ভারতে আলোচনায় আ.লীগের ৪ নেতা: ‘ধর্ষণ নয়’, অভিযোগ ‘অন্য’ (ভিডিও)

SHARE

য়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),বিশেষ প্রতিনিধি,বুধবার   ১১ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ২৬ ১৪৩১ :

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার নিউটাউন থেকে গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগের পলাতক চার নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই দুই দিন পর জানা যাচ্ছে অন্য কিছু।

Advertisement

গ্রেপ্তার করে রবিবার চারজনকে বারাসাত আদালতে আনা হলে আদালতটির সরকারি আইনজীবী এ. জামান বলেছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ একটি মামলা রুজু হয়েছে।

এই চারজনের বিষয়ে মঙ্গলবার বিবিসি বাংলা কথা বলেছে মেঘালয় পুলিশের মহাপরিচালক ইদাশিশা নংরাং এর সঙ্গে।  তিনি বলেছেন, মেঘালয়ে ধর্ষণের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে যে খবর রটেছে, সেটি সঠিক নয়।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর দলটির অনেক নেতাকর্মী ভারতে পালিয়ে গেছেন বলে খবর রয়েছে।

মেঘালয়ের ঘটনায় গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগের চার নেতা হলেন- সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খান, সিলেট মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান (মুক্তি), সহসভাপতি আবদুল লতিফ (রিপন) ও সদস্য ইলিয়াস হোসেন (জুয়েল)।

মূলত এই চারজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগের খবর ছড়িয়ে পড়ে বারাসাত আদালত থেকে। ভারত ও বাংলাদেশের গণমাধ্যমে খবরটি প্রকাশ পায়।

বারাসাত ও কলকাতা আদালত  
মেঘালয় পুলিশের বক্তব্যের বিষয়ে মঙ্গলবার বারাসাত আদালতের সরকারি আইনজীবী এ. জামান বলেন, “রবিবার বারাসাত আদালতে যখন অভিযুক্ত চারজনকে আনা হয়, তখন তাদের বিরুদ্ধে গণধর্ষণের অভিযোগের একটি কেস ডাইরি জমা করা হয়।

তিনি বলেন, “সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকায় বারাসাতের স্পেশাল ক্রিমিনাল কোর্টে তাদের তোলা হয়। কিন্তু আইনজীবীদের একটা স্পোর্টস ইভেন্ট থাকায় বিচারক উপস্থিত ছিলেন না। এ সময় ভারতীয় আইন অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শিলংয়ের স্থানীয় আদালতে অপরাধীদের হাজির করা হবে এমন আশ্বাসে ট্রানজিট রিমান্ড না নিয়েই তাদের মেঘালয়ের শিলংয়ে নিয়ে যায় রাজ্যটির পুলিশ।”

 

বরিবারের ঘটনাবলির বিষয়ে আইনজীবী এ. জামান বলেন, “কলকাতা থেকে যাওয়ার সময় যে কেস (মামলা) আদালতে জমা করেছিলেন সেখানকার পুলিশ, সেটিও তারা উইথড্র (তুলে নিয়ে) করে নিয়ে যায়।”

“এখন মেঘালয়ের আদালতে তারা কীভাবে কেস সাজাচ্ছে, সেটা আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব নয়,” যোগ করেন এ. জামান।

 

এদিকে পরিচয় গোপন রাখার শর্তে কলকাতার অবস্থানরত একাধিক আওয়ামী লীগ নেতাও দাবি করেছেন, গ্রেপ্তার চারজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ঠিক নয়; তাদের অন্য অভিযোগে ধরা হয়েছে।

কলকাতায় পালিয়ে থাকা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা হলে তারা উল্টো অভিযোগ করেন, শিলং পুলিশের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে বিএনপির একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা নাসির উদ্দিন খান ও আলম খান মুক্তিকে ফাঁসাতে চাইছেন। প্রাথমিকভাবে কলকাতার আদালতে তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছিল, তাতে তাদের জামিন খুব সহজেই হয়ে যেত। কিন্তু এখন যে মামলায় তাদের ফাঁসানো হয়েছে, তাতে ডাকাতি, খুনের হুমকি, অস্ত্র আইন ও অবৈধ অনুপ্রবেশ- এই চারটি ধারাতেই অভিযোগ আনা হচ্ছে। এসব ধারা ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুযায়ী জামিন অযোগ্য।

