কলেজছাত্রকে হত্যার পর টুকরো টুকরো করে মেঘনায়

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,নরসিংদী প্রতিনিধি,০৮ জুন : অপহরণের পর নরসিংদীতে মাহফুজ সরকার নামের এক কলেজছাত্রকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পর তার শরীর ৬-৭ টুকরা করে ট্রলিব্যাগে ভরে মেঘনা নদীর পানিতে ফেলে দেওয়া হয়।

মঙ্গলবার আদালতে ১৪৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে রাবেয়া ইসলাম রাবু নামের এক নারী। তার দেওয়া স্বীকারোক্তির সূত্র ধরে নরসিংদী থানা পুলিশ মাহফুজকে হত্যায় ব্যবহৃত রক্তমাখা ছুরি ও তার ব্যবহৃত কাপড় উদ্ধার করেছে।

নিহত মাহফুজের বড় ভাই অ্যাডভোকেট মোস্তফা সরকার রাসেল জানান, মাহফুজ নরসিংদী সরকারি কলেজের বিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। গত ২৬ মে শুক্রবার বিকেলে মাহফুজ বাড়ি থেকে বাইরে ঘুরতে যায়; কিন্তু রাতে আর বাড়ি ফেরেনি। তার বাবা আবদুল মান্নান সরকারসহ আত্মীয়স্বজন তাকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে ২৭ মে নরসিংদী সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এর পরদিন ২৮ মে মাহফুজের মোবাইল থেকে একটি ফোন আসে রাসেলের মোবাইল ফোনে। তাতে রাসেলকে জানানো হয়, মাহফুজ বর্তমানে অজ্ঞাত ওই ব্যক্তিদের হেফাজতে। মাহফুজকে ফিরে পেতে হলে তাদের ১ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে। না হলে তাকে হত্যা করা হবে। এরপর তারা রাসেলকে ৪টি বিকাশ ও ৩টি রকেট নম্বর দেয়। অন্য কোনো উপায় না পেয়ে রাসেল ও তার বাবা মাহফুজকে বাঁচাতে ৩টি রকেট নম্বরে ১ লাখ টাকা পরিশোধ করেন। এরপরও মাহফুজকে ফেরত না দেওয়ায় তারা নরসিংদী সদর থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন।

গত ২৮ মে নরসিংদী শহরের রাঙামাটিয়া মহল্লার প্রবাসী আল-মামুনের স্ত্রী ইনডেক্স প্লাজার এমডি গার্মেন্টস নামের একটি দোকানের মালিক রাবেয়া ইসলাম রাবু মাহফুজদের বাড়িতে গিয়ে তার ব্যাপারে অযাচিতভাবে খোঁজখবর নিতে থাকেন। মাহফুজের বাবা-মা, ভাই-বোনদের সহানুভূতি জানিয়ে বলেন, মাহফুজকে তিনি খুব স্নেহ করতেন। মাহফুজ তার কাছ থেকে সময় সময় টাকা ধার নিয়ে আবার ফেরত দিত। এসব কথা বলে তিনি মাহফুজকে খোঁজাখুঁজি করতে বিভিন্ন এলাকার ক’জন ব্যক্তির নাম ঠিকানা দেন। রাবু আরও জানান, এসব ব্যক্তির সঙ্গে মাহফুজের শত্রুতা ছিল। রাবুর এ ধরনের অসংলগ্ন কথা-বার্তায় মাহফুজের বাবা-মা তাকে সন্দেহ করেন। তারা ঘটনাটি অপহরণ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নরসিংদী থানার এসআই নুরে আলমকে জানান।

এসআই নুরে আলম ঘটনা শুনে মোবাইলে রাবুকে থানায় ডেকে পাঠান। পুলিশের ডাক পেয়ে রাবু মাহফুজদের বাড়িতে গিয়ে বলেন, ‘আমি আপনাদের সহযোগিতা করলাম, আর আপনারা সব কথা পুলিশকে বলে দিলেন।’ এরপর রাবু তার দুই বোনকে নিয়ে নরসিংদী সদর মডেল থানায় এসআই নুরে আলমের সঙ্গে দেখা করেন। কথা বার্তার এক পর্যায়ে এসআই নুরে আলম রাবুকে থানায় আটকে রেখে দুই বোনকে বিদায় করে দেন। এরপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়; কিন্তু তিনি কোনো ক্লু দেননি। পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শাহরিয়ার আলম ও ওসি গোলাম মোস্তফা যৌথভাবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এতেও রাবু পুলিশকে কোনো ধরনের ক্লু দেয়নি।

পরে গত সোমবার রাতে তাকে নরসিংদী পুলিশ সুপারের অফিসে নেওয়া হলে পুলিশ সুপার আমেনা বেগম তার সঙ্গে দীর্ঘ সময় কথা বলার পর সন্দেহ আরও বাড়ে। এক পর্যায়ে রাবেয়াকে গভীরভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি মাহফুজকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। পরে গত মঙ্গলবার নরসিংদীর অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক ফেরদৌস ওয়াহিদের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন রাবেয়া। এতে তিনি স্বীকার করেন, ২৬ মে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর তিনি মাহফুজকে ডেকে তার বাড়িতে নেন। সেখানে ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে পূর্ব পরিকল্পনা মতো রাবু তাকে জড়িয়ে ধরেন। এ সময় রাবুর ভাগিনা শাহাদাৎ হোসেন রাজু মাহফুজকে পেছন থেকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর রাবু ও রাজু মিলে তার মৃতদেহ ৬-৭ টুকরো করে ঘরের ডিপফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখে। পরদিন ২৭ মে ফ্রিজ থেকে শরীরের টুকরোগুলো ট্রলি ব্যাগে ঢুকিয়ে নৌকা ঘাটে গিয়ে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে পাশের বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মরিচাকান্দি এলাকায় মেঘনা নদীর গভীর পানিতে ফেলে দেয়। স্বীকারোক্তির পর পুলিশ মাহফুজকে হত্যার কাজে ব্যবহৃত রক্তমাখা ছুরি ও মাহফুজের গায়ে থাকা কাপড় উদ্ধার করেন। তবে পুলিশ এখনও লাশ উদ্ধারের অভিযান শুরু করেনি।

এ ব্যাপারে নরসিংদী সদর মডেল থানার ওসি গোলাম মোস্তফা সাংবাদিকদের জানান, ঘটনাস্থল শনাক্ত করার পর ডুবুরি দল নিয়ে তল্লাশি চালানো হবে।
সৌজন্যে : দৈনিক সমকাল ।