ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,নিজস্ব প্রতিনিধি,১৭ নভেম্বর : মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের থার্ড কমিটিতে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। এতে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর অভিযান বন্ধ, তাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন এবং নাগরিকত্ব দেয়ার আহ্বানও জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্ক সময় সকালে ভোটাভুটির পর এই প্রস্তাব গৃহীত হয়। ভোটাভুটিতে ১৩৫টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। বিপক্ষে ভোট দিয়েছে চীন ও রাশিয়াসহ ১০টি দেশ। ভারতসহ ২৬টি দেশ কোনো পক্ষেই ভোট দেয়নি। এছাড়া, অনুপস্থিত ছিল ২২টি দেশ।
প্রস্তাবে মিয়ানমারের ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন পুনর্বিবেচনা করে রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নাগরিকত্ব দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের ওপর যারা নির্যাতন করেছে, তাদের বিচারের আওতায় আনার জন্যও দেশটির সরকারকে বলা হয়েছে।
প্রস্তাবে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে ‘মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত’ নিয়োগ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ যেন মিয়ানমারকে সহায়তার প্রস্তাব করে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনসহ সব ধরনের সংকট সমাধানের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সহযোগিতাকে উৎসাহিত করা হয়েছে।
৩১ অক্টোবর থার্ড কমিটিতে ‘মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শিরোনামে মিশর এই খসড়া প্রস্তাবিটি জমা দেয়। এর কো-স্পনসর ছিল ৯৭টি দেশ। এই প্রস্তাবে শুধু রোহিঙ্গা সমস্যা উল্লেখ করা হয়েছে। এর আগে ২০১৫ সালে অং সান সুচি সরকার গঠনের আগে একই শিরোনাম ‘মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। সেখানে মিয়ানমারের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও গণতান্ত্রিক পরিবেশের ওপর জোর দেয়া হয়েছিল। সেই প্রস্তাবে ১৯টি অনুচ্ছেদের মধ্যে রোহিঙ্গা বিষয়ে শুধু একটি অনুচ্ছেদ ছিল।
বর্তমান প্রস্তাবে বলা হয়, রাখাইনে সামরিক অভিযানের কারণে নিয়মতান্ত্রিকভাবে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। এই অভিযান বন্ধ করাসহ রোহিঙ্গা নিধনের জন্য দোষীদের বিচারের আওতায় আনতেও মিয়ানমার সরকারকে বলা হয়। এছাড়া বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা যেন নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে রাখাইনে ফেরত যেতে পারে, রাখাইনে যেন জাতিসংঘসহ অন্যান্য সাহায্য সংস্থা কাজ করতে পারে, সে বিষয়ে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়।
গত ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর নতুন করে হামলা শুরু করে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী। এর ফলে অন্তত ছয় হাজার মুসলমান নিহত ও হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে অন্তত সাত লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এ অবস্থায় জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন সংস্থা ও দেশের সমালোচনার মুখে পড়তে হয় মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচিকে।
সম্প্রতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের ৩১তম সম্মেলনে সুচি অঙ্গীকার করেছেন বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারকের তিন সপ্তাহের মধ্যে রাখাইনের বাস্তচ্যুত লোকজনকে ফেরত নেয়ার কাজ শুরু করবে মিয়ানমার সরকার। তবে, দেশটির সেনাপ্রধান মিন অং লাইং বৃহস্পতিবার বলেছেন, গণভাবে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ফিরে আসতে দেয়া হবে না।
সূত্র: পার্সটুডে।