ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,নিজস্ব প্রতিনিধি,২২ নভেম্বর : অনৈতিক সম্পর্কে রাজি না হওয়ায় মদিনাতুল উলুম হাফিজিয়া মাদ্রাসার আবাসিক ছাত্র জিদান ওরফে আব্দুর রহমানকে হত্যা করে তারই আরেক সহপাঠী আবু বক্কর সিদ্দিক।
আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর কাওরানবাজারে অবস্থিত র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব তিনের অধিনায়ক লে. কর্নেল ইমরান হাসান।
এর আগে বুধবার সকাল নয়টার সময়ে পুরান ঢাকার সদরঘাট এলাকা থেকে মো. আবু বক্কর সিদ্দিককে গ্রেপ্তার করে র্যাব তিনের একটি দল। গ্রেপ্তারকৃত আবু বক্কর সিদ্দিক বরিশাল জেলার মেহেন্দীগঞ্জ থানার কালিকাপুর গ্রামের মৃত তাহের শিকদারের ছেলে।
লে. কর্নেল ইমরান হাসান বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আবু বক্কর তার সহপাঠী জিদানকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে। হত্যার উদ্দেশ্য সম্পর্কে আবু বক্কর জানায় সে এবং জিদান মদিনাতুল উলুম হাফিজিয়া মাদ্রাসায় আবাসিক ছাত্র হিসেবে হেফজ বিভাগে পড়াশুনা করত। মো. আবু বক্কর সিনিয়র ছাত্র হওয়ায় নিহত জিদান ওরফে আব্দুর রহমানকে মাঝে মধ্যেই ব্যক্তিগত কাজ যেমন কাপড় কাঁচা, খাবার আনা-নেয়াসহ বিভিন্ন কাজ করার জন্য আদেশ করত। নিহত জিদান তার আদেশ না শুনায় আবু বক্কর তার উপর ক্ষিপ্ত হয়।
লে. কর্নেল আরও বলেন, ইতিপূর্বে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য হলে গত ১৬নভেম্বর আসামি আবু বক্কর জিদানকে চড় থাপ্পড় মারে। পরবর্তীতে জিদান মাদ্রাসার শিক্ষক ইয়াসিন হুজুরের কাছে বিচার দিলে মাদ্রাসার শিক্ষক ইয়াসিন আবু বক্করকে সর্তক করে মীমাংসা করে দেয়। এছাড়াও আসামি আবু বক্কর বিভিন্ন সময়ে জিদানকে অনৈতিক সম্পর্ক করার প্রস্তাব দেয়। জিদান তার প্রস্তাবে রাজি না হলে আসামি আবু বক্কর তার উপর ক্ষিপ্ত ছিল। পরবর্তীতে মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের অপর শিক্ষার্থী আব্দুর রহমানের সাথে জিদানের ঘনিষ্ঠতা ও চলাফেরা বাড়লে এতে সিনিয়র ছাত্র আবু বক্করের মনে চরম ক্ষোভ এবং জিঘাংসার সৃষ্টি হয়। আবু বক্কর জানায় যে, নিহত জিদানের সাথে আব্দুর রহমানের ‘অনৈতিক’ সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে এরূপ সন্দেহ থেকে সে জিদানের প্রতি চরম প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটায়।
এছাড়াও লে. কর্নেল বলেন, হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে আবু বক্কর র্যাবকে জানায় যে গত ১৬ নভেম্বর মাদ্রাসার শিক্ষক ইয়াসিন হুজুরের কাছে বিচার দেয়ার পর থেকেই আবু বক্কর তাকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে। এ কারণেই আবু বক্কর গত ১৯নভেম্বর রবিবার এশার নামাজের পর তার ব্যবহার্য ফল কাটার ছুরিটিতে ধার দেয় এবং রাতের বেলায় গলা কেটে লাশ সেপটিক ট্যাংকে লুকিয়ে ফেলার পরিকল্পনা করে। পরবর্তীতে রাত ১০টার সময়ে প্রতিদিনের ন্যায় মাদ্রাসার ছাত্ররা রাতের খাবারের পর ঘুমিয়ে পড়ে। পরে আবু বক্কর সুযোগের সন্ধানে বিছানায় অপেক্ষারত থাকে। এরপর রাত দেড়টার সময়ে আবু বক্কর তার ব্যবহার্য ট্রাংক থেকে ফল কাটার ছুরিটি বের করে জিদানের মুখ চেপে ধরে গলায় পোঁচ দেয়। এ সময় জিদান গোঙ্গানির শব্দ করলে আবু বক্কর জোরে তার মুখ চেপে ধরে পুনরায় পোঁচ দেয়। জিদানের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর সে কোলে করে জিদানের লাশ সেপটিক ট্যাংকের কাছে নিয়ে যায় এবং ভিতরে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় মাদ্রাসার ওই রুমে ৩০-৩৫ জন শিক্ষার্থী শিশু ঘুমন্ত অবস্থায় ছিল। আবু বক্করের দেয়া তথ্য মতে ধস্তাধস্তি ও গোঙ্গানির শব্দে দু’একজন জেগে উঠলেও অন্ধকার রুমে মশারী ভিতরে থাকায় এবং ভয়ে কেউ শব্দ করেনি। পরবর্তীতে মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষক রক্তের দাগের সূত্র ধরে পল্টন থানা পুলিশের সহায়তায় সেপটিক ট্যাংকের ভিতর থেকে লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যায়।
গত ২০ নভেম্বর আনুমানিক রাত দেড়টার সময়ে রাজধানীর গুলিস্তানের মদিনাতুল উলুম হাফিজিয়া মাদ্রাসার ভিতরে মাদ্রাসার ছাত্র জিদান ওরফে আব্দুর রহমানকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে পল্টন থানা পুলিশ মাদ্রাসার সেপটিক ট্যাংকের ভিতর থেকে নিহত জিদানের লাশ উদ্ধার করে। ওই মাদ্রাসা ছাত্র খুনের ঘটনাটি সারাদেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।
নিহত জিদানের বাবার নাম মো. হাফেজ উদ্দিন। তাদের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁও থানার জ্বালেশ্বর গ্রামে। নিহত জিদান ওরফে আব্দুর রহমান মদিনাতুল উলুম হাফিজিয়া মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের আবাসিক ছাত্র ছিল। সে বিগত চার বছর যাবত ওই মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত ছিল। জিদান হত্যার ঘটনায় তার বাবা মো. হাফেজ উদ্দিন মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের আরেক ছাত্র ঘটনার পর থেকে পলাতক মো. আবু বক্করকে আসামি করে পল্টন মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করে।