মাত্র তিনদিন আগে বিয়ে হয় পীরের সঙ্গে নিহত গৃহকর্মীর!

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,দিনাজপুর প্রতিনিধি,১৮ মার্চ : এক ঘরে বাসর রাতের ফুলশয্যা। পাশের দু’টি ঘরে চাদরে মোড়ানো পীর ও তার গৃহকর্মীর গুলিবিদ্ধ লাশ। ভক্ত-মুরিদরা ভেবেছিলেন, পীর বাবা ঘুমাচ্ছেন। দরবারের সময় হয়েছে, তাই শরীরে হাত দিয়ে ডাকতেই চাদর সরে যায়। দেখেন পীরবাবার রক্তমাখা লাশ। এরপর পাশের ঘরে তার গৃহকর্মীরও গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া গেল।

এই দৃশ্য দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার ৬নং আটগাঁ ইউপি’র রামপুর দৌলা গ্রামে কথিত পীর ফরহাদ হোসেন চৌধুরীর আস্থানায়। সোমবার রাত অনুমানিক সাড়ে ৮টায় কথিত পীর ফরহাদ হোসেনসহ তার গৃহকর্মীকে গুলি করে হত্যা করে দুবৃর্ত্তরা। বুকে তাদের বেশ কয়েকটি গুলির চিহ্ন রয়েছে।

এলাকাবাসী ও পীরের ভক্ত মুরিদরা জানায়, নিহত গৃহকর্মী রূপালীর বিয়ে হয়েছে তিনদিন আগে। কিন্তু ঘটনার পর থেকে তার নব বিবাহিত স্বামী শফিকুল নিখোঁজ রয়েছে। শফিকুলের বাড়ি চাপাইনবারগঞ্জে। সে কাপড় ব্যবসার সাথে জড়িত বলে জানান এলাকাবাসী। ছোট থেকেই রূপালী ফরহাদ হোসেন চৌধুরীর গ্রামের বাড়িতে কাজ করে। তার বাড়ি পাশ্ববর্তী দৌলা পাবনা পাড়ায়।

ফরহাদ হোসেন পীর সাজার পর নামাজ আদায় করা ঠিক না বলে প্রচার করতেন। এছাড়াও ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড করায় এলাকার কতিপয় ব্যক্তির সাথেও তার বিরোধ বাধে। হঠাৎ পীর সাজা এবং ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে পরিবারের সাথেও মতবিরোধ সৃষ্টি হয় তার।

পীর ও তার গৃহকর্মীর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য দিনাজপুর মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এরইমধ্যে জোর তদন্ত শুরু হয়েছে। আলামত সংগ্রহ করছে সিআইডি’র একটি দল। তবে এখন পর্যন্ত মেলেনি কোন ‘ক্লু’। জানা গেছে, বেশ কয়েকটি বিষয় সামনে রেখে অনুসন্ধান চালাচ্ছে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তের বরাত দিয়ে এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে পুলিশের জানায়, ‘ধরন দেখে মনে হচ্ছে ঘটনার সঙ্গে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। তদন্তের পর বিস্তারিত বলা যাবে।’

তবে নিহত কথিত পীরের রাজনৈতিক জীবন, ব্যাক্তিগত জীবনে ব্যবসায়িক কোন ঝামেলা অথবা বিরোধ ছিলো কিনা সে বিষয়ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

প্রতিবেশী শামসুল মিয়া জানান, ফরহাদ হোসেন চৌধুরী পরিবার নিয়ে দিনাজপুর শহরের বালুয়াডাঙ্গায় থাকতেন। তার স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। সন্তানদের নাম আশিক, এমি ও অর্ণব। বিকেলের দিকে ফরহাদ হোসেন শহর থেকে গাড়ি করে দরবার শরিফে চলে আসতেন।

প্রতিবেশীদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, সবার কাছে রাজনৈতিক পরিচয়ের চেয়ে নিজেকে পীর পরিচয়ই বেশি দিতেন ফরহাদ হোসেন। লোকজনও তাকে সেভাবেই চিনত। রাজনৈতিক অঙ্গন ও মটর মালিক সমিতিতে নিজের ভালো অবস্থান থেকেই অনেক শ্রেনী-পেশার মানুষের সাথে সু-সম্পর্কের সুবাদে অল্প সময়েই নিজের বেশ কিছু ভক্ত অনুরাগী তৈরি করে বনে যান কথিত পীর।

প্রতিবেশীরা জানায়, ধীরে ধীরে ফরহাদ হোসেন বাড়িতে পীরের আখড়া গড়ে তুলেছিলেন। একসময় বাড়িটি ‘দৌলা দরবার শরিফ’ নামে পরিচিত হয়ে পড়ে আশেপাশের মানুষদের কাছে। গত কয়েকবছর ধরে এ কথিত পীরের আস্তানায় সপ্তাহে একদিন আনুষ্ঠানিকভাবে মুরিদরা ‘জিকির-আজকার’ করতেন। এ ছাড়াও প্রায়দিনই এই আস্তানায় কমপক্ষে শতাধিক মুরিদ জমায়েত হতেন এবং রাতভর চলতো জিকির।

প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, লোকজন জড়ো হওয়ার আগে ৬-৭ জন দুর্বৃত্ত দরবার শরিফে ঢুকে প্রথম ‘হুজুরকে’ চাকু দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে ও গলা কাটে। পরে গুলি করে হত্যা করে। এ সময় রূপালী বেগম চিৎকার করলে দুর্বৃত্তরা একই কায়দায় তাকেও পাশের আরেকটি ঘরে হত্যা করে।

দৌলা দরবার শরিফের খাদেম সায়েদুল বলেন, প্র্রতিদিন রাতে দরবারের জিকির ও মিলাদ হতো। জিকিরে অংশ নিতে সুমি (৫২) নামের এক মুরিদ রাতে দরবারে আসেন। দীর্ঘক্ষণ হুজুরকে (ফরহাদ) ঘুমিয়ে থাকতে দেখে তিনি আমাকে ডাক দেন। আমি এসে দেখি হুজুরের রক্তমাখা লাশ। পরে পরিবারের অন্যদের খোঁজ নিতে গিয়ে পাশের একটি কক্ষে গৃহকর্মী রুপালিকেও মৃত অবস্থায় দেখতে পাই।

ঘটনাস্থলে থাকা জেলা পুলিশ সুপার হামিদুল হক জানান জানান, পুলিশ এরই মধ্যে তদন্তে নেমে গেছে। সিআইডির সদস্যরা আলামত সংগ্র করছে।

নিহত কথিত পীর ফরহাদ হোসেন চৌধুরী (৫৫) ৬/৭ বছর আগে তিনি হঠাৎ দাঁড়ি রেখে জুব্বা আলখেল্লা পড়ে পীর আউলিয়া বনে যান। আস্থানা গাড়েন তার গ্রামের বাড়িতে। সেখানে একটি খানকা( দরবার শরীফ আস্থানা) গড়ে তুলেন। আশপাশ এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানের বিশ কিছু মুরিদ ও ভক্ত তৈরি হয় তার।