ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,পাবনা প্রতিনিধি,৩০ আগস্ট : বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আনন্দ টিভির পাবনা প্রতিনিধি সুবর্ণা আক্তার নদীর মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি সাবেক শ্বশুর আবুল হোসেনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।বুধবার বিকাল ৩টায় নিহত সাংবাদিকের মা মর্জিনা খাতুন বাদী হয়ে তিনজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও চার-পাঁচজনকে আসামি করে পাবনা থানায় মামলা করেন। এরপরই পুলিশ মামলার প্রধান আসামি ইড্রাল ফুড লিমিটেডের মালিক শিল্পপতি আবুল হোসেনকে গ্রেফতার করে।
মৃত্যুর আগেই খুনিদের নাম বলে গেছেন সুবর্ণাসুবর্ণা নদী মৃত্যুর আগেই তার ওপর হামলাকারীদের নাম বলে গেছেন বলে জানিয়েছেন তার মা ও মেয়ে।সাবেক স্বামী রাজীব কয়েকজন সহযোগীকে সঙ্গে নিয়ে সুবর্ণাকে কুপিয়েছেন বলে হাসপাতালে আহতাবস্থায় সুবর্ণা জানিয়েছেন।সুবর্ণার মা মর্জিনা বেগম বলেন, মেয়ে মৃত্যুর আগে হাসপাতালে হামলাকারীদের নাম আমাদের জানিয়ে গেছে। রাজীব ও তার সহকারী মিলনসহ কয়েকজন তাকে কুপিয়েছে। আমার মেয়ে তাদের চিনেছিল। র্যাব ও পুলিশকে আমি সব তথ্য জানিয়েছি।নিহত সুবর্ণার মেয়ে জান্নাতও (৭) একই তথ্য পুলিশকে জানিয়েছেন।যেসব কারণ সামনে আসছেজানা যায়, বছর দেড়েক আগে রাজীবের সঙ্গে নদীর ডিভোর্স হয়। এই ডিভোর্সের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আদালতে একটি মামলাও চলছে।নিহত সুবর্ণা আকতার নদীর বোন চম্পা খাতুন বলেন, আমার বোন তার সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে গত বছরের ৪ জুন থানায় মামলাটি করেছিলেন। মামলা আদালতে বিচারাধীন। তার সাবেক স্বামী রাজিবের লোকজন নিশ্চিত ছিলেন যে তারা মামলায় হেরে যাবেন। আর এই কারণেই সুবর্ণা নদীকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেন তার বড় বোন।তিনি আরো বলেন, আবুল হোসেনের ছেলে রাজীবের সঙ্গে বছর দুয়েক পূর্বে বিয়ে হয়। বছর দেড়েক আগে তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এর পর সুবর্ণা নদী পাবনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আদালতে একটি যৌতুক মামলা করেন। এ মামলায় সুবর্ণা তার সাবেক স্বামী রাজীব ও তার বাবা আবুল হোসেনসহ তিনজনকে আসামি করেন।গতকাল মঙ্গলবার এ মামলার সাক্ষ্য দেয়ার দিন ছিল। এতে সুবর্ণা আদালতে সাক্ষ্য উপস্থাপন করেন। মামলায় ফেঁসে যাওয়ার আশঙ্কায় আসামিরা পরিকল্পিতভাবে সুবর্ণাকে হত্যা করেছে বলে দাবি তার পরিবারের।তারা জানান, ইতিপূর্বেও সুবর্ণা নদীকে বিভিন্ন ভাবে শহরে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করা হয়। গত বছরের জুনে তার গলায় চাকু চালানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় তারা। পরে সুবর্ণা নদী জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে পাবনা সংবাদপত্র পরিষদ মিলনায়তনে গত ২২ জুলাই সংবাদ সম্মেলন করেন। পরে ওই বছরেই ৩ অক্টোবর একই দাবিতে ঢাকার ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন মিলনায়তনে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে জেলা শহরের রাধানগর আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে নিজ বাসার সামনে খুন হন সুবর্ণা নদী।সুবর্ণার বড় বোন চম্পা খাতুন জানান, রাতে অফিস থেকে বাসায় ফিরছিলেন তাঁর বোন। বাসার সামনে পৌঁছলে ওঁত পেতে থাকা মুখ ঢাকা দুই ব্যক্তি তাঁর ওপর হামলা চালায়। তারা সুবর্ণাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যায়। হামলাকারীদের চিনতে পারেননি তিনি। পরে চিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন ছুটে এসে তাঁকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরই সুবর্ণার মৃত্যু হয়। বুধবার বাদ জোহর পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ মাঠে সাংবাদিক সুবর্ণা নদীর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।জানাজায় গণমাধ্যমকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন। পরে তাকে পাবনা সদর উপজেলার বালিয়াহালট গোরস্থানে দাফন করা হয়।তথ্যমন্ত্রীর নিন্দাসুবর্ণা আক্তার নদী দুর্বৃ্ত্তদের হাতে নিহত হওয়ার ঘটনায় নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।বুধবার মন্ত্রী এ হত্যাকাণ্ডের কারণ উদঘাটন এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার বিষয়ে পাবনার জেলা প্রশাসক ও পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন।মন্ত্রী এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমি এ মর্মান্তিক ঘটনায় অত্যন্ত ব্যথিত এবং ক্ষুব্ধ। হত্যাকারীদের অতি দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জন্য আমি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বোচ্চ তৎপরতার আহ্বান জানাই।’৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটামএদিকে, সুবর্ণা নদীকে কুপিয়ে হত্যার প্রতিবাদে ও ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতারের দাবিতে দুপুরে পাবনায় মানববন্ধন করেছেন সাংবাদিকরা। দুপুর ১২টার দিকে জেলা শহরের প্রেসক্লাব মোড়ে তারা সমবেত হন। এসময় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নদী হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতারের আল্টিমেটাম দেন সাংবাদিক নেতারা।পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি শিবজিত নাগ বলেন, ‘দেশব্যাপী সাংবাদিকেরা অনিরাপদ হয়ে পড়ছেন। ছোটখাটো কারণে সাংবাদিক নির্যাতন ও হত্যার মতো ঘটনা ঘটছে। এটা বরদাশত করার মতো নয়। আমরা সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।’ রবিউল ইসলাম বলেন, ‘পাবনায় বারবার সাংবাদিকেরা নির্যাতনের শিকার হলেও সুষ্ঠু বিচার হচ্ছে না। ফলে আবারও একই ঘটনা ঘটছে। তাই সাংবাদিক নির্যাতন ও হত্যা বন্ধে আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রত্যাশা করি।’