ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,ঢাকা প্রতিনিধি,০৮ মার্চ : আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, সবাইকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে হবে। দেশে একটি গেরিলা যুদ্ধে হবে। কোনো মেজরের বাঁশির ফুঁতে দেশ স্বাধীন হয়নি। গতকাল ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে রাজধানীতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর জিয়া-এরশাদ-খালেদা সবাই ৭ মার্চের ভাষণ বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করেছিলেন। ইতিহাস বিকৃতি করে যাকে স্বাধীনতার ঘোষক সাজানো হয়েছে, সে সরকারের চারশ টাকা বেতনের কর্মচারী ছিল। যেন কোনো এক মেজর বাঁশিতে ফুঁ দিল আর ওমনি যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল আর দেশ স্বাধীন হয়ে গেল। তিনি বলেন, আমার ভাবলে দুঃখ হয় যে, ৭ মার্চের ভাষণ আমাদের দেশে নিষিদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। আমি জানি না যারা এই ভাষণ মুছে ফেলতে চেয়েছিল তারা এখন লজ্জা পায় কিনা। অবশ্য তাদের লাজলজ্জা আছে বলে মনে হয় না। তারা যে ভাষণ নিষিদ্ধ করল, আর ইউনেস্কো সেটাকে সেরা ভাষণ হিসেবে গ্রহণ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ভবিষ্যৎ বাণী করার অদ্ভুত শক্তি ছিল। ’৭০-এর নির্বাচনের আগে তিনি বলেছিলেন, আমরা নির্বাচনে জয়লাভ করব। কিন্তু তারা ক্ষমতা দেবে না। পরে আমরা যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করব। ৭ মার্চের ভাষণে তিনি সব ধরনের নির্দেশনা দিয়েছেন। বক্তৃতা শেষে তিনি এ কথাও বলেছিলেন তার ওপর আস্থা আছে কিনা। জনগণও জানিয়েছিল আস্থা আছে। মানুষ তাদের কথা রেখেছিল। তিনি যে নির্দেশনা দিয়েছিলেন জনগণ তা আক্ষরিকভাবে পালন করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ভাষণে স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, সবাইকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে হবে। দেশে একটি গেরিলা যুদ্ধ হবে। সেখানে কার কী দায়িত্ব সে কথাও তিনি বলে দিয়েছিলেন। তখন ৩২ নম্বর থেকে যে নির্দেশ আসত সে অনুযায়ী দেশ চলত। এমন কি ইয়াহিয়া খান যখন ঢাকায় আসেন তখন বাঙালি বাবুর্চিরা কাজ করবে না বলে জানিয়ে দিল। তখন ৩২ নম্বরে ফোন আসে, আপনারা যতক্ষণ না বলবেন ততক্ষণ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট খাবার পাচ্ছেন না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মুজিববর্ষ উদযাপনে অনেক কর্মসূচির চিন্তা করছি। জাতির পিতা বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ যেন অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান পায়। তিনি সংবিধানে মৌলিক চাহিদার কথা উল্লেখ করে গেছেন। তার স্বপ্ন ছিল একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। এ জন্য তিনি গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন। মুজিববর্ষের মধ্যে দেশের একটি মানুষও ভূমিহীন থাকবে না।
আওয়ামী লীগের নেতাদের নিজের এলাকায় খোঁজ নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা বলেন, যাদের ঘর নেই তাদের আমরা ঘর করে দেব। আমরা চাই একটি মানুষও যেন গৃহহারা না থাকে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি অনুরোধ, আমার এ কথাটা দেশের প্রত্যেক মানুষের কাছে পৌঁছে দেন। আপনারা চেষ্টা করেন ঘর করে দিতে। না পারলে আমরা টাকা দেব ঘর করার জন্য।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, একটা দেশকে স্বাধীন করা ও একটি জাতি সৃষ্টি করা, পৃথিবীর খুব কম রাজনৈতিক নেতাই তা করতে পেরেছেন। ৭ মার্চের ভাষণ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভাষণ দেওয়ার আগে অনেকেই অনেক পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু, জাতির পিতা জানতেন কীভাবে কোন পদক্ষেপ নিতে হবে। ভাষণ দিতে যাওয়ার আগে সবচেয়ে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন আমার মা বেগম ফজিলাতুন নেছা। যে কোনো ক্রান্তিলগ্নে মা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন। আব্বাকে মা বলেছিলেন, ‘তুমি সারা জীবন মানুষের জন্য সংগ্রাম করেছ। তোমার মনে যে কথা আসবে তুমি সেকথাই বলবে। ভাষণটা দেখলে বুঝবেন তিনি কিন্তু তার মনের কথাই বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭ মার্চের ভাষণ সারা বিশ্বের একমাত্র ভাষণ, যা হিসাব করে পাওয়া যাবে না কতজন কত ঘণ্টা এই ভাষণ শুনেছেন। পৃথিবীতে একটি ভাষণ এভাবে দীর্ঘদিন ধরে আবেদন রাখতে পারাটা নজিরবিহীন।
ঐতিহাসিক সেই ভাষণ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ৭ মার্চের ভাষণের পটভূমি হয়তো অনেকে জানেন। ওই সময় অনেকে অনেক পরামর্শ দিয়েছিলেন। অনেক জ্ঞানী-গুণীজন লিখিত আকারে ভাষণ তৈরি করে দিয়েছিলেন। আমাদের ছাত্রনেতারা, তাদের অনেকেই পরে আর আমাদের সঙ্গে থাকেননি, তারা বলেছিলেন এখনই স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে হবে, নইলে জাতি হতাশ হবে। কিন্তু জাতির পিতা জানতেন, কখন কোন পদক্ষেপটি নিতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। তার জন্য আমরা স্বাধীন দেশ পেয়েছি। সারা বিশ্বের স্বীকৃতি পেয়েছি। সারা জীবন তিনি সংগ্রাম করেছেন। পাকিস্তান আলাদা রাষ্ট্র হওয়ার পরই আমাদের মাতৃভাষার ওপর আঘাত এলো। তারা আমাদের ওপর উর্দু চাপিয়ে দিল। তখনই বঙ্গবন্ধু সিদ্ধান্ত নিলেন স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ড. আবদুস সোবহান গোলাপ ও আমিনুল ইসলাম আমিনের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন আমির হোসেন আমু, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, মাহবুব-উল আলম হানিফ, ড. হাছান মাহমুদ, পারভীন জামান কল্পনা, আবু আহম্মেদ মন্নাফী, এস এম মান্নান কচি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আবদুল মান্নান প্রমুখ। কবিতা আবৃত্তি করেন শিমুল মোস্তফা।