শুক্রবার রাতে প্যারিসে যেভাবে হামলা চালানো হয়েছে তাতে গোটা ফ্রান্স স্তম্ভিত হয়ে গেছে।
এই হামলায় প্রায় ১৩০ জন নিহত এবং ৩৫০ জনের মতো মানুষ আহত হয়েছে। আহতদের অনেকের অবস্থা গুরুতর।
মাদ্রিদে রেলের ওপর বোমা বিস্ফোরণের পর ইউরোপে এতো বড়ো হামলার ঘটনা ঘটেনি।
এর ফলে ইউরোপের দেশগুলোর নিরাপত্তা বাহিনীর সক্ষমতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
ফরাসী প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ বলেছেন, ইসলামিক স্টেট তার দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এবং আইএসও বিবৃতি দিয়ে এই হামলা চালানোর কথা স্বীকার করেছে।
কেনো প্যারিসে?
গত জানুয়ারি মাসে প্যারিসে স্যাটায়ার ম্যাগাজিন শার্লি হেব্দো এবং ইহুদীদের একটি সুপারমার্কেটের ওপর ইসলামপন্থীদের হামলার পর প্যারিসে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছিলো।
প্যারিসের শহরতলি থেকে শুরু করে ফ্রান্সের অনেক দরিদ্র এলাকা ইসলামপন্থীদের জন্যে উর্বর এলাকা। অনেক মুসলিম তরুণের কাছেই জিহাদ আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে । এই এলাকাগুলোতে বেকারত্বের হার বেশি। এবং নগরের উপেক্ষার শিকার।
আইএসের সাথে যোগ দিতে পাঁচশোর মতো ফরাসী মুসলিম সিরিয়া ও ইরাকে চলে গেছে।
আর জঙ্গি বিমান থেকে সিরিয়া ও ইরাকে জঙ্গিদের ওপর হামলা চালাচ্ছে ফ্রান্স।
হামলার লক্ষ্য
প্যারিসে নিরীহ লোকজনের ওপর হামলার লক্ষ্য ছিলো – যতো বেশি সম্ভব হত্যাকাণ্ড ঘটানো। এই স্টেডিয়ামের পাশেই তিনজন আত্মঘাতী হামলাকারী নিজেদের শরীরের সাথে বেঁধে রাখা বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিজেদের হত্যা করেছে। ফ্রান্সে এর আগে এধরনের হামলার ঘটনাও ঘটেনি।
স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠানরত জার্মানি ও ফ্রান্সের ফুটবল ম্যাচও ছিলো হামলাকারীদের টার্গেট।
তারপর আছে বাটাক্লর কনসার্ট হলের হামলা। সেখানেও তারা যতো বেশি সম্ভব ফরাসি তরুণকে হত্যা করতে চেয়েছে। সেখানে নিহত হয়েছে ৮০ জনেরও বেশি।
এই ঘটনাকে অনেকেই ২০০২ সালে মস্কোর একটি থিয়েটারে জিম্মি নাটকের সাথে তুলনা করছেন। চেচেন জঙ্গিদের হামলায় সেখানে ১৩০ জন রুশ নাগরিক ও ৪০ জন জঙ্গি নিহত হয়।
সিরিয়া ও ইরাকে ফরাসী সামরিক অভিযানের প্রতিশোধ হিসেবে এই হামলাকে দেখা হলেও অনেকেই বলছেন, এর পেছনে সাংস্কৃতিক দিকও আছে।
আইএস বলেছে, প্যারিস হচ্ছে পাপাচার ও বিকৃতির রাজধানী। অন্যান্য হামলার সাথে তুলনা
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের অনেকে এই হামলার সাথে ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলাকে তুলনা করছেন। পাকিস্তান-ভিত্তিক জঙ্গিরা ভারতের এই শহরে ঢুকে হামলা চালিয়েছিলো।
প্যারিসের এই হামলা নতুন করে ইউরোপে চালানো আরো কয়েকটি হামলার কথা মনে করিয়ে দিয়েছে- ২০০৪ সালে মাদ্রিদ, ২০০৫ সালে লন্ডন।
ইহুদিদের ওপরও হামলা হয়েছে- ব্রাসেলসে ইহুদিদের জাদুঘরে, ২০১৪ সালে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, প্যারিসের সর্বশেষ এই হামলা থেকে বোঝা যায় যে জঙ্গিরা নির্দিষ্ট কাউকে লক্ষ্য করে হামলা পরিচালনা করেনি। যেখানে যখন সম্ভব সেখানেই তারা হামলা চালিয়েছে।
আইএস দেখিয়েছে যে তারা যেকোনো সময়ে যেকোনো স্থানে হামলা চালাতে সক্ষম, এবং ইউরোপের আধুনিক শহরগুলো তা প্রতিরোধে কতোটা ব্যর্থ।
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন