মেঘনার প্রাথমিক শিক্ষক মানিক মুন্সি ও কুহিনুর মুন্সির বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তির দাবী

SHARE

manik munsiওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,নিজস্ব প্রতিনিধি,১৭ জুলাই : কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কথিত সভাপতি মানিক মিয়া মুন্সি ও তাঁর চাচাত বোন ১১নং শিবনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি কুহিনুর আক্তার মুন্সির বিভিন্ন অপকর্ম ও দুর্নীতির ফিরিস্তি দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করেছেন প্রাথমিক শিক্ষকেরা। গত ১৩ জুলাই তারিখে সাধারন শিক্ষকদের পক্ষে ২০ জন শিক্ষক এই আবেদনে স্বাক্ষর করেন। তাঁরা ১২ জুলাই বুধবার উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্তকালে একপেশে তদন্ত কার্যক্রমের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করেন। আবেদনে তাঁরা তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (সংগ্রহ) সাইফুল ইসলামের তদন্তকালে পরিচালিত কর্মকান্ডকে পক্ষপাতদুষ্ট হিসাবে মন্তব্য করে পুনরায় সুষ্ঠু তদন্ত দাবী করেন। মহাপরিচালক বরাবর দাখিলকৃত অভিযোগে তাঁরা দাবি করেন, “তদন্তকালে কেবল অভিযোগকারী পক্ষের বক্তব্য গ্রহন, ডিপিইও এর উপস্থিতি, সম্পুরক অভিযোগের প্রতি গুরুত্ব প্রদান, বিদ্যালয় পরিদর্শণে অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে উপস্থিত না রাখা এবং অভিযোগের বিপক্ষে সমবেত শতাধিক শিক্ষকের বক্তব্যকে অগ্রাহ্য করায় তদন্ত কর্মকর্তা তাঁর নিরপেক্ষতার পরিচয় দিতে পারেন নাই।” আবেদনকারীদের সাথে যোগাযোগ করে জানা যায়, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূরুল ইসলাম এবং ক্ষমতালোভী জ্যেষ্ঠ সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার এই অভিযোগের অন্যতম ইন্ধনদাতা। বিভাগীয় এই ২জন ইন্ধনদাতা কর্মকর্তার উপস্থিতির ফলে তদন্তে সাধারন শিক্ষকদের মতামতের প্রতিফলন হয় নাই বলে সূত্রটি জানায়।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি মানিক মিয়া মুন্সি ও তাঁর বোন কুহিনুর মুন্সির বিরুদ্ধে যেসকল অভিযোগ দায়ের করেন তা হলো ঃ
১। তিনি কাদাচিৎ বিদ্যালয়ে আসেন। তাঁর বিদ্যালয়টির শিক্ষার মান সর্বনি¤েœ গিয়ে ঠেকেছে। বর্তমান শিক্ষার্থী মাত্র ৪৭ জন। তিনি শ্রেণি পাঠদানের পরিবর্তে ব্যবসা-বাণিজ্য ও রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।
২। শিক্ষক সমিতির সভাপতির পরিচয়কে পুঁজি করে একজন ক্ষমতাধর রাজনৈতিক নেতা এবং ২জন প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগীয় কর্মকর্তার মদদে শিক্ষা অফিসের সকল কর্মকান্ডকে নিয়ন্ত্রন করবার চেষ্টা করেন।
৩। ২০১৩ সালে প্রাক-প্রাথমিকের উপকরণ বাবদ বিদ্যালয় প্রতি ৫,০০০/- (পাঁচ হাজার) টাকার মালামাল সরবরাহের নামে ৪২টি বিদ্যালয়ে এককভাবে নি¤œমানের মালামাল সরবরাহ করে প্রায় ১,০০,০০০/- (এক লক্ষ টাকা) আতœসাত করেন। নিজের স্বাক্ষরে চেক দিয়ে টাকা উত্তোলন করে এককভাবে সকল টাকা আতœসাত করেন।
৪। ২০১৫ সালেও একই ভাবে ১,২০,০০০/- (একলক্ষ বিশ হাজার টাকা) এককভাবে আতœসাত করেন।
৫। ২০১৬ সালে নভেম্বর মাসে মানিকারচর বঙ্গবন্ধু কলেজে সমিতির নামে একটি সাধারণ সভা করেন এবং সদস্য ফি বাবদ শিক্ষকপ্রতি ৫০০/- (পাঁচশত টাকা) আদায় করে প্রায় ৪০,০০০/- (চল্লিশ হাজার) টাকা হাতিয়ে নেন।
