ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,ষ্টাফ রিপোর্টার,০১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ : ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার পাশাপাশি উদ্বেগের মধ্যে আজ ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন হচ্ছে। শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ। এবারই প্রথম ঢাকা দুই সিটি নির্বাচনে সব কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোট নেয়া হবে। ফলে এ নির্বাচনে ইভিএমের গ্রহণযোগ্যতা বিষয়টিও মিলবে।নির্বাচনকে ঘিরে মাঠে নেমেছে বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স। ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্র ও তার আশপাশের এলাকা গোয়েন্দা নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। গুরুত্ব বিবেচনা করে অনেক কেন্দ্রে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা (সিসি ক্যামেরা) বসানো হয়েছে।
নিরাপত্তার প্রথম ধাপে গত বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) থেকেই রাজধানীতে পুলিশের পাশাপাশি ৬৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে অতিরিক্ত আরও ১০ প্লাটুন বিজিবি সদস্য।এছাড়াও প্রস্তুত আছে র্যাবের হেলিকপ্টার, বিশেষায়িত সংস্থা সোয়াত, বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, র্যাবের ডগ স্কোয়াড ও ক্রাইসিস রেসপন্স টিম।নির্বাচনে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অনেক বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। সবমিলিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখাই হবে বড় চ্যালেঞ্জ।গত ১০ জানুয়ারি থেকে টানা ২১ দিন পর্যন্ত চলে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচারসংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম। নির্বাচনি প্রচারকালে দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া উল্লেখযোগ্য সংঘর্ষ ঘটেনি। সবমিলিয়ে ভোটার ও প্রার্থীদের মধ্যে উৎসবভাব বিরাজ করছে।এর আগে ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকা দুই সিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সময়ে ঢাকা উত্তরে ৩৬টি ও দক্ষিণ সিটিতে ৫৭টি ওয়ার্ড ছিল।ইসি সূত্রে জানা গেছে, এবার দুই সিটিতে ১৮টি করে ৩৬টি ওয়ার্ড নতুন সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এতে বেড়েছে ভোটার ও কেন্দ্র সংখ্যা। দুই সিটিতে ২ হাজার ৪৬৮টি কেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন ৫৪ লাখ ৬৩ হাজার ৪৬৭ ভোটার।ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ-সংশয় প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালন কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচটি ইমাম। গত বৃহস্পতিবার এইচটি ইমামের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ইসিতে অভিযোগ করে বলেছে, বিএনপির বহিরাগতরা অস্ত্রসহ ঢাকায় অবস্থান করছে।অপরদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল কমিশনকে জানিয়েছে, ভোটগ্রহণ সামনে রেখে চলছে ধরপাকড় । তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) জানিয়েছেন, যে কোনো সময়ের চেয়ে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ আছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের ধরপাকড়ের তথ্য নেই।অন্যদিকে ইসি থেকে বলা হচ্ছে, ভোট কারচুপি রোধ করার জন্যই ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে মাহবুব তালুকদার গত ২২ জানুয়ারি বলেছেন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহারের ওপর যন্ত্রটির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। এ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার প্রশ্নবিদ্ধ হলে শুধু নির্বাচন নয়, ইভিএম যন্ত্রটির ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত হয়ে যেতে পারে।পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রচারে উৎসবমুখর পরিবেশ থাকলেও নির্বাচনে জিততেই হবে প্রার্থীদের এ ধরনের মনোভাব শঙ্কা বাড়াচ্ছে। নিজের পক্ষে ভোট যা-ই পড়ুক না কেন, ফল মেনে নেওয়ার সদিচ্ছার কথা শেষ দিকে তেমন শোনা যাচ্ছে না।এ নির্বাচনকে অস্বস্তির নির্বাচন বলেও মন্তব্য করা হয়েছে। আবার অনেকে বলেছেন, নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হওয়ার বিষয়টি অনেকাংশে নির্ভর করে ভোটারদের ব্যাপক অংশগ্রহণের ওপর। যত বেশি সংখ্যক ভোটার ভোটকেন্দ্রে যাবেন, নির্বাচনে অনিয়ম তত কমে আসবে।ইসি সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন পর্যবেক্ষণে থাকবে বিভিন্ন দেশের অন্তত ৬৭ জন পর্যবেক্ষক। তাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ২৭ জন, যুক্তরাজ্যের ১২, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাঁচ, নেদারল্যান্ডসের ছয়, সুইজারল্যান্ডের ছয়, নরওয়ের চার, ডেনমার্কের দুই এবং জাপানের পাঁচজন পর্যবেক্ষককে অনুমতি দেওয়া হয়েছে ইসি থেকে।এছাড়া দেশি ২২টি পর্যবেক্ষক সংস্থার এক হাজারের বেশি পর্যবেক্ষক নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অনুমতি পেয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল ইসির সঙ্গে দেখা করে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের নিয়ন্ত্রণে রাখার দাবি জানিয়েছেন।জানা গেছে অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরীক্ষা হিসেবে এ নির্বাচনকে দেখছে বাংলাদেশে পশ্চিমা মিশনগুলো। পশ্চিমা দেশগুলোর রাষ্ট্রদূত বা হাইকমিশনার ও কূটনীতিকরা ইসিসহ প্রার্থীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে তাদের প্রত্যাশা জানিয়েছেন। বিভিন্ন দূতাবাস ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার ৩০টি দল এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে।এ দিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত চারজন কাউন্সিলর। এর মধ্যে দুটি সাধারণ ওয়ার্ড ও দুটি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে প্রত্যাহারের শেষ দিনে একক প্রার্থী হওয়ায় রিটার্নিং অফিসার আলাদা আলাদা বিজ্ঞপ্তিতে তাদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসারের কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানিয়েছেন। তবে ঢাকা উত্তর সিটিতে কেউই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হননি।ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে যে চারজন কাউন্সিলর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলেন, তারা হচ্ছেন- ২৫ নম্বর সাধারণ ওয়ার্ডের মো. আনোয়ার ইকবাল, ৪৩ নম্বর সাধারণ ওয়ার্ডের মো. আরিফ হোসেন (বর্তমান কাউন্সিলর) এবং সংরক্ষিত আসন ৬ নম্বরে (১৬, ১৭, ১৮ সাধারণ ওয়ার্ডের সমন্বয়ে) নারগিস মাহতাব (বর্তমান কাউন্সিলর) ও সংরক্ষিত ৮ নম্বর আসনের (২২, ২৩, ২৬) নিলুফার রহমান।