এমপিরা যখন কাঠগড়ায়

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,ঢাকা প্রতিনিধি,২৬ অক্টোবর : ক্যাসিনোকান্ডে জড়িতসহ নানা বিতর্কে অভিযুক্ত এমপিরা এখন কাঠগড়ায়। ক্যাসিনোকা-  ও নানা অপকর্মের কারণে ইতিমধ্যে সরকারদলীয় এমপি এবং জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরী, ভোলা-৩ আসনের এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, সুনামগঞ্জ-১ আসনের এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। একই সঙ্গে বিদেশযাত্রায় দেওয়া হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। তাদের অবৈধ সম্পদের খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। নির্বাচনী এলাকায় বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বরিশাল-৪ আসনের এমপি পঙ্কজ দেবনাথকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে আসন্ন সম্মেলনসহ ও সব সাংগঠনিক কার্যক্রমে বিরত রাখা হয়েছে। নানা কারণে বর্তমানে সমালোচিত-আলোচিত হচ্ছেন ১৪-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননও।

সূত্রমতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে গত ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনো ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ক্যাসিনো ও টেন্ডারবাজিতে জড়িত যুবলীগের কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতারের পর বেশ কয়েকজন এমপি ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতার সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। ইতিমধ্যে চারজন এমপির ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। তাদের বিদেশযাত্রায়ও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। যারা এত দিন এলাকায় গডফাদার ছিলেন, নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও সন্ত্রাস করেছেন, দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছেন, তাদের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি শেখ হাসিনার। ইতিমধ্যে কয়েকজন এমপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হয়েছে। আরও প্রায়          দেড় ডজন এমপিকে সতর্ক চোখে রাখা হয়েছে। সরকার ও দলের নীতিনির্ধারণ ফোরামের নেতারা বলছেন, নিজ দলের দুর্নীতিবাজ নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করায় জনগণের কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ও আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় নেতাদের পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, যত বড় রাঘববোয়াল, গডফাদারই হোক না কেন, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। অন্যায়, অনিয়ম, দুর্নীতি ও অপকর্মের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নিয়েই অগ্রসর হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। ন্যাম সম্মেলন শেষে আজারবাইন থেকে দেশে ফেরার পর দুর্নীতিবাজ এমপি-নেতার তালিকা আরও বড় হতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী পদক্ষেপের ফলে কোনো অপরাধীই অপরাধ করে ছাড় পাবে না। তবে দলের শীর্ষ মহল থেকে ঘোষণা দিয়ে অ্যাকশন শুরু করা এটাই প্রথম। এতে জনমনে আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী পদক্ষেপ। এর ফলে অপরাধীরা আর অপরাধ করার সাহস পাবে না। যারা এত দিন নিজেদের ধরাছোঁয়ার বাইরে মনে করতেন তারাও নিজেদের গুটিয়ে নেবেন। কারণ শেখ হাসিনার আমলে অপরাধীদের ছাড় নেই। প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে দেশের জনগণ সরকারের সঙ্গে থাকবে। সূত্র জানায়, দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের কারণে দুর্নীতিগ্রস্ত, ক্ষমতার অপব্যবহারকারী, সন্ত্রাসী, টেন্ডারবাজির কাজে অভিযুক্ত মন্ত্রী-এমপিরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। এসব মন্ত্রী-এমপিকে বিতর্ক এড়িয়ে পরিচ্ছন্ন রাজনীতি করার জন্য দলীয় ফোরামে শোধরাতে বলেছিলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু কোনো কাজ না হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। জানা গেছে, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পাঁচ দিনের মাথায় ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন ও তার স্ত্রী ফারজানা চৌধুরীর ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। অভিযান শুরুর পরপরই এই এমপির নাম আসায় তার বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। শাওনের সম্পদ অর্জনের বিষয়টি অনুসন্ধান করছে দুদক। তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সংস্থাটি। অন্য অভিযোগগুলোর অনুসন্ধান করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পরপরই এর বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন জাতীয় সংসদের হুইপ ও চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের এমপি শামসুল হক চৌধুরী। চট্টগ্রাম আবাহনীর মহাসচিব হুইপ শামসুল হকের বিরুদ্ধে ক্লাবটিকে জুয়ার আসরে পরিণত করার অভিযোগ স্থানীয় আওয়ামী লীগের। তার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দুদক। সুনামগঞ্জ-১ আসনে সরকারদলীয় এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বিপুল অবৈধ অর্থের মালিক। গ্রেফতার ঠিকাদার জি কে শামীমের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অভিযোগে বলা হয়, এই এমপি কমিশনের বিনিময়ে ঠিকাদার ইলিয়াসকে (জি কে শামীমের সহযোগী) ঠিকাদারি কাজ পাইয়ে দিয়েছেন। নিজের নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন উপজেলা ও উপজেলার বাইরের এলাকায় এসব কাজ দিয়েছেন রতন। এ ছাড়া বিদেশে অর্থ পাচারেরও অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি রতনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তার বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার একজন এমপি অভিযানে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছেন। তার সম্পদের পরিমাণের বিষয়েও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম বিভাগের চারজন, পাবনার একজন, নাটোরের একজন, ময়মনসিংহের একজন, রাজশাহীর একজন, বরগুনার একজনসহ প্রায় দুই ডজন এমপির ব্যাপারে সতর্ক চোখ রাখা হচ্ছে। তাদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। এই এমপিদের তথ্য আগে থেকেই আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে আর্থিক কেলেঙ্কারির দায়ে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, তাদের নামও আছে ওইসব তালিকায়। শুধু নিজ দলের এমপি-মন্ত্রী নন, অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পদে রয়েছেন এমন দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, ক্ষমতার অপব্যবহারকারী এমনকি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে বিভিন্ন গ্রুপিং করা নেতাদের তালিকাও রয়েছে। সেই তালিকা ধরে অভিযান চালানো হবে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছেন। সভানেত্রী হিসেবে দলের ভিতরে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনার জন্য অনেক সাহস প্রয়োজন হয়। তিনি তা দেখিয়েছেন। দীর্ঘদিন একটি দল ক্ষমতায় থাকলে ক্ষমতাকেন্দ্রিক লোভ-লালসা জন্মে। ফলে কারও কারও কর্মকান্ডে  দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়।