১৬ বছরের তরুণীর সঙ্গে ৭ পুরুষের বিয়ে দিয়েছে ‘আইএস’

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি,০৫ জানুয়ারী : নারীদের প্রতি ইসলামিক স্টেট জঙ্গিদের মনোভাব কারোর অজানা নয়। একদিকে চূড়ান্ত রক্ষণশীল মনোভাব নিয়ে নারীদের স্বাধীনতা হরণ, অন্যদিকে যৌনদাসী হিসেবে নারীদের একেবারে পণ্যের স্তরে নামিয়ে এনে সব ক্ষেত্রেই অতি উগ্রতার পরিচয় দিয়েছে আইসিস জঙ্গিরা। বিষয়টি আসলেই ঠিক কেমন তা জানার চেষ্টা করেছিলেন সাংবাদিক সুলোমে অ্যান্ডারসন। তিনি ইরাক ও সিরিয়ার আইসিস অধ্যুষিত অঞ্চলগুলিতে ঘুরে যে তথ্য সংগ্রহ করেছেন তা শিউরে ওঠার মতো।

আইসিসের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত কুর্দিস্তান রিজিওনাল গভর্নমেন্ট (কেআরজি)-এর বাহিনি পেশমার্গের হাতে সম্প্রতি ধরা পড়ে এক আইসিস নেতা। সে নাকি আইসিসের গুপ্তচর সংস্থার হয়ে কাজ করত। সুলোমে প্রথমে সেই জঙ্গি নেতার সাক্ষাৎকার নেন। তার সঙ্গে কথা বলে সুলোমে জানতে চেয়েছিলেন মহিলাদের প্রতি তার মনোভাব। জানতে চেয়েছিলেন, কী চোখে সে দেখে নিজের স্ত্রীকে।

জবাবে সেই আইএস নেতা বলেন, ‘‘আমার বউ আপাদমস্তক ঢেকে রাখে পোশাকে। আমাকে ছাড়া একা একা কোথাও তার যাওয়া একেবারে নিষেধ। এ জন্য তার খারাপ লাগার কোনও কারণ নেই। কারণ কে না জানে, মেয়েদের জন্মই হয় বিয়ে করা এবং বাচ্চার জন্ম দেওয়ার জন্য,’’।

পেশমার্গের হাতে যখন সে ধরা পড়ে, তখন ইরাকের হাওয়াইজা শহরে রয়ে গিয়েছিল তার স্ত্রী। তারপর কী পরিণতি হয়েছে তার স্ত্রীর, জানতে চান সুলোমে। নির্বিকার মুখে সেই জঙ্গি জানায়, ‘‘কে জানে, হয়তো শরিয়ত আইনে অন্য কোনও পুরুষ বিয়ে করেছে তাকে। আসলে যখন জিহাদ চলে তখন তো মেয়েরা জীবনযাপন করে না, শুধুমাত্র টিকে থাকে। ’’

আইএস এর এই যৌন নির্যাতনের সবচেয়ে বড় শিকার ইয়াজিদি নারীরা। ইয়াজিদিরা ধর্মীয় সংখ্যালঘু, তাছাড়া আইএস এর ধারণা, ইয়াজিদিরা শয়তান-পূজক। সে‌ই কারণেই যৌনদাসী হিসেবে ইয়াজিদি নারীদেরই ব্যবহার করে থাকে তারা। আইএস পুষ্ট ধর্মীয় যেসব নেতা রয়েছেন তারা অতি অল্প সময়ের জন্য বিবাহ দিচ্ছেন ইয়াজিদি নারীদের। ইয়াজিদিরা মনে করছেন, এটা আসলে নারীদের উপর যৌন নির্যাতন ও বহুগামিতার উপর একটি ধর্মীয় প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা মাত্র। মাত্র ১০ ডলারে যৌন দাসী হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে ইয়াজিদি মেয়েদের। তারপর সেই মেয়ের উপর চলছে যথেচ্ছ অত্যাচার।

কুর্দিশ ইরাকের দুহোক শহরে বসবাসরত এক নারীর সঙ্গে কথা বলেন সুলোমে। ফারিদা নামের সেই নারী জানান, ‘‘আমার বোনের বয়স মাত্র ১৬ বছর। কিন্তু এর মধ্যেই জঙ্গিরা জোর করে ৭ জন পুরুষের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছে ওর। এক এক স্বামী এক এক রাতে ধর্ষণ করে ওকে। আমি নিজেও পাঁচ জন পুরুষের সঙ্গে সহবাস করতে বাধ্য হয়েছি। এখানে ব্যাপারটা এরকম, একজন পুরুষ ইচ্ছেমতো একটি মেয়েকে বিয়ে করে ও ভোগ করে। তারপর কোনওদিন তার কোনও এক বন্ধু হয়তো বাড়িতে এসে পছন্দ করে ফেলল মেয়েটিকে। তখন মেয়েটি এবার হাতবদল হয়ে চলে গেল সেই বন্ধুর বিছানায়। ’’

কী ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা চলছে ইরাক ও সিরিয়ার আইএস অধ্যুষিত এলাকায় তা বোঝাতে গিয়ে ফারিদা বলেন, ‘‘আমি নিজের চোখে দেখেছি, একজন পুরুষ পরপর চারজন নারীকে ধর্ষণ করল। দেখেছি, স্তন্যপানরত শিশুকে মায়ের বুক থেকে কেড়ে নিয়ে ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে জঙ্গীরা। ’’

আর এসব কিছুই হচ্ছে ধর্মের অপব্যাখ্যার মাধ্যমে। সুলোমে সেই নির্মম সত্যটি তুলে ধরেছেন নিজের লেখায়। একটি ইংরেজি ওয়েব মিডিয়ায় সেই লেখা প্রকাশিত হলে গোটা বিশ্ব শিউরে উঠেছে সেই সত্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। এই যথেচ্ছাচার অবিলম্বে বন্ধ হোক, এটাই এখন প্রার্থনা সারা বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের।