ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,নিজস্ব প্রতিনিধি,১০ আগস্ট : আওয়ামী লীগের কোনো নেতা-কর্মী কোন ব্যক্তি কিংবা বিশেষ করে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা করতে হলে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমতি নিতে হবে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি ৫৭ ধারায় করা কয়েকটি মামলা নিয়ে দেশব্যাপী বিতর্কের পর দলীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিভিন্ন জেলায় এ নির্দেশনা পাঠিয়েছেন। বিভিন্ন জেলা দলীয় নেতা-কর্মীদের টেলিফোনের মাধ্যমে এই নির্দেশ পাঠানো হয়।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের টেলিফোনে এ নির্দেশনা দিচ্ছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। কেউ যদি ৫৭ ধারায় মামলা করতে চায়, সেক্ষেত্রে তথ্য প্রমাণসহ উপযুক্ত অভিযোগ নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, তৃণমূল থেকে প্রাপ্ত অভিযোগের সত্যতা পেলে তবেই ৫৭ ধারায় মামলা করার অনুমতি দেয়া হবে। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের অনুমতি ছাড়া কোনো নেতা ৫৭ ধারায় মামলা করলে দল তার বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে।
সম্প্রতি সংবাদ শেয়ার করে একজন সাংবাদিক ৫৭ ধারায় মামলার শিকার হয়েছেন। অপরদিকে খুলনায় ছাগলের মৃত্যুর সংবাদে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের ছবি জুড়ে দেয়ায় এক সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে এক বিচারকের ট্রেনে ওঠার কাহিনী ফেসবুকের মাধ্যমে প্রকাশ করায় এই ধারায় মামলা করা হয় এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। পরে অবশ্য সবাই জামিনে মুক্ত হয়েছেন।
৫৭ ধারার অপপ্রয়োগের কারণে নানান সমালোচনায় পড়তে হয়েছে আওয়ামী লীগকে। এই পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের কোনো নেতা-কর্মীর কারণে যেন দলকে সমালোচনার মুখে পড়তে না হয়, সে জন্য সচেষ্ট হয়েছেন নেতারা। অভিযোগ উঠার পর সরকারের পক্ষ থেকেও ধারাটি সংশোধনের কথা জানানো হয়েছে। মন্ত্রিসভায় এ ব্যাপারে আলোচনা হলেও এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনো ঘোষণা আসেনি।
তবে এই নির্দেশনার ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, দলীয় সাধারণ সম্পাদক বিভিন্ন জেলায় ফোন করে এই বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক নেতা বলেন, ‘বিভিন্ন ঘটনায় আওয়ামী লীগের নেতাদের ৫৭ ধারায় দায়ের করা মামলা নিয়ে দেশব্যাপী নেতিবাচক সমালোচনার ঝড় ওঠেছে। আমরা গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী বলেই এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।’
নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খায়রুল আনাম সেলিম বলেন, ‘দুই তিন দিন আগে দলীয় সাধারণ সম্পাদক ফোনে এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন।’
গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘দলের হাইকমান্ডের কাছ থেকে আমি মৌখিক নির্দেশ পেয়েছি।’
নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক একটি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, ‘আমি সরাসরি ফোন পাইনি। তবে বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি এই ধরণের স্পর্শকাতর বিষয়ে মামলা করার ক্ষেত্রে আমাদের সতর্ক থাকতে দলের হাইকমান্ড নির্দেশ দিয়েছেন।’
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘দলীয় সাধারণ সম্পাদক বিভিন্ন জেলায় ফোন করে এই বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন।’
এর আগে ৫৭ ধারায় মামলা গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয় পুলিশ সদর দপ্তর থেকে। পাশাপাশি এই ধারায় মামলা গ্রহণের আগে পুলিশ সদর দপ্তরের আইন শাখার পরামর্শ নেওয়ার কথা বলা হয়।
এ আইনের অপপ্রয়োগ হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন খোদ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, তুচ্ছ কারণে ৫৭ ধারার অপপ্রয়োগ বন্ধ করতে হবে। এ প্রবণতা আত্মঘাতী। এসব কাজ বন্ধ করতে হবে। এর আগে ৫৭ ধারায় মামলার বিষয়ে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয় পুলিশ সদর দফতর। পাশাপাশি এ ধারায় মামলা গ্রহণের আগে পুলিশ সদর দফতরের আইন শাখার পরামর্শ নেয়ার কথা বলা হয়।