আজিমপুর মাতৃসদনে কেনাটাকায় ৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ডা. ইশরাতসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে দুদকের ৪ মামলা

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,নিজস্ব প্রতিনিধি,১৮ ডিসেম্বর : কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগে ঢাকার আজিমপুর মাতৃসদন ও শিশু স্বাস্থ্য হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. ইশরাত জাহানসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে আলাদা চারটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার দুদক উপপরিচালক মো. আবুবকর সিদ্দিক বাদি হয়ে কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ মামলাগুলো করেন।

আসামিদের দেশত্যাগেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেপিতে পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে ওই নিষেজ্ঞা জারি করা হয়।

গত ২০১৭ সালের ১৭ অক্টোবর সকালে প্রসবব্যথা নিয়ে হতদরিদ্র পারভীন গিয়েছিলেন আজিমপুরের ওই হাসপাতালে। কিন্তু হাসপাতালটিতে রেজিস্ট্রেশন না থাকায় যন্ত্রণায় কাতর এই নারীকে বের করে দেওয়া হয়। পরে তিনি রাস্তায় বাচ্চা প্রসব করেন এবং জন্মের পর পরই নবজাতকের মৃত্যু হয়।

ওই ঘটনার দুই বছরের বেশি সময় পর সেই ডা. ইশরাত জাহানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা দিল দুদকের দুদক। তিনি ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী কেনাকাটায় ৫ কোটি ২১ লাখ টাকা আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ তুলেছে দুদক। এর প্রমাণ পাওয়ারও দাবি করেছেনে দুদক কর্মকর্তারা।

মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে নিয়ম লঙ্ঘন করে সরকার নির্ধারিত মূল্য ও প্রচলিত বাজার দর উপেক্ষা করে বেশি দামে ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী কিনে ৫ কোটি ২১ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। ২৫ আসামির মধ্যে ১৭ ডাক্তার ও সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দফতরের ৮ জন। ডা. ইশরাত জাহানকে চারটি মামলাতেই আসামি করা হয়েছে।

এজাহারে বলা হয়, ওষুধ প্রশাসন ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্ধারিত মূল্য তালিকা থাকা সত্বেও খোলা বাজার থেকে ২-৩ গুণ বেশি দরে ওষুধ ক্রয় করেছে আজিমপুর মাতৃসদন ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান। এই দুই সংস্থার ওষুধের তালিকা ও তালিকায় উল্লেখ করা নির্ধারিত মূল্যের বাইরে ওষুধ ক্রয় করার প্রয়োজন হলে সে ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেওয়ার বিধান রয়েছে। ওষুধ প্রশাসন ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের তালিকা ও নির্ধারিত দামের বাইরে ওষুধ ক্রয় করা হলেও মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। ওষুধের গায়ে লেখা সর্বোচ্চ মূল্যের চেয়েও বেশি দামে কেনা হয় বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী। বাজার দরের চেয়ে অস্বাভাবিক বেশি দামে ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী ক্রয় করে আত্মসাত করা হয়েছে ৫ কোটি ২১ লাখ টাকা। গত ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কেনাকাটার ক্ষেত্রে ওই পরিমান অর্থ আত্মসাত করা হয়। এই কেনাকাটায় মূখ্য ভূমিকা রেখেছেন ঢাকার আজিমপুরের মাতৃসদন ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের তত্বাবধায়ক ডা. ইসরাত জাহান।

