ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),বিনোদন প্রতিনিধি,সোমবার ০৬ জানুয়ারি ২০২৫ || পৌষ ২২ ১৪৩১ :
প্রেমের কারণেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের নামকরা অভিনেতা প্রবীর মিত্র। বিষয়টি তার মৃত্যু খবর ছড়িয়ে পড়ার পর আবার সামনে এসেছে। কারণ, মুসলমান হলেও তিনি প্রবীর মিত্র নামেই পরিচিত। তার জানাজা হবে- এই খবরেই মূলত প্রশ্নের জন্ম; শেষ পর্যন্ত তিনি আসলে কোনো ধর্মের অনুসারী ছিলেন?
Advertisement
তবে প্রবীর মিত্রের ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে কোনো বিভ্রান্তি নেই বলে জানিয়েছেন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর। তার দেওয়া তথ্যমতে, প্রবীর মিত্র মুসলমান হয়েছিলেন, ইসলাম ধর্ম মতেই তার জানাজা ও দাফন হবে।
এর আগে ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি)কে মিশা সওদাগর বলেন, সোমবার (৬ জানুয়ারি) দুপুরে এফডিসিতে আনা হবে প্রবীর মিত্রের মরদেহ। সেখানে শ্রদ্ধা জানানো শেষে প্রথম জানাজা হবে।
রবিবার রাত ১০টা ১০ মিনিটের দিকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন প্রবীর মিত্র। তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।
শিল্পী সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য সানি রহমান ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি)কে বলেন, এফডিসি থেকে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে নেওয়া হবে প্রবীর মিত্রের মরদেহ, সেখানে দ্বিতীয় জানাজা হবে; তারপর আজিমপুর কবরস্তান দাফন করা হবে।
প্রবীর মিত্রের ধর্মমতের বিষয়ে মিশা সওদার বরেন, প্রবীর মিত্র ভাই মুসলামনই ছিলেন। ধর্মমতে তার জানাজা এবং দাফন হবে।
অবশ্য বেঁচে থাকা অবস্থায় এক সাক্ষাৎকারে প্রবীর মিত্র নিজেই তার ধর্মান্তির হওয়ার ঘটনার বর্ণনা দিয়েছিলেন, সাফ বলেছিলেন- তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। সে সময়ের এক ভিডিওতে প্রবীর মিত্রকে বলতে শোনা যায়, “আমি তো কনভার্ট হয়েই ওর মাকে (স্ত্রী) বিয়ে করেছিলাম। তখন মুসলমান হয়েছিলাম। তখন প্রয়োজন হয়েছিল মুসলমান হওয়া, এখনো সে ধর্মেই আছি।”
ইসলাম গ্রহণের সময় প্রবীর মিত্র তার নামও বদলে ফেলেন; ‘হাসান ইমাম’ নাম গ্রহণ করেন। তবে আমৃত্যু চলচ্চিত্রে পরিচিতি পাওয়া প্রবীর মিত্র নামেই তাকে ডেকেছে দেশের মানুষ।
Advertisement
ওই সাক্ষাৎকারে ধর্মান্তর প্রসঙ্গেও কথা বলেছিলেন তিনি। তার কাছে জানতে চাইলে নির্দ্বিধায় তিনি বলেছিলেন, “বিয়ের সময় কনভার্ট হয়েই বিয়ে করেছিলাম। তবে ধর্ম নিয়ে আমার কোনো বাড়াবাড়ি নাই। সবার উপরে মানুষ সত্য তার উপরে নাই। মানুষ সবার উপরে।”
প্রবীর মিত্রের সেই প্রিয়তমা স্ত্রীর নাম অজান্তা মিত্র, যিনি ২০০০ সালে মারা যান। তাদের তিন ছেলে- মিথুন মিত্র, সিফাত ইসলাম, সামিউল ইসলাম। এক মেয়ে ফেরদৌস পারভীন। চার সন্তানের মধ্যে সামিউল মারা গেছেন।
শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় রবিবার (৫ জানুয়ারি) আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয় প্রবীর মিত্রকে। এর আগে ১৩ দিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
গত ২২ ডিসেম্বর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় প্রবীর মিত্রকে। শরীরে অক্সিজেন পাচ্ছিলেন না। এরপর আইসিইউতে নেওয়া হয় তাকে। সেখান থেকে কেবিনে দেওয়া হয়েছিল। তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি; ক্রমেই খারাপ অবস্থার দিকে যান। ব্লাড লস হয়, প্লাটিলেটও কমে যায়।
১৯৪৩ সালের ১৮ আগস্ট কুমিল্লার চান্দিনায় জন্মগ্রহণ করেন প্রবীর মিত্র। পুরান ঢাকায় বড় হওয়া প্রবীর মিত্র স্কুলজীবনে নাট্যচর্চার সঙ্গে যুক্ত হন। স্কুলজীবনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে অভিনয় করে খ্যাতি অর্জন করেন। ১৯৬৯ সালে প্রয়াত এইচ আকবরের ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রথম প্রবীর মিত্র ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান। যদিও চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় ১৯৭১ সালের ১ জানুয়ারি।
Advertisement
ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে প্রবীর মিত্র ‘নায়ক’ হিসেবে কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। এরপর চরিত্রাভিনেতা হিসেবে কাজ করেও তিনি পেয়েছেন দর্শকপ্রিয়তা। ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘জীবন তৃষ্ণা’, ‘সেয়ানা’, ‘জালিয়াত’, ‘ফরিয়াদ’, ‘রক্ত শপথ’, ‘চরিত্রহীন’, ‘জয় পরাজয়’, ‘অঙ্গার’, ‘মিন্টু আমার নাম’, ‘ফকির মজনু শাহ’, ‘মধুমিতা’, ‘অশান্ত ঢেউ’, ‘অলংকার’, ‘অনুরাগ’, ‘প্রতিজ্ঞা’, ‘তরুলতা’, ‘গাঁয়ের ছেলে’, ‘পুত্রবধূ’সহ চার শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।
প্রবীর মিত্র ও তার স্ত্রী অজান্তা মিত্র।