কারাগারে খালেদার এক বছর পূর্ণ হলো আজ

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,ঢাকা প্রতিনিধি,০৮ ফেব্রুয়ারি : বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারাবাসের এক বছর পূর্ণ হলো শুক্রবার (০৮ ফেব্রুয়ারি)। জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় ১৭ বছরের সাজা নিয়ে গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডের পুরানো কারাগারে আছেন।এক বছরে তার মুক্তির বিষয়ে কতটুকু এগিয়েছেন বিএনপি?

দলীয় প্রধানের মুক্তির জন্য আইনি পথে হাঁটছে বিএনপি। কিন্তু খুব একটা সুবিধা করতে পারছে না। আর খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে রাজপথের আন্দোলন জোরদার হচ্ছে না। আইনি ও আন্দোলন দু’টো পথ বেছে নেওয়া হলেও কোনোটি থেকে এখন পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত ফল পায়নি বিএনপি। এর মধ্যে খালেদা জিয়াকে ছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপির ভরাডুবির পর দলের নেতাকর্মী, সমর্থক এমনকি সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন বিএনপি তাহলে কী করবে। কারাগারে থেকেই খালেদা জিয়া দলের নেতৃত্ব দেবেন না কি তার মুক্তির জন্য বিএনপি কঠোর আন্দোলনে যাবে। দলের মধ্যে এমন আলোচনাও আছে সরকার না চাইলে খালেদা জিয়ার মুক্তি কোনো ভাবেই সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে বিএনপি কি খালেদা জিয়ার জন্য সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করবে। আর সেটা চাইলে কী দিয়ে হবে সেই সমঝোতা?বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আইনের সাধারণ প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা কঠিন হবে। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার একমাত্র উপায় রাজপথ উত্তপ্ত করা। যতদিন পর্যন্ত রাজপথ উত্তপ্ত না হবে, ততদিন পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে আইনি প্রক্রিয়ায় জেল থেকে বের করা যাবে না। এটি আমার দৃঢ় বিশ্বাস।তিনি বলেন, আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা এইজন্য কঠিন যে, বর্তমান সরকার সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। সরকারের সদিচ্ছা ছাড়া তাকে মুক্ত করা যাবে না। রাজনৈতিক কারণেই তার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা হয়েছে। এই মামলাগুলোর যতটা না আইনি ভিত্তি রয়েছে, তার চেয়ে বড় উদ্দেশ্য হলো রাজনৈতিক প্রতিহিংসা।এদিকে পরিবার, চিকিত্সক ও দলের নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে কারাবন্দি থেকেও তার মনোবল এতটুকুও টলেনি। তবে শারীরিকভাবে খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। পুরোনো রোগগুলো বেড়ে গেছে। চোখেও প্রচণ্ড ব্যথা, পা ফুলে গেছে। একা একা হাটতে পারেন না।খালেদা জিয়ার এক ব্যক্তিগত চিকিৎসক বলেন, অসুস্থ খালেদা জিয়া চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন। অস্বাস্থ্যকর বদ্ধ স্যাঁতস্যাতে পরিবেশে তাকে থাকতে হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ তাকে সুচিকিত্সা থেকে বঞ্চিত করছে।প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ৪টি এবং আওয়ামী লীগ সরকারের গত দশ বছরে ৩২টি মামলা দায়ের হয়েছে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে। এর মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা ৫টি, নাশকতার ১৬টি, মানহানির ৪টি, ৩টি হত্যা, মানহানিকর বক্তব্য দেওয়ার ২টি, রাষ্ট্রদ্রোহের একটি, ভুয়া জন্মদিন পালনের একটি, সাবেক নৌমন্ত্রীর ওপর বোমা হামলার একটি, জাতীয় পতাকার অবমাননার একটি, ড্যান্ডি ডাইংয়ের অর্থঋণ আদালতে বিচারাধীন একটি এবং বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ের মালিকানা নিয়ে একটি দেওয়ানী মামলা রয়েছে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে।আজ বিএনপির কর্মসূচিতে যা থাকছেদিনটিকে কেন্দ্র করে সারাদেশে কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। তবে ঢাকায় তারা ঘরোয়া কর্মসূচি পালন করবে। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করবে দলটি।বৃহস্পতিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, শুক্রবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বেলা আড়াইটায় শুধু ঢাকার রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হবে। এছাড়া, ৯ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী (ঢাকা মহানগরী বাদে) একই দাবিতে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হবে।খালেদা জিয়া যখন কারাগারের এক বছর পূর্ণ হওয়ার সময় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রয়েছেন সিঙ্গাপুরে। চিকিৎসার জন্য তিনি সেখানে এক সপ্তাহ আগেই জানিয়েছিলেন।শুক্রবার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনের অনুষ্ঠানে জ্যেষ্ঠ নেতাদের অনেকেই উপস্থিত থাকবেন, এমন তথ্য দিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান।তবে এর আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা জানিয়েছিলেন, কারাবাসের এক বছর উপলক্ষে খালেদা জিয়ার সঙ্গে নেতারা দেখা করে কারাগারে যাবেন। ফ্রন্টের অন্যতম প্রধান শরিক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারও এ প্রতিবেদককে বলেছিলেন, ঐক্যফ্রন্টের নেতারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে কারাগারে যেতে পারেন।বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল ব্যক্তি জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার কারাবরণের বছরপূর্তি ও তার মুক্তির দাবিতে লিফলেট ও পোস্টার করেছে বিএনপি।