ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,ষ্টাফ রিপোর্টার,১৫ ফেব্রুয়ারি : ভোক্তা স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খাদ্যে ট্রান্স ফ্যাট নির্মূলে ৯ দাবি ,খাদ্যে ট্রান্স ফ্যাটের উচ্চমাত্রা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশে কোনো নীতিপদক্ষেপ না থাকায় ভোক্তা স্বাস্থ্য চরম হুমকির মুখে রয়েছে। ট্রান্স ফ্যাট মানুষের হৃদরোগ ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। এমতাবস্থায় খাদ্যদ্রব্যে ট্রান্স ফ্যাট নির্মূল করতে করণীয় তুলে ধরতে এবং ভোক্তা স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ৯ দফা ভোক্তা দাবিনামা তুলে ধরার জন্য আজ ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে সিরডাপ মিলনায়তনে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এবং প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) সম্মিলিতভাবে ‘খাদ্যে ট্রান্স ফ্যাট, হৃদরোগ ঝুঁকি এবং করণীয়: ভোক্তা পরিপ্রেক্ষিত’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা আয়োজন করে। আলোচনা সভায় উপস্থিত প্রধান অতিথি মাননীয় মন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, এমপি বলেন, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় খাদ্যে ট্রান্স ফ্যাট নির্মূলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ৯ দফা ভোক্তা দাবিনামা বাস্তবায়ন করা হবে। তিনি আরো বলেন, ট্রান্স ফ্যাট নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে পুরাতন আইন সংস্কারের মাধ্যমে যুগোপযুগী করা হবে। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত গ্লোবাল হেলথ এডভোকেসি ইনকিউবেটর এর কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস বলেন, বাংলাদেশ থেকে এখন খাদ্যপণ্য বিদেশে রপ্তানি করা হয়। সুতরাং ট্রান্স ফ্যাট নির্মূল করা না গেলে তারা আমাদের এসব পণ্য কিনবেনা এবং আমরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হব। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সম্মানিত সদস্য মনজুর মোর্শেদ বলেন, আমরা খাদ্যদ্রব্যে ট্রান্স ফ্যাটের মাত্রা ২ শতাংশে নির্ধারণের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। এলক্ষ্যে গঠিত টেকনিক্যাল কমিটি কাজ শুরু করেছে। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক বিগ্রেডিয়ার (অব.) আব্দুল মালিক বলেন, অসংক্রামক রোগের প্রকোপ কমাতে আমাদের খাদ্যে ট্রান্স ফ্যাট নির্মূল করতে হবে। ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত ২০২৩ সালের মধ্যে ট্রান্স ফ্যাট নির্মূলে সরকার, ভোক্তা সংগঠনসমূহ সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। আলোচনা অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশে স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই) এর মহাপরিচালক মোঃ মুয়াজ্জেম হোসাইন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর এনসিডিসি ডা. হাবিবুর রহমান, ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া এবং প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের। এটিএন বাংলার বার্তা সম্পাদক নাদিরা কিরনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে আলোকপাত করেন, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এর ইপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী, প্রজ্ঞা’র পরিচালক ও কর্মসূচি প্রধান মো: হাসান শাহরিয়ার এবং ক্যাবের প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর আহম্মদ একরামুল্লাহ। ভোক্তা দাবিনামাসমূহ: ১। সকল খাদ্যপণ্যে ট্রান্স ফ্যাটের পরিমাণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুসরণীয় মাত্রা অনুযায়ী মোট ফ্যাট বা তেলের সর্বোচ্চ ২% নির্ধারণ করতে হবে। ২। ট্রান্স ফ্যাটের প্রধান উৎস ডালডা/বনস্পতি (পারশিয়ালি হাইড্রোজেনেটেড অয়েল বা PHO) এর উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ এবং ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে। ৩। খাদ্যপণ্যের মোড়কে ট্রান্স ফ্যাটের পরিমাণ উল্লেখ বাধ্যতামূলক করতে ‘মোড়কাবদ্ধ খাদ্য লেবেলিং প্রবিধানমালা, ২০১৭’ সংশোধন করতে হবে। ৪। ট্রান্স ফ্যাটমুক্ত (২%) খাদ্যপণ্যের জন্য সুনির্দিষ্ট লোগো প্রণয়ন এবং এর ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে। ৫। খাদ্যপণ্যের মোড়কে ট্রান্স ফ্যাট সম্পর্কিত বিভ্রান্তিকর/মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভোক্তাদের প্রতারিত করার সুযোগ বন্ধ করতে হবে। এক্ষেত্রে মোড়কজাত খাদ্যপণ্যের বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা কঠোরভাবে মনিটরিং/পর্যবেক্ষণ করতে হবে। ৬। খাদ্যপণ্যে ট্রান্স ফ্যাটের মাত্রা পরিমাপের জন্য আধুনিক ল্যাবরেটরি/ যন্ত্রপাতি স্থাপন এবং প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ করতে হবে। ৭। খাদ্যপণ্যে ট্র্যান্স ফ্যাট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য নিয়মিতভাবে মান যাচাই/পরীক্ষা করতে হবে এবং প্রাপ্ত ফলাফল ভোক্তাসাধারণের অবগতির জন্য ওয়েবসাইটে উম্মুক্ত রাখতে হবে। ৮। ট্রান্স ফ্যাট নিয়ন্ত্রণ পদক্ষেপ কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা/ কর্মচারীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম চালু রাখতে হবে। ৯। ট্রান্স ফ্যাটের স্বাস্থ্য ঝুঁকি সম্পর্কে ভোক্তাসাধারণকে সচেতন করতে ব্যাপক প্রচার কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলন