আজ পবিত্র শবে মেরাজ (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ইসলাম প্রতিনিধি,সোমবার   ২৭ জানুয়ারি ২০২৫ ||  মাঘ ১৩ ১৪৩১ :

আজ পবিত্র শবে মেরাজ। দিবাগত রাতে মহান আল্লাহর কাছে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা রহমত ও ক্ষমা প্রার্থনা আর ইবাদত-বন্দেগি পালন করবেন। ইসলাম ধর্মে শবে মেরাজের গুরুত্ব অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এই মেরাজের মধ্য দিয়েই নামাজ মুসলমানদের জন্য ফরজ করা হয়। এ রাতেই প্রতিদিন পাঁচবার নামাজ আদায় করার বিধান নিয়ে আসেন প্রিয় নবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)।

Advertisement

শবে মেরাজ ফার্সি শব্দ। শব অর্থ রাত আর মেরাজ অর্থ ঊর্ধ্বারোহণ বা ঊর্ধ্বগমন। আরবিতে এ রাত্রিকে বলা হয় ‘লাইলাতুল মেরাজ’ মহিমান্বিত রজনি। এ রাতে দুনিয়া ও আখেরাতের সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক আল্লাহ তাআলার হুকুমে আল্লাহর প্রিয় নবী ও রসুল হযরত মুহাম্মদ সা. ঊর্ধ্বজগৎ ভ্রমণ করেন।

 

ইসলামের এক গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন শবে মেরাজ। হযরত মুহম্মদ সা. মেরাজের রাতে মহান আল্লাহ তাআলার সাক্ষাৎ লাভ করেছিলেন। তার উম্মতের জন্য নিয়ে এসেছিলেন বরকতময় ফরজ ইবাদত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। 
  

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোরআনে বলেন, পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাতে ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত। যার চারদিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি। যাতে আমি তাকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দিই। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল। (সুরা বনি ইসরাইল-১)

 

  

‘ইসরা’ অর্থ রাতে নিয়ে যাওয়া। আয়াতে মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত সফরকে ইসরা বলা হয়। আর সেখান থেকে আসমান পর্যন্ত যে সফর, তাই মেরাজ। এ আয়াতে ‘ইসরা’ আর মেরাজ কোরআন ও হাদিসের মাধ্যমে প্রমাণিত।

কোন দিবাগত রাত মেরাজের রাত এটা নিয়ে মতানৈক্য পাওয়া যায়। অনেকগুলো মত আছে। হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি রহ. ‘ফাতহুল বারিতে ৭/২৬০’ বলেন, শবে মেরাজ কবে এ সম্পর্কে দশটির অধিক মত রয়েছে।

  

কোন মাসে? রবিউল আউয়াল, রবিউল আখের, রজব, রমজান, শাওয়াল, জিলকাদ ও জিলহজসহ সাতটি মত রয়েছে। (আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩/১০৯, আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ, ১/২৭৩-৭৫) সবচেয়ে বেশি মত পাওয়া যায়, রজব মাসের ২৭ তারিখ দিবাগত রাতে এ অলৌকিক ঘটনা ঘটে।

 

এ রাতে জাগ্রত থেকে আল্লাহর ইবাদত তথা কুরআন তেলাওয়াত করা, অধিকহারে দরুদ পাঠ করা, নফল নামাজ পড়া যেতে পারে। কারণ এ রাতেই মহান আল্লাহ মহানবী সা. এর মাধ্যমে উম্মতের জন্য নামাজ ফরজ করেন। 
  

নবী করিম সা. বলেন, কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম নামাজের হিসেব হবে। তাই ফরজ নামাজ ঠিক রেখে নফল নামাজ যত বেশি পড়া যায় ততই আল্লাহর রহমতের ছায়াতলে ঠাঁই পাওয়া সহজ হবে। গ্রহণযোগ্য মত অনুযায়ী, আরবি রজব মাসের ২৭ তারিখ রাতে মহানবী পবিত্র হারাম শরিফ থেকে প্রথমে বাইতুল মুকাদ্দাসে যান। সেখানে দুই রাকাত নামাজে সব নবীর ইমামতি করেন।

 

পরে হযরত জিবরাইল আ. তাকে বিশেষ বাহন বোরাকের মাধ্যমে ঊর্ধ্বাকাশে নিয়ে যান। সিদরাতুল মুনতাহা হয়ে আরশে আজিমে আল্লাহ তায়ালার সাক্ষাৎ লাভ করেন, যা মেরাজের রাত নামে পরিচিত।

Advertisement

 
এ রাতে মহানবী জান্নাত ও জাহান্নাম নিজের চোখে দেখেছেন। মেরাজের রাতে মহানবীর মাধ্যমে বান্দাদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ উপহার দেন মহান আল্লাহ তাআলা। 

শবে মেরাজের শিক্ষা

 

হযরত মুহাম্মদ সা. ঊর্ধ্বজগৎ ভ্রমণ উম্মতের জন্য অনেক শিক্ষা রয়েছে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফজিলতের দিক দিয়ে ৫০ ওয়াক্ত নামাজের সমান। এটা মেরাজের রাত্রির ঘটনার মাধ্যমেই প্রমাণিত হয়।

 

