ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,নিজস্ব প্রতিনিধি,০৭ নভেম্বর : কোটি টাকার সম্পত্তি ফিরে পেতে ও বিয়ে টেকাতে দ্বিতীয় স্ত্রীর ছোট ভাইকে দিয়ে স্ত্রীকে হত্যা করিয়েছেন স্বামী শেখ মো. আব্দুল করিম।
কাকরাইলে জোড়া খুনের ঘটনায় গ্রেফতার হয়ে পুলিশের রিমান্ডে থাকা শেখ মো. আব্দুল করিমের কাছ থেকে এমনই তথ্য পেয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
পুলিশের রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নাবিদ কামাল শৈবাল বলেন, এই জোড়া খুনের ঘটনায় করিম, মুক্তা ও জনিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পারিবারিক বিরোধকে সামনে রেখেই তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এর মধ্যে সম্পত্তির মালিকানাও একটি কারণ রয়েছে। এই খুনের মোটিভ শনাক্ত হয়েছে। তাদের কাছ থেকে ঘটনার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা যায়, সবজি ভর্তি ডালি মাথায় নিয়ে বিক্রি করেছেন শেখ মো. আব্দুল করিম। পরনের জামা পর্যন্ত কিনতে পারেননি। বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে পুরাতন জামা চেয়ে নিয়ে তিনি পরিধান করেছেন। ঘুমিয়েছেন ফুটপাতে মাথায় ইট দিয়ে। এটা ত্রিশ বছর আগের কথা। ধীরে ধীরে অবস্থার পরিবর্তন হতে থাকে করিমের। এক পর্যায়ে শ্যামবাজারে পিঁয়াজ, রসুন, আদা ও আলুর আড়ত দেন। বিদেশ থেকে পিঁয়াজ আমদানি করে রীতিমত আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যান। কাকরাইল এলাকায় তার ছয় তলা বিশিষ্ট দুইটি বাড়ি। পল্টনে পলওয়েল মার্কেটে তিন টি দোকান কিনেন। রাঙামাটিতে ১শ’ বিঘা জমির ওপর বাগান বাড়ির মালিক তিনি। জয়দেবপুরে রয়েছে ৯০ বিঘা জমি। এসব সম্পত্তি তিনি তার প্রিয়তমা স্ত্রী শামসুন্নাহারের নামে কিনেন। এরপর শুরু করেন চলচ্চিত্র প্রযোজনা। ছোট ছেলে সাজ্জাদুল ইসলাম শাওনের নামে গড়ে তোলেন শাওন কথা চিত্র নামে প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান থেকে ‘মাই নেম ইজ খান’, ‘বন্ধু তুমি শত্রু তুমি’ সহ ৫ টি চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেন। এই চলচ্চিত্র প্রযোজনা করতে গিয়ে তার সঙ্গে পরিচয় হয় মডেলদের সঙ্গে। বিয়ে করেন মডেল শারমিন আক্তার মুক্তাকে। এর আগে ফরিদা নামে এক সুন্দরীকে তিনি বিয়ে করেন। কিন্তু প্রথম স্ত্রীর চাপাচাপিতে ফরিদাকে ডিভোর্স দেন। তৃতীয় স্ত্রীকেও প্রথম স্ত্রীর চাপাচাপিতে তিনি ডিভোর্স দেন চার মাস আগে। পরে আবারও মৌলভীর কাছে গিয়ে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে এক সঙ্গে বসবাস শুরু করেন। জীবনে কষ্ট করে অর্জন করা সম্পত্তি তার প্রথম স্ত্রীর নামে। এ কারণে তিনি পরিকল্পনা নেন কিভাবে প্রথম স্ত্রীকে সরিয়ে দেয়া যায়। চার মাস আগে রাঙামাটিতে তার বাগান বাড়িতে তৃতীয় স্ত্রীর সঙ্গে একটি পরিকল্পনা করে। সে অনুযায়ি মুক্তার ছোট ভাই আল আমিন ওরফে জনিকে দিয়ে এ হত্যার পরিকল্পনা নেয়া হয়।
মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, আব্দুল করিমের তৃতীয় মুক্তার ভাই আল-আমিন ওরফে জনি চাকরি বা ব্যবসা কিছুই করে না। বছর তিনেক আগে জনির সঙ্গে তার স্ত্রীর ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এরপর থেকে জনি তার ৫ বছরের সন্তানকে নিয়ে বোনের সঙ্গে নয়াপল্টনের ৩৬/এ নম্বর অ্যাপার্টমেন্টের ফ্ল্যাটে থাকতেন। বেকার জনির অর্থ সংকট ছিল চরমে। নিজের পথের কাঁটা দূর করতে এ সুযোগটিই কাজে লাগান করিম। ইচ্ছে করে মুক্তার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটিয়ে ডিভোর্স দেন। এরপর থেকে পারিবারিক কোন্দল শুরু হয়। এ নিয়ে মুক্তা ও জনি একবার কাকরাইলের ৭৯/১ নম্বর বাড়িতে গিয়ে শাসসুন্নাহারকে শাসিয়ে আসেন। করিম এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে ৪/৫ মাস আগে মুক্তা ও জনিকে সঙ্গে নিয়ে রাঙামাটিতে তার বাগান বাড়িতে যান। সেখানেই বোনের সংসার টিকিয়ে রাখার জন্য জনিকে এ হত্যার প্রস্তাব দেয়া হয়।
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে জনি বলেন, তার বোনের সতীন শামসুন্নাহারকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে হবে। তাহলে জনি ও তার পরিবারের পুরো দায়িত্ব নিবেন করিম। পাশাপাশি সতীন বেঁচে থাকলে তার বোন মুক্তার সংসার জীবনও সুখের হবে না। ভগ্নিপতির এমন প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে খুন করতে রাজি হন তিনি।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ দক্ষিণ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, করিম ও মুক্তা জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার পরিকল্পনার কথা স্বীকার করেছেন।
উল্লেখ্য, গত ১ নভেম্বর সন্ধ্যায় কাকরাইলের আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম রোডের ৭৯/১ নম্বর ভবন মায়াকাননের পঞ্চম তলার ফ্ল্যাটে শামমসুন্নাহার এবং চতুর্থ তলার সিঁড়িতে তার ছেলে শাওনকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়।