রাজধানীর শ্যামপুরের পালপাড়ায় শিশু নিরব ইসমাইল (৫) খোলা ম্যানহোলে পরে মৃত্যুর চার বছর আগেও একইভাবে মৃত্যু হয় শিশু সিহাবের। ম্যানহোল ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা শ্যামপুর শিল্প মালিক মালিক সমিতির বিচার না-হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন নিহত শিশু নিরবের স্বজন ও এলাকাবাসী। তাদের অভিযোগ, শিশু সিহাবের মৃত্যুর বিচার হলে শিশু নিরব ইসমাইলের মৃত্যু হতো না।
মঙ্গলবার পৌনে ৪টার সময় নাগরদোলা দেখতে গিয়ে খোলা ম্যানহলে পড়ে যায় শিশু নিরব ইসমাইল। রাত ৮টা ২০ মিনিটে শিশু নিরবকে অচেতন অবস্থায় শ্যামপুর বাজার সংলগ্ন বুড়িগঙ্গা নদী থেকে উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এর আগে বিভিন্ন উপায়ে ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় লোকজন নিরবকে উদ্ধারের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালান। কিন্তু তারা বাচাতে পারেননি মৃত্যুকূপ খোলা ম্যানহলে পরে যাওয়া নিরবকে। শ্যামপুর বুড়িগঙ্গা থেকে নতুন কদমতলীর সুয়ারেজের ম্যানহোলগুলো খোলা থাকায় মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। পরপর দু’টি মৃত্যুর ঘটনা ঘটলো শ্যামপুর শিল্প এলাকার এই খোলা ম্যানহোলে। সামনে এ ম্যানহল খোলা রাখলে আরও এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে বলে এলাকাবাসী জানান।
চার বছর আগে শিশু সিহাব একইভাবে ম্যানহোলে পরে মারা যায়। শিহাবের পরিবার বাস করেন জাহিদ মঞ্জিলে। বাড়ির মালিকের নাম জাহাঙ্গীর মিয়া। এ বাড়িতেই কথা হয় শিহাবের মা শিরিন আক্তার ও ট্রাক ড্রাইভার বাবা হারুনের সঙ্গে। শিরিন আক্তার তখন কান্নায় ভেঙে পড়েন।
শিরিন আক্তার তার তিন বছর বয়সী ছেলে দ্বীন ইসলামক কোলে নিয়ে বার বার চুমু খেয়ে বলেন, সিহাব আজ বেঁচে থাকলে বড় ক্লাসে পরতো। আবেগ সংবরণ করে শিরিন আক্তার বলেন, আমার ছেলে সিহাবকে নিরবের মতো হত্যা করা হয়। পার্থক্য শুধু নিরব বাসার পাশের শ্যামপুর শিল্প মালিক সমিতির পেতে রাখা খোলা ম্যানহোলে পড়লো। ছেলে নিরবকে পেতে রাখা মৃত্যুকূপ থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করার সুযোগ পেয়েছেন নিরবের মা নাজমা। আর আমি পারিনি।
স্থানীয় লোকজন ও শিশু সিহাবের মায়ের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা গেছে, সিহাবে মৃত্যু হয় সুয়ারেজ লাইনের খোলা ম্যানহোলে পড়ে। শিরিন আক্তার এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, আমার ছেলের তখন সাড়ে বছর। সবেমাত্র পড়া শুরু করেছে। তখন এলাকায় নির্বাচনের আমেজ। এমন এক দিনে দুপুরের দিকে সিহাব নিখোঁজ হয়। প্রতিবেশীরা দুপুরের দিকে সিহাবে লাশ খুঁজে পায় বুড়িগঙ্গা সংলগ্ন সুইজ গেটে। তবে সিহাবের মৃত্যুতে কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়নি শ্যামপুর মালিক সমিতি। সিহাবের মৃত্যুর চারদিন পর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় নির্বাচনপূর্ব হাজারও প্রতিশ্রুতি দেন প্রার্থীরা। নির্বাচনের পর সিহাবের পরিবারের আর কোনো খোঁজখবর নেয়নি জানান সিহাবের বাবা হারুন।
সিহাবের মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড বলেন এলাকাবাসী। কারণ তারা মনে করেন, ম্যানহোল বন্ধ থাকলে এ ঘটনা ঘটতো না। নিহত শিশু নিরব ইসমাইলের কাকা সোহরাব আলী, সিহাবের বাবা হারুণ এবং উদ্ধার কাজে স্থানীয় আবু সালেহে বলেন, সিহাব হত্যার বিচার হলে নিরবের মৃত্যু হতো না।
মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, পালপাড়াতে পরপর তিনটি ম্যানহোল খোলা। আর তিনটির দুটিতে চার বছর অন্তর ঘটল দুটো মৃত্যুর ঘটনা। নিরব ইসমাইল যে খোলা ম্যানহোলে পড়ে মারা যায় ঠিক তার পশ্চিম দিকের চতুর্থ ম্যানহোলে পড়ে সিহাবের মৃত্যু ঘটে।
পরপর দুটো শিশুর একইভাবে মৃত্যুর ঘটানায় শ্যামপুর শিল্প এলাকাবাসীরা অভিযোগ করেছেন, শিল্প মালিক সমিতি যথাযথাভাবে ম্যানহোলের তদারকি করে না। ম্যানহোলে ঢাকনা আছে কি-না তা দতারকি করলে এ দু’টো ঘটানো এড়ানো যেতো।
তারা আরও বলেন, চার বছর আগের শিশু সিহাবের ঘটনায় যদি সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে শিল্প মালিক সমিতির বিচার করে হারুন-শিরিন দম্পতির ক্ষতিপূরণ আদায় করা যেতো তবে আজকে ম্যানহোলের ঢাকনা খোলা রাখার দুঃসাহস দেখাতে পারতোত না শিল্প মালিক সমিতি।