ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,নিজস্ব প্রতিনিধি, ১১ জানুয়ারি : ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট নেয়ার প্রস্তাব করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। আজ বুধবার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে সংলাপে ক্ষমতাসীন দল এই প্রস্তাব তুলে ধরে বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা।
আজ বিকালে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির দেড় ঘণ্টার সংলাপে এই প্রস্তাব রাখে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, এই আলোচনায় তারা মোট চারটি প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে আছে সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন, সংবিধানে নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে যে আইনের কথা বলা আছে, তা প্রণয়ন এবং নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বৃদ্ধি।
প্রসঙ্গত, আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হচ্ছে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ। তার আগেই নতুন নির্বাচন কমিশনের নিয়োগ দিতে হবে। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদই এই নিয়োগ দেবেন।
নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের বিষয়ে গত ১৮ ডিসেম্বর বিএনপির সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেন রাষ্ট্রপতি। ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে এই সংলাপ শেষ হলো।
উল্লেখ্য, দশম সংসদ নির্বাচনের আগেই আওয়ামী লীগ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে ভোট নেয়ার পক্ষে ছিল। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েট ভোট নেয়ার একটি যন্ত্রও আবিষ্কার করে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এবং কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে সেই যন্ত্রের ব্যবহারও করে। তবে বিএনপির আপত্তির মুখে নির্বাচন কমিশন দশম সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের চিন্তা বাদ দেয়।
আওয়ামী লীগ বলছে, এই যন্ত্রের মাধ্যমে ভোট নেয়া হলে জনগণের ভোটাধিকার আরও সুসংহত হবে। পাশাপাশি ব্যালটের অপচয় কমবে। ফলাফল ঘোষণার ক্ষেত্রে বিলম্বও কম হবে।
এর আগে, আজ বুধবার বিকাল চারটায় সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল বঙ্গভবনে যান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সভাপতিম্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, মোহাম্মদ নাসিম, আবুল মাল আবদুল মুহিত, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, এইচ টি ইমাম, ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, এম জমির, সাংগঠনিক সম্পাদক দিপু মণি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আইন বিষয়ক সম্পাদক আবদুল মতিন খসরু, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুর সোবহান গোলাপ।
আওয়ামী লীগের ৪ প্রস্তাব:
ক. গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ বিধান অনুযায়ী মহামান্য রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দান করবেন।
খ. প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে মহামান্য রাষ্ট্রপতি যে রূপ বিবেচনা করবেন, সেই প্রক্রিয়ায় তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ প্রদান করবেন।
গ. প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়েগের লক্ষ্যে সম্ভব হলে এখনই একটি উপযুক্ত আইন প্রণয়ন অথবা অধ্যাদেশ জারি করা যেতে পারে। সময় স্বল্পতার কারণে আগামী নির্বাচনে কমিশন পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে তা সম্ভব না হলে পরবর্তী নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের সময় যাতে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের নির্দেশনার আলোকে এখন থেকেই সেই উদ্যোগ গ্রহণ করা।
ঘ. সুষ্ঠু অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য বর্তমানে বিরাজমান সকল বিধি বিধানের সাথে জনমানুষের ভোটাধিকার অধিকতর সুনিশ্চিত করার স্বার্থে আগামী সংসদ নির্বাচনে ই-ভোটিংয়ের প্রবর্তন করা।
বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে আওয়ামী লীগের নেতারা বঙ্গভবন ছেড়ে যান। সন্ধ্যায় দলের সভাপতির ধানমন্ডি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এই সংলাপের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরবেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।