তাহসান কীভাবে জিতলেন, প্রশ্ন তসলিমা নাসরিনের

SHARE

স্ত্রী রোজার সঙ্গে তাহসান, তসলিমা নাসরিন

য়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),তসলিমা নাসরিন,সোমবার   ০৬ জানুয়ারি ২০২৫ ||  পৌষ ২২ ১৪৩১ :

হঠাৎ বিয়ে করে হইচই ফেলে দিয়েছেন সংগীতশিল্পী-অভিনেতা তাহসান খান। তার স্ত্রীর নাম রোজা আহমেদ। পেশায় মেকআপ আর্টিস্ট। এ খবর প্রকাশ্যে আসার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছেন তাহসান-রোজা ও মিথিলা। নেটিজেনদের অনেকের দাবি— “বিয়ে করে জিতেছেন তাহসান খান।”

Advertisement

বাংলাদেশের নির্বাসিত লেখক তসলিমা নাসরিন ভারতে বসবাস করলেও তাহসানের বিয়ে নিয়ে যে আলোচনা চলছে, তা তার দৃষ্টিগ্রাহ্য হয়েছে। “তাহসানের জিতে যাওয়ার ব্যাপারটা”— মানতে নারাজ তিনি। এ নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন ‘লজ্জা’খ্যাত এই লেখক।

স্ট্যাটাসের শুরুতে তসলিমা নাসরিন বলেন, “ফেসবুক ছেয়ে গেছে ‘তাহসান জিতেছে তাহসান জিতেছে’ রবে। কেন তাহসান জিতেছে, বুঝে পেলাম না। সে একটা মেয়েকে বিয়ে করেছে বা করতে যাচ্ছে। এর মধ্যে জেতাজেতির কী হলো! হেটারোসেক্সুয়ালদের বিপরীত লিঙ্গে আকর্ষণ থাকে, তারা জীবনের কোনো এক সময় পছন্দসই কাউকে পেলে তার সঙ্গে প্রেম করে, লিভ-ইন করে বা তাকে বিয়ে করে। এটা তো স্বাভাবিক। তাহলে জিতল কেন তাহসান?”

Advertisement

নিজের প্রশ্নেরই ব্যাখ্যা করেছেন তসলিমা নাসরিন। তার মতে— “আসলে যারা ‘জিতেছে’, ‘জিতেছে’ বলে চেঁচাচ্ছে, তারা চেঁচাচ্ছে কারণ তারা মনে করেছে তাহসান এক বাচ্চার বাবা হয়েও, ডিভোর্সি হয়েও একটা ‘কচি সুন্দরী ভার্জিন মেয়ে’ পেয়েছে। মর্ত্যে বসে যত খুশি এবং যেভাবে খুশি নারী ভোগ করার পর স্বর্গে গিয়ে সঙ্গমের জন্য ভার্জিন হুর পেয়ে যাওয়াকে মুসলমানরা ‘জিতে যাওয়াই’ মনে করে। কিন্তু রোজা আহমেদ রক্ত-মাংসের মানুষ, হুর নয়, খুব সম্ভবত ভার্জিনও নয়। রাজকন্যার জীবন তার ছিল না, খুব স্ট্রাগল করেছে জীবনে। দারিদ্রের বিরুদ্ধে দীর্ঘ দীর্ঘ দিন সংগ্রাম করে একটি মেয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে। কঠিন সংগ্রামের দিনগুলোয় নিজের লক্ষ্যে স্থির ছিল বলে, নিজের স্বপ্ন যে করেই হোক পূরণ করতে চেয়েছিল বলে নারীবিদ্বেষী সমাজ রোজাকে কম নিন্দে করেনি, কম অপমান করেনি, কম অপদস্থ করেনি। মিথিলার বিরুদ্ধেও কম কুৎসা রটায়নি এই সমাজ।”

যারা বলছেন, মিথিলা-রোজা হেরে গেছেন, তাদের উদ্দেশ্যে তসলিমা নাসরিন বলেন, “তাহসান জিতেছে, এই নিয়ে সবাই উল্লাস করছে। নারীবিদ্বেষী সমাজে সব পুরুষই জেতে। সর্বক্ষণ জেতে। তাদের হার নেই। হারতে হয় শুধু নারীকেই। কিন্তু আমি কি মনে করি মিথিলা বা রোজা হেরেছে? না। তারা একটুও হারেনি। তারা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রথা ভেঙে নিজের যোগ্যতায় স্বর্নিভরতা এবং স্বাধীনতা অর্জন করেছে। নারীবিদ্বেষী সমাজে নারীর জিতে যাওয়ার প্রথম শর্তই এটি। তারা ভ্রুক্ষেপ করছে না লোকের কুৎসা বা নিন্দের, এ জিতে যাওয়ার দ্বিতীয় শর্ত। ভাল না লাগলে তারা তাদের সঙ্গীকে, সে প্রেমিক হোক বা স্বামী হোক, ত্যাগ করতে পারছে, তারা বাধ্য নয় তাদের সঙ্গে এক ছাদের তলায় বাস করতে, জিতে যাওয়ার এটি তৃতীয় শর্ত।”
তাহসানের স্ত্রী রোজার সাহস তার স্বনির্ভরতা। এ তথ্য স্মরণ করে তসলিমা নাসরিন বলেন, “স্বামীর আচার ব্যবহার যদি পছন্দ না হয় রোজার, তার স্বনির্ভরতাই তাকে সাহস জোগাবে স্বামীকে ত্যাগ করার, মাথা উঁচু করে একা বাঁচার। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষের জেতা কোনো চ্যালেঞ্জ নয়। নারীর জন্যই এ চ্যালেঞ্জ। দুই নারীই তিন শর্তের চ্যালেঞ্জে জিতেছে। চ্যালেঞ্জহীন জয়ের চেয়ে চ্যালেঞ্জপূর্ণ জয় ঢের বেশি গৌরবময়। জয়তু নারী।”

Advertisement