৬। ২০১৭ সালে প্রথম দিকে সমিতির নামে একটি তহবিল গঠন করার কথা বলে সহকারী শিক্ষক জনাব মোঃ আবদুল্লাহ আল মামুনকে কোষাধ্যক্ষ করে শিক্ষকপ্রতি ২০০/- (দুইশত) টাকা আদায় করে এবং ২০,০০০/- (বিশ হাজার) টাকা হাতিয়ে নেন।
৭। ২০১৬ সালে ফিক্সেশন বাবদ প্রতি শিক্ষকের নিকট হইতে ২০০-৫০০/- টাকা আদায় করে এবং প্রায় ৭৫,০০০/- (পঁচাত্তর হাজার) টাকা হাতিয়ে নেন। বর্তমান শিক্ষা কর্মকর্তা বারবার শিক্ষকদের টাকা ফেরত দেবার নির্দেশ দিলেও তিনি অগ্রাহ্য করে চলছেন।
৮। সবচেয়ে বড় বানিজ্য হচ্ছে বদলী বানিজ্য প্রতি বৎসর বদলীর সময় সাধারণ শিক্ষকের নিকট হইতে হাজার হাজার টাকা নিয়ে বদলী করে থাকেন। ২০১৭ সালে জনাব মোসাঃ সাদিয়া আক্তার, সহকারী শিক্ষক, মোহাম্মদপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এর নিকট হইতে ৭৫,০০০/- (পঁচাত্তর হাজার) টাকা নিয়ে বদলী করেছে। লক্ষীপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জনাব রাহিমা আক্তার এর নিকট হইতে ৫০,০০০/- (পঞ্চাশ হাজার) টাকা নিয়ে বদলী করেছে। ব্রাহ্মণচর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জনাব মোসাঃ উম্মে সালমা এর নিকট হইতে ৪৮,৫০০/- (আটচল্লিশ হাজার পাঁচশত) টাকা নিয়ে বদলী করেছেন। একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায় তিনি এসকল আর্থিক সুবিধা গ্রহন করেছেন।
৯। দপ্তরী নিয়োগে মাতাবেরকান্দি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রার্থী জনাব মোঃ শেখ আলম এর নিকট হইতে ৩,০০,০০০/- (তিন লক্ষ টাকা) নিয়েছেন। বাঘাইকান্দি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রার্থী জনাব মোঃ বিল্লাল হোসেন এর নিকট হইতে ৩,৩০,০০০/- (তিনলক্ষ ত্রিশ হাজার) টাকা নিয়েছেন। নোয়াগাঁও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রার্থী জনাব মোঃ দেলোয়ার হোসেন এর নিকট হইতে ৩,০০,০০০/- (তিন লক্ষ) টাকা নিয়েছেন। সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ পরীক্ষা হওয়ায় তাঁরা নির্বাচিত হতে পারেননি। অদ্যবধি তাঁদের সমস্ত টাকা ফেরত দেওয়া হয়নি। বিভিন্ন সময় ঐ সমস্ত প্রার্থীরা মানিক মিয়া মুন্সির নিকট টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য আর্তনাদ করেও কোন ফল পাচ্ছেন না। বরং বঞ্চিত প্রার্থীদেরকে আশ্বাস দেয়া হচ্ছে যে, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বদলী হয়ে গেলে এই নিয়োগ বাতিল হয়ে পুনরায় পরীক্ষা হবে।
১০। তিনি সরকারী একটা সড়ক নিজের নামে “মানিক মুন্সি সড়ক” নামকরন করলে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে তাঁর বিরোধ সৃষ্টি হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশ অগ্রাহ্য করে তিনি সড়কে নিজের নামে সাইনবোর্ড স্থাপন করলে স্থানীয় জনগণ তা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়।
আবেদনে শিক্ষক সমিতির কথিত সভাপতি মানিক মিয়া মুন্সির দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির জন্য এবং কুহিনুর আক্তার মুন্সির উদ্যেশ্য প্রণোদিত অভিযোগ দায়েরের জন্য উভয়ের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তপূর্বক যথাযথ বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আমরা প্রাথমিক শিক্ষা সমাজের পক্ষ থেকে জোর দাবি জানানো হয়।