, এতে আমার কোনো আফসোস নেই। আলস্নাহ বাঁচিয়ে রাখলে আবার সময় আসবে। শুধু আমারই নয়, সব শিল্পীদের ভালো ভালো প্রোগ্রাম বাতিল হয়েছে করোনার কারণে। শুধু আর্থিক সংকটই নয়, জীবনের জন্যও যথেষ্ট হুমকি এই ভাইরাস। এখন সবার উচিত, সচেতন হওয়া। এর বিকল্প কোনো পথ নেই। সবাইকে বলব, যত কষ্টই হোক; সচেতন হোন। আলস্নাহ আমাদের এই বিপদ থেকে দ্রম্নত রক্ষা করুন- এটাই কামনা করছি।’
সময়ের আলোচিত কণ্ঠশিল্পী লুইপা। মাসের প্রায় ২৫ দিনই ব্যস্ত থাকেন গানের নানা অনুষ্ঠানে। ছুটে বেড়ান দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে চলতি মাসে যেন তার ব্যস্ততা একটু বেশিই ছিল। বিশেষ করে ১৭ মার্চ থেকে টানা প্রোগ্রাম ছিল বলে জানান লুইপা। সব বাতিল হওয়ায় এই শিল্পীর এখন দিন কাটছে ঘরে।
তরুণ প্রজন্মের আলোচিত কণ্ঠশিল্পী ফাতিমা তুয- যাহরা ঐশি। সারাবছর কনসার্টে দারুণ ব্যস্ত থাকেন তিনি। মেডিকেলের শিক্ষার্থী হওয়ায় পড়াশোনার জন্য অনেক প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হন। কিন্তু এবার করোনা আতঙ্কে বাতিল হয়েছে ঐশির ১০-১২টি কনসার্ট। ১০ মার্চ এই কণ্ঠশিল্পীর কনসার্ট ছিল কিশোরগঞ্জ ও ময়মনসিংহে, ১৪ মার্চ কক্সবাজার, ১৭ মার্চ গাজীপুর সিটি করপোরেশ ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে, ২০ মার্চ ঢাকার তিনশফিট, ২২ মার্চ ঢাকায় আরেকটি প্রোগ্রাম, ২৬ মার্চ ছিল শিবচরে, ২৭ বরিশাল, ২৮, ২৯ ও ৩০ মার্চ ঢাকার বাইরে কয়েকটি কনসার্ট প্রায় চূড়ান্ত হয়ে ছিল। কনসার্ট বাতিল হওয়া নিয়ে এই কণ্ঠশিল্পী বলেন, ‘জাতীয়ভাবেও বড় বড় প্রোগ্রাম বাতিল হয়ে গেছে। মুবিজবর্ষ ও ২৬ মার্চের প্রোগ্রাম সরকার বাতিল করেছে। আমাদের সবার উচিৎ এখন সতর্ক হওয়া। আতঙ্কিত হওয়ার চেয়ে সচেতনতা বেশি জরুরি।’
শুধুমাত্র মুজিববর্ষের পাঁচটি কনসার্ট বাতিল হয়েছে কণ্ঠশিল্পী জাকিয়া সুলতানা কর্ণিয়ার। এ ছাড়া আরও কিছু প্রোগ্রাম হওয়ার কথা ছিল চলতি মাসে। কিন্তু করোনা আতঙ্কে কোনো প্রোগ্রামই হচ্ছে না। কর্ণিয়া বলেন, ‘মুজিববর্ষের ৪-৫টি প্রোগ্রাম ছাড়াও আরও কিছু প্রোগাম করার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে সব বাতিল হয়েছে। এখন সবাই আতঙ্কিত করোনা নিয়ে। জানি না আমাদের কি অবস্থা হয়। আমাদের দেশ গরিব দেশ। একমাত্র আলস্নাহই পারেন আমাদের রক্ষা করতে। বাসায় থাকছি, বাসা থেকে বের হচ্ছি না। নামাজ পড়ার চেষ্টা করছি। সবার উচিত সচেতন থাকা ও আলস্নাহর কাছে সাহায্য চাওয়া।’
কণ্ঠশিল্পী বাঁধন সরকার পূঁজা জানালেন ৬-৭ টি কনসার্ট বাতিল হয়েছে তার। তিনি বলেন, ‘শুধু আমরাই নয়, অনেক শিল্পীর কনসার্ট বাতিল হয়েছে। শিল্পীদের চেয়ে বেশি সমস্যা হবে মিউজিশিয়ানদের। কনসার্ট নির্ভর করে যারা জীবিকানির্বাহ করেন।’
দিলশাদ নাহার কনা বলেন, ‘করোনার কারণে আমার ৩-৪টি প্রোগ্রাম বাতিল হয়ে গেছে। এতে আমার কোনো দুঃখ নেই। আমি চাই, করোনা থেকে সবাই হেফাজতে থাকুন।’ এছাড়াও বেশ কয়েকজন শিল্পীর কনসার্ট বাতিল হয়েছে বলে জানা গেছে।