এজাহারে আরও বলা হয়, অসৎ উদ্দেশ্যে অন্যায়ভাবে আর্থিকলাভের জন্য ক্ষমতার অপব্যবহার ও অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ করে হাসপাতালের জন্য ওষুধ, সার্জিক্যাল-যন্ত্রপাতি ও প্যাথলজি আইটেমসমূহ টেন্ডারের মাধ্যমে ক্রয়ের ক্ষেত্রে এমআরপি ও ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মূল্য তালিকা অনুসরণ করা হয়নি।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন স্বাস্থ্য অধিদফতর প্রকাশিত মেডিকেল অ্যান্ড সার্জিক্যাল রিকুইজিট (এম.এস.আর) সামগ্রীর মূল্য তালিকা মোতাবেক সার্জিক্যাল আইটেম ও যন্ত্রপাতি সক্রয় করা হয়নি। এসআর বহির্ভূত মালামাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া বাজার দরকে আমলে না নিয়ে কেনাকাটা করা হয়। এ ক্ষেত্রে বাজার যাচাই কমিটির তৈরি মনগড়া ও ভিত্তিহীন দরকে বিবেচনায় নিয়ে এমআরপি ও এসআর রেইটের চেয়ে উচ্চ মূল্যে মালামাল ক্রয়ের মাধ্যমে ওই পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়।

এজাহারে আরও বলা হয়, জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাত করে সংশ্নিষ্টরা দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারা ও ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা লঙ্ঘন করেছেন; যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে সান্তনা ট্রেডার্সকে কার্যাদেশ দিয়ে বাজার দরের চেয়ে উচ্চ মূল্যে ওষুধ চিকিৎসা সামগ্রী কেনা হয় বলে এজাহারে উল্লেখ করয়েছে।

২৫ আসামি হলেন: চার মামলায় আসামিরা হলেন আজিমপুর মতৃসদন ও শিশুস্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের তত্বাবধায়ক ও টেন্ডার সংক্রান্ত দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সভাপতি ডা. ইশরাত জাহান, পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের সাবেক অধ্যক্ষ ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য পারভীন হক চৌধুরী, মাতৃসদনের সাবেক সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য মাহফুজা খাতুন, সাবেক সহকারী কো-অর্ডিনেটর (ট্রেনিং অ্যান্ড রিসার্চ) ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য চিন্ময় কান্তি দাস, সাবেক মেডিকেল অফিসার ও দরপত্র মূলন্যায়ন কমিটির সদস্য সাইফুল ইসলাম, মেডিকেল অফিসার (শিশু) ও বাজারদর যাচাই কমিটির সদস্য মাহফুজা দিলারা আকতার, হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ও বাজারদর যাচাই কমিটি সদস্য নাজরিনা বেগম, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও বাজারদর যাচাই কমিটির সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম, পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও দরপত্র মুল্যায়ন কমিটির সদস্য জেবুন্নেসা হোসেন, সিনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনি) ও বাজারদর যাচাই কমিটির সভাপতি রওশন হোসনে জাহান, মাতৃসদনের সাবেক সহকারী কো-অর্ডিনেটর (ট্রেনিং অ্যান্ড রিসার্চ) ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের উপপরিচালক মো. লুৎফুল কবীর খান, মেডিকেল অফিসার ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য রওশন জাহান, সমাজসেবা অধিদফতরের উপপরিচালক হালিমা খাতুন, মাতৃসদনের বিভাগীয় প্রধান (শিশু) ও বাজারদর যাচাই কমিটির সদস্য মো. আমীর হোচাইন, সাবেক সমাজসেবা কর্মকর্তা ও বাজারদর যাচাই কমিটির সদস্য মোছা. রইছা খাতুন ও সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান।

এ ছাড়া পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের সহকারী পরিচালক কাজী গোলাম আহসান, সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাছির উদ্দিন, জুনিয়র কনসালট্যান্ট (শিশু) নাদিরা আফরোজ, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. নাছের উদ্দিন, সমাজসেবা কর্মকর্তা বিলকিস আক্তার ও মেডিক্যাল অফিসার আলেয়া ফেরদৌসিও আসামি করা হয়েছে।

ঠিকাদারদের মধ্যে আসামিরা হলেন- মনার্ক এস্টাব্লিসমেন্টের মালিক মো. ফাতে নূর ইসলাম, মেসার্স নাফিসা বিজনেস কর্নারের মালিক শেখ ইদ্রিস উদ্দিন (চঞ্চল) ও সান্তনা ট্রেডার্সের মালিক নিজামুর রহমান চৌধুরী।