রাতের নিষিদ্ধ কাজে হিজড়ারা

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি,২০ মার্চ : সাধারণত দিনের বেলায় হিজড়ারা দল বেধে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বেড়ায়। তবে এদের মধ্যে কেউ কেউ আবার সন্ধ্যার পর সেজেগুজে নিষিদ্ধ কাজের আশায় শিকারের খোঁজে বের হয়। এদের অনেকে শাড়ি পরে আবার কেউ প্যান্ট-শার্ট ও গেঞ্জি পরে রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়।

গাজীপুরের শিল্পনগরী টঙ্গীতে হিজড়াদের এমনই চিত্র প্রায়ই চোখে পড়ে। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী। এলাকার হিজড়ারা রাতে ছিনতাই, মাদক ব্যবসা, অসামাজিক কার্যকলাপসহ নানা নিষিদ্ধ কাজে জড়িয়ে পড়েছে।

টঙ্গী শিল্পাঞ্চলে বর্তমানে প্রায় শতাধিক হিজড়া বসবাস করছে। এসব হিজড়া দুই ধরনের। এদের মধ্যে দেখতে কেউ পুরুষ আবার কেউ নারী হিজড়া। তারা বিভিন্ন দোকান পাট, মার্কেট ও বাসা বাড়িতে দল বেধে গিয়ে টাকা তুলে। কেউ টাকা দিতে না চাইলে তার ওপর রেগে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এদের ভয়ে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ তড়িঘড়ি করে ঝামেলা এড়াতে টাকা দিয়ে দেয়। টাকা দিতে কেউ না চাইলে হিজড়ারা তাকে নাজেহাল করে।

শনিবার টঙ্গী ও উওরা এলাকা সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, হিজড়াদের মধ্যে বেশ কয়েকটি গ্রুপ রয়েছে। টঙ্গী, তুরাগ, উত্তরা, উওরখান, দক্ষিণখান থানা এলাকায় প্রায় দেড় শতাধিক হিজড়া পরিবার নিয়ে বসবাস করছে। এদের মধ্যে হিজড়ার দলনেতা তথা সর্দারণীদের অধীনে থাকে হিজড়ারা। সর্দারণীদের মধ্যে অনেকে টঙ্গী, তুরাগ, দক্ষিণখান এলাকায় আলিশান বাড়ি বানিয়ে বসবাস করছে।

এদের মধ্যে টঙ্গীর স্টেশন রোড মাছিমপুর এলাকায় কাকলী হিজড়া, অঞ্জনা, আলাদীর বাড়ি রয়েছে। এদের অধীনে প্রায় ২০/২৫ জন পুরুষ ও নারী হিজড়া রয়েছে। এছাড়া টঙ্গী হাজী মাজার বস্তি, আমতলি বস্তি, ব্যাংক মাঠ বস্তি, বাস্তুহারা বস্তি, মিলগেইট ও কেরানীরটেক বস্তিসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৬০/৭০ জন হিজড়া বসবাস করছে।

অপরদিকে, দক্ষিণখানের ফায়দাবাদ, কাঁঠালতলা, কোর্টবাড়ি, আজমপুর কাঁচাবাজার, কসাইবাড়ি, আশকোনা এলাকায় প্রায় ৩০/৪০ জন পুরুষ ও নারী হিজড়া বসবাস করে। এদের মধ্যে ফায়দাবাদ ও কাঁঠালতলা এলাকায় রাহেলা, স্বপ্না, সুমি, প্রেমা, ঊর্মী, কল্পনা হিজড়ার বাড়ি রয়েছে। রাহেলা হিজড়া হলো এদের নেতা। দক্ষিণখানে রাহেলা হিজড়া দীর্ঘদিন বসবাস করছেন। তার রয়েছে একটি আলিশান বাড়ি। তার বাড়িই হলো হিজড়াদের ঘাঁটি। এখানে প্রায় ১৪/১৫ জন হিজড়া ভাড়া থাকে। পাশাপাশি তুরাগের কামার পাড়া, ধউর, রানাভোলা, বাউনিয়া এলাকায় প্রায় ৩০/৩৫ জন হিজড়া থাকে। কচি হিজড়া হলো এই গ্রুপের লিডার। সবাই তাকে গুরু বলে ডাকে।

এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীরা জানায়, টঙ্গী, উওরা, তুরাগ, উত্তরখান ও দক্ষিণখান এলাকায় প্রায় দেড়শ পুরুষ ও নারী হিজড়া রয়েছে। এলাকা নিয়ে হিজড়াদের মধ্যে মাঝে ঝগড়া ও মারামারির ঘটনা ঘটে। একপক্ষ টাকা তুলতে গেলে অপর পক্ষ টাকা তুলতে বাধা দেয়। এই নিয়ে টঙ্গী, উত্তরা, তুরাগ থানায় মামলাসহ একাধিক জিডির ঘটনা ইতিপূর্বে রেকর্ড করা হয়েছে।

গত বছর উত্তরা ১২নং সেক্টরের এক বাসায় টাকা তুলা কোলের শিশুকে কেন্দ্র করে বাড়ির মালিকের অস্ত্রের গুলিতে এক হিজড়া আহত হয়। এছাড়া উওরার ও টঙ্গী এলাকায় বাড়ির মালিক,সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা মিলে হিজড়াদের একাধিক বার পিটিয়ে আহত করেছে। এর পর ও হিজড়াদের অত্যাচার কমেনি। বরং তাদের অত্যাচার অনেকটা বেড়ে গেছে। এলাকাবাসি ও সাধারণ মানুষ এদের সীমাহীন অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে।

এলাকাবাসী অভিযোগ করে জানান, হিজড়া রাতের বেলায় ছিনতাই, মাদকসেবন ও বিক্রিসহ অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত থাকে। সুযোগ বুঝে এরা পথচারী, রিকশাওয়ালাদের নগদ টাকা ও মোবাইল সেট জোর করে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। টঙ্গী এলাকার স্বপ্না, কল্পনা, সাথী, সুমি, বিথী, মালা, ঝর্ণা, কচি, শাহজাহান হিজড়াসহ অসংখ্য পুরুষ ও নারী হিজড়া দলবেধে রাতে বাসা থেকে সেজেগুজে বের হয়ে টঙ্গী স্টেশন রোড, মেঘনা রোড, টিএসএস মোড়, আব্দুল্যাহপুর, বিমানবন্দর পার্কসহ বিভিন্ন এলাকায় অসামাজিক কার্যকলাপ অবাধে দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে আসছে বলে ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসীরা অভিযোগ করেন।

টঙ্গী এলাকার হিজড়া সর্দারনী কাকলী ও কল্পনা হিজড়া জানান, আমরা কোনো অন্যায় অত্যাচার করি না। বাড়ি বাড়ি ঘুরে তুলা তুলে ও নাচগান করে টাকা উপার্জন করি। ছিনতাই ও মাদক ব্যবসার সাথে আমরা জড়িত নই।

কল্পনা হিজড়া বলেন, টঙ্গী এলাকায় প্রায় শতাধিক হিজড়া বসবাস করে। তাদের মধ্যে কেউ না কেউ কোনো না কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে।

উত্তরার আব্দুল্যাহপুর ফায়দাবাদ কোর্টবাড়ি এলাকার হিজড়া সর্দারনী রাহেলা জানান, আমরা জন্মগতভাবে হিজড়া। আমার এখানের একটি বাড়ি রয়েছে। আমার বাসায় অনেক হিজড়া বসবাস করে।

রাহেলা হিজড়া আরও জানান, আমরা দক্ষিণখানসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় যায়। নাচগান করি এবং বাজার থেকে টাকা-পয়সা ও কাঁচা পণ্য উঠিয়ে কোনোমতে জীবিকা নির্বাহ করি। সমাজে হিজড়ারাও মানুষ তাদেরও বেঁচে থাকার অধিকার আছে।

টঙ্গী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ তালুকদার জানান, টঙ্গীতে অসংখ্য হিজড়া রয়েছে। আমি শুনেছি হিজড়ারা নাকি বিভিন্ন বাসায় গিয়ে টাকার জন্য মানুষকে নানাভাবে হয়রানি ও মারধর করে।

ওসি আরও জানান, আমরা কারো বিরুদ্ধে ছিনতাই, মাদক ব্যবসা, যৌন হয়রানির ব্যাপারে কোনো লিখিত অভিযোগ পেয়ে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।