ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,নিজস্ব প্রতিনিধি,০৪ ফেব্রুয়ারি : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়কে কেন্দ্র করে যে কোনো নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করতে বিদেশে বসেও ষড়যন্ত্র চলছে বলে মনে করছে সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে গত ৩১ জানুয়ারি এ ব্যাপারে সতর্ক করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সদর দপ্তরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ওই চিঠিতে বলা হয়- তাদের কাছে তথ্য আছে, বিএনপি-জামায়াতের কিছু নেতা লন্ডনে বৈঠক করে ৮ ফেব্রুয়ারির রায়কে ঘিরে অস্থিতিশীল পরিবেশ করতে বেশ কিছু গোপন পরিকল্পনা করেছে।
লন্ডনে কোন দিন কার বাসায় কারা ওই বৈঠকে অংশ নিয়েছিল, তাদের নাম-পরিচয়ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে তুলে ধরে এ ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক থাকতে বলা হয়। একই সঙ্গে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ৮ ফেব্রুয়ারি ঘিরে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা কঠোরভাবে মোকাবেলা করতে সারাদেশের মাঠপর্যায়ের পুলিশকে সতর্ক করে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ওই চিঠিতে ১৮টি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনার কথা বলা আছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের সংশ্নিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
পুলিশের প্রতিবেদনে আশঙ্কা করা হয়, অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে পুলিশ বা অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর সশস্ত্র হামলাও করা হতে পারে। এমনকি কেপিআইভুক্ত সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, বিদ্যুৎকেন্দ্র, রেলপথ ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে। গণপরিবহনে ভাংচুরসহ নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালানো হতে পারে। ফেসবুক বা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ করে দেশে অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টির অপচেষ্টা চলতে পারে।
সারাদেশের পুলিশকে সতর্ক করে ১৮ দফার নির্দেশনায় বলা হয়, থানাসহ পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা বাড়াতে হবে। সব কেপিআই ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে থাকবে বাড়তি সতর্কতা। এ ছাড়া নিজেদের জানমাল রক্ষায় পুলিশকে আরও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। যারা অতীতে নাশকতার সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের হালনাগাদ তথ্য নিতে বলা হয়। কীভাবে রাজপথে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে, সে ব্যাপারে দেওয়া হয় দিকনির্দেশনা। গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানোর কথাও বলা হয়েছে। নির্দেশনায় আছে ব্লকরেইড ও নিয়মিত মামলার আসামিকে গ্রেফতারে তৎপর থাকার কথাও। এমনকি চুরি-ছিনতাইসহ প্রচলিত অপরাধে জড়িতদের যাতে কেউ ব্যবহার করতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকবে পুলিশ। কোনো অপারেশনে পুলিশ এককভাবে না গিয়ে সংঘবদ্ধভাবে যাবে।
এদিকে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়- বিদেশি সূত্রের মাধ্যমে তারা জানতে পেরেছে- ২৭ জানুয়ারি রাতে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের লন্ডনের বাসভবনে একটি বৈঠক হয়েছে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্য বিএনপি, জামায়াত ও সমমনা নেতারা। বৈঠকে জিয়া অরফানেজ মামলার রায়-পরবর্তী করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক, সম্পাদক কয়ছর এম আহমদ, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান, জামায়াত নেতা ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লা, ব্যারিস্টার এম এ রাজ্জাক, মাওলানা আবদুর রহমান মাদানী, লন্ডন মুসলিম সেন্টারের সঙ্গে জড়িত ড. আবদুল বারীসহ ১০-১২ জন উপস্থিত ছিলেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, খালেদা জিয়ার সাজা হলে সে দিন থেকে বিএনপি, জামায়াত ও সমমনা দলগুলো সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। ব্রিটিশ পার্লামেন্ট, হাউস অব কমন্স, কমনওয়েলথ অফিসসহ লন্ডনে অবস্থিত বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের সামনে মানববন্ধনসহ স্মারকলিপি দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। বাংলাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর যদি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনো ধরনের হামলা বা গুলি চালায়, তবে আন্দোলনকারী কর্মীদের ভেতর থেকেই নিজেরা নিজেদের কোনো কর্মীকে অথবা নিরীহ কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করে সরকারের ওপর দায় চাপানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, যাতে আন্দোলন বেগবান হয়। এ ছাড়া গ্রেফতার বিএনপির নেতাকর্মীদের পরিবারকে লন্ডন থেকে বিভিন্ন দাতব্য সংস্থার মাধ্যমে সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়, যাতে তারা ‘আন্দোলন’ থেকে পিছু হটে না আসে।
পুলিশের একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, ৮ ফেব্রুয়ারির রায়কে ঘিরে কেউ যাতে রাজপথে কোনো নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে ব্যাপারে কঠোর থাকবে পুলিশ। তারা রাজপথে বিএনপিকে দাঁড়াতেই দেবে না। এরই মধ্যে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়েছে ধরপাকড়। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত চার শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিভিন্ন নেতার বাসায় চলছে অভিযানও। এরই মধ্যে নবনিযুক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী ঢাকার আশপাশের জেলার পুলিশ সুপারদের নিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে বৈঠক করেছেন। রায়কে ঘিরে যাতে কেউ জননিরাপত্তার হুমকি হয়ে উঠতে না পারে, সে ব্যাপারে দেওয়া হয় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা। রাজধানীকে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার মধ্যে রাখতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।
এদিকে গতকাল বিকেলে ডিএমপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র্যালির উদ্বোধনকালে পুলিশ মহাপরিদর্শক জাবেদ পাটোয়ারী বলেছেন, জনজীবন বিপর্যস্ত করতে চাইলে অতীতের মতো ভবিষ্যতেও কঠোর থাকবে পুলিশ। আইন ও পেশাদারিত্বের মধ্যে থেকে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা প্রয়োগ করবে পুলিশ। যেমনভাবে অতীতে অগ্নিসন্ত্রাস মোকাবেলা করা হয়েছে।
ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে যেভাবে ঢাকায় পুলিশ অপতৎপরতা দমন করেছে, তেমনি আগামীতেও যে কোনো ধরনের রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতা রুখে দিতে প্রস্তুত পুলিশ। যে-ই অপরাধ করুক, তার পরিচয় যা-ই হোক, তাকে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করাব।’
সৌজন্যে : দৈনিক সমকাল