জি কে শামীমের টেন্ডার বাতিলের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,ঢাকা প্রতিনিধি,৩০ অক্টোবর : যুবলীগ নেতা জি কে শামীমের নেয়া সরকারি প্রকল্পগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ফের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, জি কে বিল্ডার্সের অধীনে যেসব প্রকল্পের কাজ শুরুর পর থেমে আছে, সেগুলো বাতিল করে রিটেন্ডারিং করা হোক।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জি কে বিল্ডার্সের প্রকল্পগুলোর কাজ থমকে আছে। এসব কাজের জন্য সার্বিক এডিপি বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হবে বলে তারা সভায় উল্লেখ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী ফের ওই নির্দেশনা দেন।

এর আগে ২২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে জি কে শামীমের প্রসঙ্গ উঠলে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, ‘কীভাবে একটি কোম্পানি এত কাজ পায়।’ জবাবে উপস্থিত কর্মকর্তারা জানান, অভিজ্ঞতা, সক্ষমতা ও অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করে টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই শামীমকে কাজ দেয়া হয়েছে।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘জি কে শামীমের যত কাজ আছে, সব বাতিল করতে হবে। সেটা যেন বিধি অনুসারে হয়। যত দ্রুত সম্ভব এগুলো পুনঃটেন্ডার করতে হবে। যেন কাজে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে।’ একই সঙ্গে এরকম যারা বিতর্কিত ঠিকাদার রয়েছে, সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ করছে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

জি কে শামীমের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেডের কাছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার ঠিকাদারির কাজ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সচিবালয়, র‌্যাব হেডকোয়ার্টার, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, পঙ্গু হাসপাতালসহ ১৭টি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প।

এর মধ্যে সচিবালয়ে ১৫০ কোটি টাকার অর্থ মন্ত্রণালয়ের নতুন ভবন, ১৫০ কোটি টাকার কেবিনেট ভবন, ৪০০ কোটি টাকার এনবিআর ভবন, ২০০ কোটি টাকার মহাখালী ডাইজেস্টিভ এবং বেইলি রোডে ৩০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প। এর পাশাপাশি জি কে শামীমের হাতে রয়েছে ২০-২৫ কোটি টাকার অ্যাজমা, ২০-২৫ কোটি টাকার ক্যান্সার, ২০-২৫ কোটি টাকার সেবা মহাবিদ্যালয়, ৮০ কোটি টাকার নিউরো সায়েন্স, ৮০ কোটি টাকার বিজ্ঞান জাদুঘর, ১২ কোটি টাকার পিএসসি, ৩০-৬০ কোটি টাকার র‌্যাব ফোর্স, ৬৫ কোটি টাকার এনজিও ফাউন্ডেশন এবং মিরপুর-৬-এ ৩০ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ। শামীম গ্রেফতারের পর থেকে সব কাজ বন্ধ আছে।

মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, দেশের দক্ষিণাঞ্চলে রূপপুরের মতো আরও একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে অনেক বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। ভবিষ্যৎ চাহিদা মেটাতে দক্ষিণাঞ্চলে আরও একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করব।

‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য পারমাণবিক নিরাপত্তা তদারকির লক্ষ্যে পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নিউক্লিয়ার রেগুলেটরি ইফ্রাস্ট্রাকচার উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দিতে গিয়ে তিনি এই ইচ্ছার কথা জানান।

অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পটির জন্য ঢাকায় ১০ তলা ভবন নির্মাণের প্রস্তাব বাতিল করেছেন তিনি। বলেছেন, ঢাকার পরিবর্তে সাভারে পরমাণু শক্তি কমিশনের নিজস্ব জমিতেই এটি করতে হবে। ঢাকায় ২ একর জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন নেই।

তিনি আরও জানান, বেসরকারি মেরিন একাডেমির মান নিয়ে সংশয় থাকায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বেসরকারি খাতে হোক সমস্যা নেই; কিন্তু তাদের মান ও সিলেবাস দেখে নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে পাবলিক-প্রাইভেট সব মেরিন একাডেমির একই শিক্ষা কারিকুলাম থাকতে হবে।

তাছাড়া পর্যায়ক্রমে প্রতিটি বিভাগে মেরিন একাডেমি প্রতিষ্ঠা করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে প্রতিটি নদী ধারাবাহিকভাবে ক্যাপিটাল এবং মেইনটেনেন্স ড্রেজিং করতে হবে। তিনি আবারও বলেন, দেশের সব মহাসড়কে টোল সিস্টেম চালু করতে হবে। টোলবিহীন কোনো সড়ক হবে না।

সেবা নেবেন টোল দিবেন। পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দেশে কতজন বিদেশি আছেন এবং বিদেশে কতজন বাংলাদেশি আছেন, এর সঠিক হিসাব প্রয়োজন।

তাছাড়া ক্রাইটেরিয়া অনুযায়ী প্রতিবন্ধীদের সংখ্যা নিরূপণ করতে হবে। এছাড়া পানি ধরে রাখার জন্য খাল খনন করতে হবে। সেই সঙ্গে ইউক্যালিপটাসসহ অধিক পানি শোষণকারী গাছ রোপণ বন্ধ করতে হবে।