সাংবাদিকতা কি শুধুই পরিচয়ের মোহ, নাকি দায়িত্বশীলতার প্রতীক?

SHARE

য়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),মো. ইব্রাহীম খলিল মোল্লা মেঘনা থেকে,শনিবার   ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ২২ ১৪৩১ 

সাংবাদিকতা শুধুমাত্র একটি পেশা নয়; এটি সমাজে সত্য প্রকাশের একটি মহান দায়িত্ব। গণমাধ্যমের মাধ্যমে জনগণের সামনে অপরাধ, দুর্নীতি ও বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরাই প্রকৃত সাংবাদিকতার মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু বর্তমান সময়ে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে নিজেদের “সাংবাদিক” হিসেবে পরিচয় দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। এ ধরনের কার্যকলাপ শুধু বিভ্রান্তিকরই নয়, বরং প্রকৃত সাংবাদিকতার নীতির বিরুদ্ধেও যায়।

Advertisement

একজন প্রকৃত সাংবাদিক পত্রিকা, টেলিভিশন, অনলাইন নিউজ পোর্টাল বা কোনো স্বীকৃত গণমাধ্যমে কাজ করেন। সংবাদ সংগ্রহ, যাচাই-বাছাই ও জনস্বার্থে রিপোর্ট প্রকাশ এবং মানুষের অধিকার রক্ষায় ভূমিকা পালন করা সাংবাদিকতার মূল কাজ। একজন প্রকৃত সাংবাদিক তার কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জন্য সর্বদা দায়বদ্ধ।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে কেউ সহজেই মতামত প্রকাশ করতে পারে। এটাই বাকস্বাধীনতার অংশ। কিন্তু সমস্যা তখনই তৈরি হয়, যখন কিছু ব্যক্তি ফেসবুকে নিজেদের “সাংবাদিক” হিসেবে পরিচয় দিতে শুরু করেন, অথচ কোনো গণমাধ্যমে তাদের সংবাদ প্রকাশিত হয় না। গণমাধ্যমে কাজ না করেও তারা “সাংবাদিক” পরিচয়ে সমাজে চলাফেরা করেন। এই ধরণের ব্যক্তিরা নিজেদের স্ট্যাটাস বা মতামতকে সংবাদ বলে দাবি করেন। এতে সাংবাদিকতা পেশার প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হয়। প্রকৃত সাংবাদিকদের সঙ্গে তাদের বিভ্রান্তিকর পরিচয় মিলে যাওয়ায়, জনগণ প্রকৃত সাংবাদিকদের প্রতিও সন্দেহ করতে শুরু করে।

পত্রিকা – টেলিভিশন বা অনলাইন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ একজন সাংবাদিকের কাজের প্রামাণ্য দলিল। এই সংবাদগুলো সংরক্ষিত থাকে এবং ভবিষ্যতে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যায়। অন্যদিকে ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাস বা পোস্টকে প্রাতিষ্ঠানিক সংবাদ হিসেবে গণ্য করা যায় না। প্রকৃত সাংবাদিকদের কাজের স্বীকৃতি পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদেই পাওয়া যায়।

যাদের কোনো পত্রিকা বা স্বীকৃত গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয় না, অথচ তারা নিজেদের “সাংবাদিক” পরিচয় দেন, তাদের নিয়ে জনমনে প্রশ্ন ওঠে। কারণ প্রকৃত সাংবাদিকদের কাজ শুধুমাত্র পরিচয় বহন করা নয়, বরং জনস্বার্থে নিরপেক্ষ সংবাদ তুলে ধরা।

Advertisement

বর্তমান সময়ে দেখা যাচ্ছে, কেউ কেউ বড় পত্রিকার আইডি কার্ড সংগ্রহ করে নিজেদের “বড় সাংবাদিক” পরিচয়ে পরিচিতি তৈরি করছেন। যদিও তাদের আসল কাজ পত্রিকায় সংবাদ পরিবেশন করা। কিন্তু দুই-চার বছরেও তার পত্রিকায় সংবাদ দেখা যায় না! তবে তারা বিভিন্ন সরকারি বা বেসরকারি দফতরে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করার জন্য “সাংবাদিক” পরিচয় ব্যবহার করে থাকেন। এর ফলে একদিকে প্রকৃত সাংবাদিকতার নীতি লঙ্ঘিত হয়, অন্যদিকে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা চাপের মুখে থাকেন। এ ধরনের ভুয়া সাংবাদিকদের কারণে সরকারি কর্মকর্তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন না। কারণ, এই ভুয়া সাংবাদিকরা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা আদায়ের জন্য কর্মকর্তাদের ওপর প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেন।

এই প্রবণতার নেতিবাচক প্রভাব নিন্মে কিছুটা তুলে ধরা হয়েছে। যেমনঃ-

১. গণমাধ্যম পেশার অবমূল্যায়ন: প্রকৃত সাংবাদিকদের সঙ্গে ভুয়া সাংবাদিকদের পার্থক্য বোঝা কঠিন হয়ে যায়।

২. প্রশাসনে বাধা সৃষ্টি: সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর মিথ্যা প্রভাব বিস্তার করে কাজে বাধাগ্রস্ত করা হয়।

৩. গুজব ও ভুয়া তথ্য ছড়ানো: প্রকৃত সংবাদ ও গুজবের পার্থক্য অস্পষ্ট হয়ে যায়।

৪. জনমনে বিভ্রান্তি: জনগণ বুঝতে পারে না, কোনটি প্রকৃত সংবাদ আর কোনটি কারও ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যে ছড়ানো পোস্ট।

পরিশেষে আমি বলতে চাই, সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রভাব বিস্তার করা, কর্মকর্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা এবং বড় পত্রিকার আইডি কার্ড নিয়ে ‘বড় সাংবাদিক’ হিসেবে পরিচয় দেওয়া সাংবাদিকতার নীতির পরিপন্থী। প্রকৃত সাংবাদিকরা জনকল্যাণে কাজ করেন, তারা জনস্বার্থে নিরপেক্ষ সংবাদ তুলে ধরেন। শুধু পরিচয় নিয়ে সাংবাদিক হওয়া যায় না, সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে সংযুক্ত থেকে পেশাগত দায়বদ্ধতা নিয়ে কাজ করাই প্রকৃত সাংবাদিকের কাজ। এ বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানো এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন, যাতে প্রকৃত সাংবাদিকতার মর্যাদা অক্ষুণ্ন থাকে।

Advertisement