ইঁদুরের মাথায় মানুষের ‘ব্রেন’ স্থাপন!

SHARE

rat_top120171110083733ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ডেস্ক,১১ নভেম্বর : শুধু মানব প্রজাতি নয়, বরং পৃথিবীর সব প্রজাতির কল্যাণেই নানা ধরনের গবেষণা করে চলেছেন বিজ্ঞানীরা। তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণার নৈতিকতা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে বিজ্ঞানী মহলে।
চলতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত স্নায়ুবিজ্ঞান সম্মেলনে এমন দুইটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়, যেখানে দাবী করা হয়, ইঁদুরের মধ্যে মানুষের ব্রেন স্থাপন করা গেছে। ইঁদুরের বুদ্ধিমত্তা বাড়াতে বিজ্ঞানীরা ইঁদুরের মাথায় স্থাপন করেছেন মানুষের ব্রেন।

এর স্বপক্ষে যুক্তি হিসেবে বলা হয়, এই পদক্ষেপ একদিন পশুদের জ্ঞান বাড়াতে সক্ষম হবে অর্থাৎ তারা ভবিষ্যতে সম্মান পাওয়ার অধিকারী হবে।

সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীদের মতে, মানুষ এবং ইঁদুরের মধ্যে যে বুদ্ধির বাঁধা তা কাটিয়ে ইঁদুরকে একটি বুদ্ধিমান হাইব্রিড প্রাণী হিসেবে তৈরি করা যেতে পারে।

মানুষের ব্রেনের একটি ক্ষুদ্র অংশ যেটি অর্গানয়েড হিসেবে পরিচিত, তা ইঁদুরের ব্রেনের মধ্যে স্থাপন করে- এই দুটো ব্রেনের মধ্যে রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে সংযোগ সক্রিয় করেছেন গবেষকরা। এর মাধ্যমে ইঁদুরের ব্রেনে কোষের ক্ষুদ্র একটা অংশ গঠিত হয়, এটি মানুষের নিউরনের (স্নুায়ুকোষ) মতোই কাজ করে।

বেশ কয়েকটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান মানুষের অর্গানয়েড ইঁদুরের ব্রেনে স্থাপনের সঙ্গে যুক্ত ছিল। ক্যালিফোর্নিয়ার সান ডিয়েগোর সল্ক ইনস্টিটিউটের প্রফেসর ফ্রেড গেজের নেতৃত্বাধীন দলের তথ্যানুযায়ী, মানুষের ব্রেনের অর্গানয়েড থেকে নিউরন অ্যাক্সন (স্নায়ুকোষের লম্বা সুতোর মতো যে অংশের মাধ্যমে কোষ থেকে স্পন্দন পরিবাহিত হয়) প্রেরণ করে, এটি এক নিউরন থেকে অন্য নিউরনে সংকেতগুলো বহন করে ইঁদুরের মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশে। ফলে টিস্যুটি কার্যকরভাবে ইঁদুরের মস্তিষ্কের সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারে।

 

বিজ্ঞানীরা মস্তিষ্কের রোগগুলো যেমন অ্যালঝাইমার্স এবং অটিজম গবেষণার জন্য এই ক্ষুদ্র-মস্তিষ্ক ব্যবহারের প্রত্যাশা করছেন। তবে এক্ষেত্রে ইঁদুরের মস্তিষ্ক মানুষের মনকে অনুকরণের বিষয়টি বেশ জটিল ব্যাপার, ফলে মানুষের অর্গানয়েড প্রাণীদের মধ্যে আরো বেশি স্থাপন করতে হবে।

বর্তমানে গবেষণাগারে বিজ্ঞানীরা একই সময়ে ৩/৪টি কোষ স্থাপনে সক্ষম হয়েছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে জানিয়েছেন, মানুষের ব্রেনের স্নুায়ু কোষ যত বেশি ইঁদুরের ব্রেনে স্থাপন করা হবে, ইঁদুর তত বেশি তীক্ষ্ণ প্রাণীতে পরিণত হয়ে উঠতে পারে।

স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির বায়োথেস্টিস্ট অধ্যাপক হ্যান গ্রিলে বলেন, ‘ইঁদুরের মস্তিষ্কে ৩/৪টি কোষ সংযোগের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু যদি ১০০০টি সংযোগ করেন তাহলে কি ঘটবে? ইঁদুরের পুরো মস্তিষের কোষের সংখ্যার কাছাকাছি পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। ভবিষ্যত সময়ে এটা হতে পারে যে, আপনি যা তৈরি করছেন তা সম্মানের অধিকারী।’

নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক এথিক্স প্রতিষ্ঠান দ্য হাস্টিংস সেন্টারের জোসেফিন জনস্টন বলেন, ‘এই বিষয়টি গবেষণার সীমারেখা প্রসঙ্গে প্রশ্ন সামনে এনেছে- নীতিগত ভাবে যুক্তি দেখানো হবে যে, গবেষণা ইঁদুরের ওপর করা হচ্ছে এবং আর ইঁদুর মানুষ নয়।’

‘আমরা যদি ইঁদুরকে মানুষের মস্তিষ্কের অর্গানয়েড দেই, তাহলে তারা মানুষের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে কি করবে, তাদের চেতনার লেভেল কেমন হবে, এমনকি তাদের প্রজাতির পরিচয় কি হবে?’

তথ্যসূত্র : ডেইলি মেইল