ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),মাদারীপুরের কালকিনি প্রতিনিধি, শুক্রবার ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ || পৌষ ১২ ১৪৩১ :
মাদারীপুরের কালকিনিতে আধিপত্য বিস্তার, গ্রাম্য দলাদলি আর চেয়ারম্যান-মেম্বার দ্বন্দ্বে ইউপি আতাউর রহমান আক্তার শিকদার, তার ছেলে মারুফ শিকদার ও তার সহযোগী সিরাজ চৌকিদারকে কুপিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠেছে একই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান সুমনের লোকজনের বিরুদ্ধে।
Advertisement
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) ভোরে উপজেলার বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের খাসেরহাট ব্রিজের নিচে এই ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। ফলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা রয়েছে।
নিহতরা হলেন- বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের মতি শিকদারের ছেলে ও ইউপি সদস্য আতাউর রহমান আক্তার শিকদার (৪৪), আক্তারের ছেলে মারুফ শিকদার (২২) ও আক্তার মেম্বারের অনুসারী খুনেরচর গ্রামের রশিদ চৌকিদারের ছেলে সিরাজ চৌকিদার (২৫)।
এসময় ঘটনায় হামলাকারীরা এলাকায় আতঙ্ক ছড়াতে শতাধিক ককটেল ও হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। পরে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র্যাব ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান সুমন কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য ও স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাছিমের অনুসারী। অপরদিকে আতাউর রহমান আক্তার শিকদার বাঁশগাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। এরা দু’জনই স্বৈরাচার হাসিনা সরকার পতনের পরে এলাকা ছেড়ে ঢাকায় বসবাস করতেন।
স্থানীয় লোকজন, পুলিশ ও প্রশাসনের সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ বছর ধরে বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান সুমনের সঙ্গে একই ইউনিয়নের মেম্বার আতাউর রহমান আক্তার শিকদারের আধিপত্য নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। তারই জেরে তিন দিন আগে আক্তার শিকদারের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে বাড়ি-ঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় সুমনের লোকজন। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা থেকে বাড়িতে আসেন আক্তার শিকদার, তার ছেলেসহ কয়েকজন অনুসারী। রাতে আক্তার তার বোনের বাড়িতে অবস্থান করে। বিষয়টি জানতে পেরে শুক্রবার ভোরে সুমনের লোকজন অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আক্তার, তার ছেলে ও তার অনুসারীদের ধাওয়া করে আড়িয়াল খাঁ নদীর পাড়ে খাসেরহাট ব্রিজের নিচে নিয়ে যায়। সেখানে তাদেরকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মৃত নিশ্চিত করে। এসময় হামলাকারীরা আতঙ্ক সৃষ্টি করতে শতাধিক ককটেল ও হাতবোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়।
পরে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী এসে আক্তার শিদকার ও তার ছেলে মারুফ শিকদারের মরদেহ উদ্ধার করে। এঘটনায় মুমূর্ষু অবস্থায় আক্তারের অনুসারী সিরাজ চৌকিদারকে কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথে মারা যায়। পুলিশ মরদেহগুলো উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মাদারীপুর মর্গে পাঠায়।
Advertisement
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নিহত আক্তারের বাড়িতে ধ্বংসলীলায় পরিণত হয়েছে। বাড়িতে আগুনের ধোয়া উড়ছে। ঘরের কোনো স্থাপনা নেই, সব ভেঙে দেয়া হয়। বাড়িতে কোনো লোকজন নেই। আতঙ্ককে পুরুষ শূন্য হয়েছে এলাকা। শুক্রবার হলেও আক্তারের বাড়ির সামনে অবস্থিত দক্ষিণ বাঁশগাড়ী জামে মসজিদে দেখা যায়নি কোনো মুসল্লির।
এ ব্যাপারে নিহত আক্তার শিকদারের বাবা মতি শিকদার বলেন, ‘আমার ছেলে তার ছেলেকে নিয়ে পোড়া বাড়ি-ঘর দেখতে আসছিল। খবর পেয়ে ভোরে সুমনের লোকজন আমার ছেলে ও নাতিকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। দীর্ঘদিন ধরে সুমন আমাদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন করে আসছে। তার প্রভাব ছড়াইতেই আমার পরিবারকে শেষ করে দিলো।’
আক্তারের বোন মুন্নি আক্তার বলেন, আমার ভাই সুমনের ভয়ে দীর্ঘদিন ধরে স্বপরিবারে ঢাকাতে বসবাস করে। বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দেয়ার খবর শুনে বাড়িতে আসছিল। কিন্তু সুমনের লোকজন তাদের বাঁচতে দিলো না। নির্মমভাবে কুপিয়ে খুন করলো। আমার একটি মাত্র ভাই ও তার ভাতিজাকে বাঁচতে দিলো না। আমি এই হত্যাকারীদের বিচার চাই।’
অভিযোগের বিষয় চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান সুমনের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যক্তিগত মুঠোফোনও বন্ধ পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘দীর্ঘদিনের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে তিন জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় দোষীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Advertisement
তিনি আরো বলেন, স্থানীয় রাজনৈতিক বিরোধের জের ধরে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। তারই ফলে এ নৃশংস হত্যা হয়েছে বলে ধারণা করছি।
মাদারীপুরে চেয়ারম্যান-মেম্বার বাহিনীর দ্বন্দ্বে তিনজন খুন হয়েছেন। ছবি: ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি)