ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,নরসিংদী প্রতিনিধি,১০ মার্চ : দীর্ঘ ৫ বছর পর নরসিংদীর চাঞ্চল্যকর ইলমা বেগম (১১) হত্যাকাণ্ডের রহস্য উৎঘাটন করেছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের সিরিয়াস ক্রাইম ইউনিট। ভিকটিমের ফুফাত ভাই মাসুমকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উম্মোচিত হয়। উক্ত হত্যাকাণ্ডের জড়িত প্রকৃত আসামিদের শনাক্ত ও গ্রেফতার করতে থানা পুলিশ ব্যর্থ হয়।
জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২৮ মার্চ ১১ বৎসর বয়সী ইলমার মৃতদেহ নরসিংদী থানাধীন বাহেরচর গ্রামের একটি ধানক্ষেতে পাওয়া যায়। ইলমা বাহেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণির ছাত্রী ছিল। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ৩০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটাতে সম্মত ও সহায়তা করে তার পিতা আব্দুল মোতালেব।
সিআইডির সিরিয়াস ক্রাইম ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার সৈয়দা জান্নাত আরার তত্ত্বাবধানে একটি টিম নরসিংদী সদর এলাকা থেকে আসামিদের গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত আসামিরা হলেন আব্দুল মোতালেব, মঙ্গলী বেগম, মাসুম মিয়া, বাতেন, শাহজাহান ভূঁইয়া। গ্রেফতারকৃত আসামি মাসুম মিয়া আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন।
তদন্তে জানা যায়, নরসিংদী থানাধীন বাহের চর নামক একটি দূর্গম এলাকায় শাহজাহান ভূঁইয়া ও সাবেক মেম্বার বাচ্চুর নেতৃত্বে দুইটি দলের মধ্যে এলাকায় প্রভাব বিস্তার নিয়ে কোন্দল ছিল। শাহজাহান গ্রুপের সদস্য ভিকটিমের ফুফাত ভাই মাসুমের সাথে বাচ্চু পক্ষের সদস্য তোফাজ্জলের মেয়ে তানিয়ার সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিয়ে করার উদ্দেশ্যে মাসুম তানিয়াকে তার ভাইয়ের শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে আসে। পরবর্তীতে তানিয়ার বাবা দলবল সহকারে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করে তানিয়াকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। উক্ত ঘটনায় তানিয়ার বাবা বাদী হয়ে মাসুম, মাসুমের ভাই খসরু ও ভাইয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে নরসিংদী সদর মডেল থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করে।
বাচ্চু গ্রপের সদস্যদের ক্ষতি করার লক্ষ্যে শাহজাহানের বাড়িতে ২০১৫ সালের ১ মার্চের রাতে মাসুমসহ ১৩ জন বৈঠক করে। প্রতিশোধ নিতে একটি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে বাচ্চু গ্রুপের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার বিষয়ে বৈঠকে সিন্ধান্ত হয়। সিন্ধান্ত অনুযায়ী শাহজাহান মোতালিবকে তার মেয়ে ইলমাকে টাকার বিনিময়ে হত্যা করার প্রস্তাব করে। মোতালেব মাত্র ত্রিশ লাখ টাকার বিনিময়ে মেয়েকে হত্যা করতে রাজি হয়।
গত ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় ইলমার দুলাভাই ও অন্যরা মিলে তাকে টাকা দেয় বাজার-সদাই করার জন্য। টাকা পেয়ে ইলমা বাড়ির পাশে নুরার দোকান হতে জিনিসপত্র কিনে বাড়ি ফেরার পথে ইলমার দুলাভাই বাবুল ও ফুফাত ভাই মাসুমের নেতৃত্বে সাত আটজন মিলে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী পার্শ্ববর্তী একটি ধানক্ষেতে ইট দিয়ে মাথা থেতলে ইলমাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এই সময় ইলমার বাবা পাশে অবস্থান করছিল।
জিজ্ঞাসাবাদে মাসুম সিআইডিকে জানায়, এলমার বাবা এ সময় ‘আগে টাকা দাও পরে কাম সারো’ বলে টাকা দাবি করেছিল। প্রকৃতপক্ষে হত্যাকাণ্ডের জন্য চুক্তিকৃত ৩০ লক্ষ টাকা ভিকটিমের বাবা পাইনি বলে জানা যায়।
উক্ত ঘটনায় প্রকৃত আসামিদের বাদ দিয়ে ইলমার বাবা মোতালিব বাদী হয়ে বাচ্চু গ্রুপের বিলকিস, খোরশেদ, নাসুসহ অজ্ঞাত নামা ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে নরসিংদী সদর মডেল থানায় সেই বছরের ৩১ মার্চ একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। উক্ত হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রকৃত আসামিদের শনাক্ত ও গ্রেফতার করতে নরসিংদী সদর মডেল থানা পুলিশ ব্যর্থ হয়।
পরে সিআইডি উক্ত হত্যা মামলা তদন্তের দায়িত্ব গ্রহণের পর পরিকল্পনাকারী ও হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণকারী ৫ আসামিকে গ্রেফতার করে। মামলাটির তদন্ত সিআইডির নিকট অব্যাহত আছে।