ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),সাংবাদিক ইব্রাহীম মেঘনা থেকে,সোমবার ২৪ মার্চ ২০২৫ || চৈত্র ১১ ১৪৩১ :
কুমিল্লার মেঘনা উপজেলায় পূর্ব শত্রুতার জেরে কাউছার সরকার (৪০) নামে এক যুবককে কুপিয়ে দুই হাত-পায়ের রগ কেটে ফেলা হয়েছে। এর জের ধরে প্রতিপক্ষের বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে।
Advertisement
ঘটনায় উভয় পক্ষ মেঘনা থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে, যেখানে মোট ৪৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। শুক্রবার ও শনিবার রাতে মামলাগুলো দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মেঘনা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুজ্জামান।
অনুসন্ধানে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মেঘনার বড়কান্দা ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের মৃত আমির আলীর ছেলে জাকির হোসেন (৪৫) ও একই গ্রামের শাহজাহান সরকারের ছেলে কাউছার সরকার (৪০)-দুজনই ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি পদপ্রার্থী ছিলেন। এ নিয়ে কয়েকদিন আগে তাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনায় কাউছার, জাকিরকে মারধর করে রক্তাক্ত জখম করেন। এরই জেরে গত বুধবার (১৯ মার্চ) রাত সাড়ে সাতটার দিকে কাউছার সোনাকান্দা এলাকা থেকে আত্মীয়ের বাড়ি থেকে ফেরার পথে প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হন। হরিপুর গ্রামের ঈদগাহ মাঠের উত্তর পাশে সেলিম সাহেবের বাড়ির সংলগ্ন সড়কে তাকে একা পেয়ে কুপিয়ে দুই হাত-পায়ের রগ কেটে দেয় প্রতিপক্ষের লোকজন। গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে পঙ্গু হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন।
আহত কাউছারের বাবা শাহজাহান সরকার (৭০) শুক্রবার রাতে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও ১০-১২ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মেঘনা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। অন্যদিকে শনিবার রাতে জাকির হোসেনের মেয়ে জিয়াসমিন আক্তার বাদী হয়ে ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও ১০-১৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে আরেকটি মামলা করেন।
Advertisement
আহত কাউছারের বাবা শাহজাহান সরকার চিকিৎসকের বরাত দিয়ে জানান, তার ছেলের শরীরে ২৩৩টি সেলাই লেগেছে। এ কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি এবং ন্যায়বিচারের দাবি জানান।স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. জামাল উদ্দিন ও সাবেক ইউপি সদস্য মুকবুল হোসেন বলেন, ‘এটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যাচেষ্টা। জাকির ও তার লোকজন প্রতিপক্ষকে দমন করতে এ হামলা চালিয়েছে। আমরা এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।’
অভিযুক্ত জাকির হোসেন বলেন, ‘কয়েকদিন আগে কাউছার আমার ওপর হামলা চালিয়েছিল, যা থানায় বিচারাধীন ছিল। তবে বুধবার রাতে আমি এলাকায় ছিলাম না। পরে শুনেছি কাউছারের লোকজন আমার বাড়িতে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছে। এমনকি পরদিন বৃহস্পতিবার রাতেও একই ঘটনা ঘটিয়েছে।’
মেঘনা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুজ্জামান বলেন, ‘কাউছার ও জাকিরের মধ্যে পূর্বে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। তারই জেরে এই হামলা হয়েছে। আহত কাউছারের বাবা মামলা করেছেন, অপরদিকে জাকির হোসেনের মেয়ে আরেকটি মামলা করেছেন। আমরা উভয়পক্ষের অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে কাজ অব্যাহত রেখেছি।’ দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি মামলার জেরে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।
Advertisement
স্থানীয়দের আশঙ্কা, যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দ্রুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন তারা, যাতে নতুন করে কোনো রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ এড়ানো যায়।