Advertisement

 

মেঘালয় পুলিশের ভাষ্য
ভারতের উত্তরপূর্বে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাজ্য মেঘালয়ের পুলিশ বলছে, ভারতে পালিয়ে থাকা চারজন বাংলাদেশিকে কলকাতা থেকে তারা গ্রেপ্তার করে নিয়ে এসেছেন। তারা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

বিবিসি বাংলা তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে, তাদের বিরুদ্ধে মেঘালয়ে ধর্ষণের অভিযোগ আছে বলে যে খবর রটেছে, তা ‘সঠিক নয়’।  বিষয়টি মেঘালয় পুলিশের মহাপরিচালক ইদাশিশা নংরাংই বিবিসিকে বলেছেন।

মেঘালয়ের স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে বিবিসি লিখেছে, ডাউকি সীমান্তে ট্রাক চালকদের সঙ্গে অক্টোবর মাসে হাতাহাতির ঘটনায় অভিযুক্ত হয়েছেন গ্রেপ্তার চারজন।
কলকাতা লাগোয়া বিধাননগর পুলিশের সহায়তায় মেঘালয় পুলিশ ওই চারজনকে রবিবার গ্রেপ্তার করে।

বিধাননগর পুলিশের সূত্রের বরাত দিয়ে বিবিসি আরও লিখেছে, ৫ অগাস্টের পরে তারা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারতের মেঘালয়ে বসবাস করছিলেন বলে মেঘালয় পুলিশের কাছ থেকে তারা জানতে পেরেছে।

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ডাউকি থানার একটি মামলায় অভিযুক্ত ওই চারজন কলকাতা লাগোয়া নিউটাউন এলাকার একটি আবাসনে আশ্রয় নিয়েছিলেন। রবিবার সেখান থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে শিলংয়ে আনা হয়েছে বলে মেঘালয় পুলিশ দাবি করেছে।

মেঘালয় পুলিশের মহাপরিচালক নংরাং বলেছেন, “ওই চারজনের বিরুদ্ধে ডাউকি থানার একটা মামলা ছিল। কোনো ধর্ষণের অভিযোগ নেই তাদের বিরুদ্ধে। ডাউকি থানায় তাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার চারটি ধারা এবং বিদেশি আইনের ১৪ নম্বর ধারায় অভিযোগ ছিল। সেই মামলাতেই কলকাতা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে আনা হয়েছে।”

যেসব ধারায় ধৃত চারজনের বিরুদ্ধে মামলা আছে, সেগুলো মূলত অস্ত্র দিয়ে হামলা (আগ্নেয়াস্ত্র নয়), হামলার জন্য জমায়েত হওয়া, এক লাখ টাকার কম পরিমাণ আর্থিক ক্ষতিসাধনের মতো অভিযোগ। এ ছাড়া অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের মামলাও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

তবে সোমবার ভারতের সংবাদমাধ্যম জিনিউজ জানায়, আওয়ামী লীগ নেতারা সিলেট থেকে পালিয়ে শিলংয়ে অবস্থান করার সময় তাদের আবাসস্থলে একটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী বাদী হয়ে শিলং থানায় ছয়জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হলেও আরো দুজন আসামি পলাতক রয়েছেন। তারা হলেন সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফসর আজিজ ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু দাশ মিটু।

Advertisement

লেট সিটি করপোরেশনের অপসারিত মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সহকারী যুবলীগ নেতা সাজলু লস্কর ফেসবুকে এ প্রসঙ্গে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি দাবি করেন ধর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেনি। মূলত ভারতে অবস্থানকালে পুলিশকে অবহিত না করা সংক্রান্ত জটিলতায় গ্রেপ্তার হয়েছেন এই চার নেতা।

নাসির উদ্দিন খান, ইলিয়াস আহমদ জুয়েল, আলম খান মুক্তি, আব্দুল লতিফ রিপন