ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি .শনিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ || পৌষ ৬ ১৪৩১ :
মা আর ভালোবাসার মানুষটিকে কাঁদিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তরুণ মুক্তিযোদ্ধা তানেসউদ্দীন। কথা ছিলো যুদ্ধ শেষে ফিরে এসেই ভালোবাসার মানুষটির সাথে ঘর বাঁধবেন। কিন্তু তা আর হলো না। মুক্তিযোদ্ধা তানেসের জীবনেও আর কেউ এলো না। ৫৩ বছর ধরে বুক পকেটে প্রিয় মানুষটির ছবি নিয়ে ঘুরে বেড়ান মুক্তিযোদ্ধা তানেস উদ্দিন আহমেদ।
Advertisement
তিনি যেনো ৭৮ বছরের তাজা তরুণ। গান গেয়ে যান সেই মানুষটিকে ভেবে। যদিও স্বাধীন দেশে স্বপ্নের সেই মানুষটিকে ঘিরে তার আর ঘর বাঁধা হয়নি। যুদ্ধকালে নিশিরাতে ক্যাম্পে শুয়ে চাঁদ দেখতে দেখতে ভালোবাসার মানুষ জোহরার কথা ভাবতেন। গাইতেন, ‘নিশি রাত বাঁকা চাঁদ …’।
যুদ্ধ শেষে হারিয়ে যান জোহরা। তানেসেরও আর ঘর বাঁধা হয়নি। নিজের সংসার না হলেও পুরো গ্রামটিই এখন তার সংসার।
মেঘনা পাড়ে হাঁটতে হাঁটতে তানেসের সেই দ্রোহ আর প্রেমের গল্প শুনছিলেন প্রতিবেদক। ফিরে গিয়েছিলেন সেই ১৯৬৭ সালে! তানেসউদ্দিন বলছিলেন, স্বপ্নে আজও তাকে দেখি। জোহরার মতো সুন্দর আমার কখনো কাউকে লাগেনি। আর লাগার প্রশ্নই ওঠে না। ১৯৬৭ সালে ঢাকার বোম্বে স্টুডিও থেকে জোহরার সাদাকালো ছবিটি তোলা। সেই থেকে ছবিটি তানেসউদ্দিনের পকেটে। যা আজও তার সঙ্গী।
কীভাবে ভালোবাসা এতো গভীর হলো?
মেঘনার পাড়ে হাঁটতে হাঁটতে তানেসউদ্দিন জানালেন ১৯৬৪ সালের সেই গল্প। তানেসউদ্দিন আহমেদ তখন ক্লাস টেনে পড়তেন। ফুফাতো বোন জোহরার সঙ্গে তার প্রেম। জোহরা পড়তেন এইটে।
তানেসউদ্দিনের আত্মীয়ের বিয়ের এসেছিলেন জোহরা। সেই সময় বন্ধুর সহায়তায় ভালোবাসার কথা জানিয়ে চিঠি দেন তানেস। এরপর এক কিশোরের অপেক্ষা আর ভয়, যদি সবাই জেনে যায়। জোহরার মৃদু সম্মতি সাহসী করে সেই কিশোরকে।
চলে চিঠির লেনদেন। অবশ্য, শুরুতে জোহরা চিঠির উত্তর দিতেন না। কিন্তু একপক্ষের এই চিঠি লেখায় অধৈর্য হয়ে একসময় প্রতিউত্তর দাবি করেন তানেসউদ্দীন। শুরু হয় জোহরার কাছ থেকে উত্তর আসা।
মেঘনার অন্য পাড়ে ছিলো জোহরার বাড়ি। জোহরার সঙ্গে দেখা করার জন্য প্রায়ই সন্ধ্যায় তানেসকে মেঘনা নদী পার হতে হতো নৌকায় করে। একবার নৌকার অভাবে উত্তাল মেঘনা নদী সাঁতরে ভালোবাসার মানুষ জোহরার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন তানেসউদ্দীন। ভালোবাসার জন্য যেনো সব করতে পারতেন সেই ছেলেটি।
Advertisement
৭১ -এ একটি মৌলিক প্রশ্নের মুখোমুখি তানেস। দেশের জন্য ভালোবাসা নাকি প্রেমিকার জোহরার জন্য থেকে যাওয়া? সেই প্রশ্নে জয়ী হলো দেশ। জোহরার আপত্তি উপেক্ষা করে চোখের জলে যুদ্ধে গিয়েছিলেন তরুণ মুক্তিযোদ্ধা তানেস। শুধু বলেছিলেন, ‘অপেক্ষা কইরো, ফির্যা আসবো।’
রণাঙ্গনে, ক্যাম্পে জোছনা রাত, নিশিরাত আর বাঁকা চাঁদ তানেসউদ্দীনকে জোহরার কথা মনে করিয়ে দিতো। স্বপ্ন দেখতেন যুদ্ধ শেষেই ভালোবাসার ঘর বাঁধবেন। দেশ হলো। কিন্তু তানেসউদ্দীনের সেই ঘর আর হলো না।
Advertisement
সেই থেকে ৫৩ বছর ধরে প্রেমিকা জোহরার ছবি বুক পকেটে নিয়ে বেঁচে আছেন তানেসউদ্দিন। এখনো তিনি বাংলার অপরূপ রূপ আর মেঘনার কোল জুড়ে খুঁজে ফেরেন জোহরাকে।
ছবি: একাত্তর