সুরা বাকারার শেষের দুটি আয়াত মেরাজেই অবতীর্ণ হয়। এ আয়াতগুলোতে উম্মতে মুহাম্মদির প্রতি আল্লাহর অশেষ রহমত ও অনুগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে। উম্মতে মুহাম্মদির মধ্যে যারা কখনো শিরক করেনি, তাদের ক্ষমা করার সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে মেরাজে। নামাজে যে ‘আত্তাহিয়্যাতু’ পড়া হয়, সেটিও মেরাজের উপহার।
 
 
আল্লাহর রসুল সা. মেরাজ থেকে ফিরে আসর পর সুরা বনি ইসরাইলের ২২ থেকে ৩৭ নং আয়াতের মাধ্যমে ১৪ দফা জনগণের সামনে পেশ করেন
 
১. আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করো না, তাহলে তুমি নিন্দিত ও অসহায় হয়ে পড়বে। আর তোমরা কেবল আল্লাহরই ইবাদত করো (সুরা বনি ইসরাইল ২২) ২. বাবা-মার সাথে ভালো ব্যবহার করো। তাদের একজন বা উভয়ে বৃদ্ধ অবস্থায় যদি তোমাদের সামনে উপনীত হয় তাহলে তাদের সাথে উহ্ শব্দটি পর্যন্ত করো না। তাদের ধমকের সুরে জবাব দিয়ো না; বরং তাদের সাথে মর্যাদা সহকারে কথা বলো। আর তাদের সামনে বিনয়ী থেকো আর দোয়া করতে থাকো- ‘হে আমার প্রতিপালক, তাদের তেমনিভাবে লালনপালন করো, যেমনি তারা শৈশবে আমাদের লালনপালন করেছেন (সুরা বনি ইসরাইল ২৩-২৪)।
 
৩. তোমাদের কৃতকর্মের জন্য আল্লাহর কাছে তওবা করো, তাহলে আল্লাহ তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চই আল্লাহ তোমাদের মনের খবর জানেন (সুরা বনি ইসরাইল ২৫)।
 
৪. আত্মীয়স্বজনকে তাদের অধিকার দাও আর মিসকিন ও মুসাফিরদের হক আদায় কর (সুরা বনি ইসরাইল ২৬)। ৫. অপব্যয় করো না, নিশ্চয়ই অপব্যয়কারী শয়তানের ভাই, আর শয়তান স্বীয় প্রতিপালকের প্রতি অকৃতজ্ঞ (সুরা বনি ইসরাইল ২৭)। ৬. হকদারদের হক আদায়ে তুমি যদি অপারগ (অসমর্থ) হও তাহলে তাদের সাথে অত্যন্ত নম্রভাবে কথা বলো (সুরা বনি ইসরাইল ২৮)।
  

৭. ব্যয়ের ক্ষেত্রে বেহিসাবি হয়ো না, আবার কৃপণতাও প্রদর্শন কর না। আল্লাহ যাকে চান রিজিক বাড়িয়ে দেন, যাকে চান কমিয়ে দেন (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ২৯-৩০)। ৮. দারিদ্র্যের ভয়ে সন্তান হত্যা করো না। নিশ্চয়ই এটা মহাপাপ (সুরা বনি ইসরাইল ৩১)।

 

৯. জিনা-ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চই এটি নিকৃষ্ট ও গর্হিত কাজ (সুরা বনি ইসরাইল ৩২)। ১০. কোনো জীবনকে অন্যায়ভাবে হত্যা করো না। কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হলে তার উত্তরাধিকারীকে আমি এই অধিকার দিয়েছি (চাইলে রক্তের বিনিময় চাইতে পারে), তবে প্রতিশোধের ব্যাপারে সে যেন বাড়াবাড়ি না করে (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ৩৩)।
  

১১. এতিমের সম্পদের ধারের কাছেও যেও না। সম্পদের ব্যাপারে তার বয়ঃপ্রাপ্তি পর্যন্ত অপেক্ষা করো আর প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে সচেতন থাকো। নিশ্চয়ই প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে (সুরা বনি ইসরাইল ৩৪)। ১২. মেপে দেয়ার সময় পূর্ণ মাপে দিবে এবং ওজন করবে সঠিক দাঁড়ি পাল্লায়। এটিই উত্তম পন্থা এবং এর পরিণাম শুভ। (সুরা বনি ইসরাইল ৩৫)।

১৩. যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই সেগুলোর পেছনে লেগো না। নিশ্চয়ই চোখ, কান, অন্তর সব কিছুই জিজ্ঞাসিত হবে (সুরা বনি ইসরাইল ৩৬)। ১৪. জমিনে দম্ভসহকারে চলো না। তুমিতো কখনও জমীনে ফাটল ধরাতে পারবে না ও উচ্চতায় কখনও পাহাড় সমান হতে পারবে না। (সুরা বনি ইসরাইল ৩৭) এই ১৪ দফাই শবেমেরাজের প্রকৃত শিক্ষা।

Advertisement

 
আগামী বৃহস্পতিবার থেকে ১৪৪৬ হিজরি সনের পবিত্র রজব মাস গণনা শুরু হবে। এছাড়া আগামী ২৭ জানুয়ারি দিনগত রাতে পবিত্র শবে মেরাজ পালিত হবে।
এ রাতে জাগ্রত থেকে আল্লাহর ইবাদত তথা কুরআন তেলাওয়াত করা, অধিকহারে দরুদ পাঠ করা, নফল নামাজ পড়া যেতে পারে। ছবি: সংগৃহীত