ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি, ২৩ আগস্ট : রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আটকে থাকার জন্য বাংলাদেশকে দায়ী করে মঙ্গলবার মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সূ চি সিঙ্গাপুরে যে বক্তব্য দিয়েছেন-তাতে হতাশ হয়েছে বাংলাদেশ। সূ চির ওই বক্তব্যে বাংলাদেশের একাধিক কর্মকর্তা ক্ষোভ ও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। খবর বিবিসির।
বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলেছেন, নভেম্বরে সই হওয়া প্রত্যাবাসন চুক্তির ১০ মাস পরেও প্রধান কোনো শর্তই মিয়ানমার বাস্তাবায়ন করেনি।
তারা বলছেন, দু’টি অভ্যর্থনা ক্যাম্প এবং একটি ট্রানজিট ক্যাম্প তৈরি করা ছাড়া কিছুই করেনি মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ।
মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সূ চি গত মঙ্গলবার সিঙ্গাপুরে এক বক্তৃতায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আটকে থাকার জন্য কার্যত বাংলাদেশকে দায়ী করেছেন।
কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়ে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরও অনেকে বলেছেন, তারা নিজের দেশে কোনো ক্যাম্পে থাকার জন্য ফিরে যেতে চাননা।
মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সূ চি সিঙ্গাপুরে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, মিয়ানমার শরণার্থীদের নিতে প্রস্তুত, তাদের পুনর্বাসনের জন্য জায়গাও ঠিক হয়েছে। কিন্তু তাদের পাঠানোর দায়িত্ব মূলত বাংলাদেশের।
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু না হওয়ার জন্য তিনি কার্যত বাংলাদেশকেই দায়ী করেছেন।এ ব্যাপারে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি।
তবে বিবিসির সাথে আলাপকালে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেছেন, অং সান সূ চি-র এমন বক্তব্যকে দুর্ভাগ্যজনক বলে তিনি মনে করছেন।
বাংলাদেশ সরকারের রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন বিষয়ক কমিশনার আবুল কালাম বলেছেন, মিয়ানমারের নেত্রীর বক্তব্যের সাথে বাস্তবতার কোনো মিল নেই।
“যেটা আসলে বাস্তব অবস্থা থেকে শত যোজন দূরে, এধরণের মন্তব্য সত্যিই খুব বিস্ময়কর এবং খুবই হতাশাজনক বটে।”
গত বছরের নভেম্বরে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের চুক্তি হয়। এরপর দুই দেশের কর্মকর্তাদের মধ্যে কয়েকদফা বৈঠক হয়েছে। কিন্তু চুক্তি সইয়ের পর দশ মাসেও সেই চুক্তির প্রধান কোনো শর্তই মিয়ানমার বাস্তবায়ন করেনি বলে জানিয়েছেন আবুল কালাম।
তিনি বলেছেন, “মুল সমঝোতা চুক্তিতে পরিস্কারভাবে বলা আছে, তারা প্রত্যাবাসিত হবে তাদের নিজেদের গ্রামে। সম্ভব হলে স্বগৃহে। এবং কোনো কারণে যদি সেটি সম্ভব না হয়, তাহলে তাদের এমন স্থানে নিতে হবে, যেটি তাদের গ্রামের নিকটবর্তী। কিন্তু মিয়ানমার মোটাদাগে শুধু দু’টি অভ্যর্থনা ক্যাম্প এবং একটি ট্রানজিট ক্যাম্প তৈরি করেছে।”
আবুল কালাম আরও জানিয়েছেন, সপ্তাহ দেড়েক আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে তিনিসহ বাংলাদেশের যে প্রতিনিধি দল মিয়ানমার গিয়েছিল, সে সময় তাদের ঐ তিনটি ক্যাম্প তারা দেখিয়েছেন।
কক্সবাজারে কুতুপালং ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের একজন নেতা মো: নূর বলছেন, জমিজমা বা নিরাপত্তা এবং মর্যাদা নিশ্চিত না করে তারা ফিরে গেলে আবারও নির্যাতনের মুখে পড়তে হবে বলে তারা মনে করেন।
“আমাদের ফেরত নেয়ার বিষয় নিয়া কিছুই করে নাই মিয়ানমার সরকার। আমাদের ফেরত নেয়ার ব্যাপারে কোনো পরিকল্পনাই তারা করে নাই। এটা হইলো, দুনিয়াতে নাটক বানাইতেছে মিয়ানমার সরকার।”
স্বামীর হত্যাকান্ডের পর সন্তানদের নিয়ে দু’জন নারী গত বছরের অগাষ্টে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে কুতুপালং ক্যাম্পে আশ্রয় পেয়েছেন।
তাদের একজন হামিদা বলেছেন, মিয়ানমারে বিচ্ছিন্নভাবে তাদের দুই একজন আত্মীয় আছেন, তাদের কাছ থেকে তারা খবর পাচ্ছেন যে, মিয়ানমার সরকার তাদের ফেরত নিলে কোনো অধিকার না দিয়ে ক্যাম্পে রাখবে। তারা এভাবে কখনই যাবেন না বলে তিনি বলেন।
রোহিঙ্গা আরেক নারী বলছিলেন, তারা যেতে চান না। তারা দু’জনই প্রশ্ন করেছেন, “তারা কীভাবে সেখানে যাবেন? যেখানে তাদের ঘরবাড়ি, নিরাপত্তা এবং মর্যাদাসহ কোনো অধিকারই নেই। তারা বাংলাদেশে ক্যাম্পে আছেন, নিজের দেশ মিয়ানমারে ফেরত গিয়েও তারা ক্যাম্পে থাকতে রাজি নন।”
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য কাজ করে, এমন একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার শিউলী শর্মা মনে করেন, রোহিঙ্গাদের এখন ফেরত পাঠানো হলে তাদের আবারও আগুনের মুখে ঠেলে দেয়া হবে।
“শরণার্থীরাও মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার প্রশ্নে নিরাত্তাহীনতায় ভুগছে। আমরাও যারা তাদের সহায়তায় কাজ করছে, আমরাও এমন একটা পরিবেশে তাদের ফেরত পাঠাতে পারি না।”
রোহিঙ্গারা যাতে সব অধিকার নিয়ে স্বেচ্ছায় নেজের দেশে ফিরতে পারে, সেটা মিয়ানমারকেই নিশ্চিত করতে হবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।