ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি) ,ঢাকা প্রতিনিধি,শনিবার, ২৪ আগস্ট ২০২৪, ৯ ভাদ্র ১৪৩১ :
শিক্ষকদের বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর। বলা হয়ে থাকে, মানুষের জীবনে পিতা-মাতার পরই শিক্ষকের অবস্থান। সেই বিবেচনায় শিক্ষার্থীদের কাছে সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে কোনো কোনো শিক্ষকের অনৈতিক কাজে কলুষিত হচ্ছে পবিত্র শিক্ষাঙ্গন। সে তালিকায় এবার যুক্ত হয়েছেন রাজধানীর মোহাম্মদপুর মহিলা কলেজের প্রভাষক মো. উজ্জ্বল আলী। প্রেমের ফাঁদে ফেলে একের পর এক ছাত্রীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়েছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এই শিক্ষক। কেউ রাজি না হলে নানাভাবে মানসিক হয়রানি করেছেন। কোনোভাবে মুখ খুললে অনেককে হত্যার হুমকিও দিয়েছেন। যৌন নিপীড়নের অভিযোগে চাকরিচ্যুতও হয়েছেন ওই শিক্ষক। তা সত্ত্বেও বদলায়নি তার স্বভাব। বরং একই প্রতিষ্ঠানের আরেক শিক্ষকের সহায়তায় চালিয়ে গেছেন অনৈতিক কাজ। অবশেষে গত মঙ্গলবার রাতে মোহাম্মদপুরের আজিজ মহল্লায় হাতেনাতে ধরা পড়ে এলাকাবাসীর উত্তম-মধ্যমের শিকার হয়েছেন উজ্জ্বল। এ সময় বিক্ষুব্ধ এক ছাত্রী ওই শিক্ষককে জুতাপেটা করেন। কালবেলার হাতে আসা ওই ঘটনার একটি ভিডিওর সূত্র ধরে অনুসন্ধানে চমকপ্রদ নানা তথ্য বেরিয়ে এসেছে। অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য গতকাল বুধবার রাতে বারবার চেষ্টা করা হলেও মো. উজ্জ্বল আলীর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
জানা গেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ছাড়াও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করে মোহাম্মদপুর মহিলা কলেজ। সব মিলিয়ে প্রতি বছর কয়েক হাজার শিক্ষার্থী এ প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন। মূলত উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হওয়া ছাত্রীদেরই লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেন প্রতিষ্ঠানটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো. উজ্জ্বল আলী।
কলেজটির একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই শিক্ষক প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হলে ফোন নম্বর সংগ্রহ করেন। সেই নম্বর ব্যবহার করে মেয়েদের ফেসবুক আইডি বের করেন তিনি। এর মাধ্যমে অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করে একপর্যায়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলেন। পরে বিভিন্নভাবে ব্ল্যাকমেইল করে তাদের বাধ্য করেন শারীরিক সম্পর্কে। একাধিক ছাত্রীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালে উজ্জ্বলকে ওই কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে তিনি যোগদান করেন মতিঝিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজে।
মোহাম্মদপুর মহিলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষক কালবেলাকে বলেন, ‘আর্থিক অনিয়ম, নারী কেলেঙ্কারি ও বিধিবহির্ভূত কর্মকাণ্ডসহ হেন কোনো কুকর্ম নেই, যা প্রভাষক উজ্জ্বল করেননি। তিনি তিন বছর আগে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে বহিষ্কার হলেও সেই পদে এখনো কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। অধ্যক্ষ ফের তাকে এখানে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন।’
Advertisement
মোহাম্মদ মহিলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন বর্ষা আক্তার (ছদ্মনাম)। বর্তমানে স্বামীর সঙ্গে গাজীপুরে থাকেন। কালবেলাকে তিনি জানান, ‘স্যার আমাকে প্রচণ্ড হ্যারেজ করেছেন। নানা প্রলোভন দিয়ে আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করার চেষ্টা করেছেন। গভীর রাতে হুটহাট আমাকে ভিডিও কল দিতেন। না ধরলে গালাগাল করতেন। বিষয়টি এক ম্যাডামকে বলায় ওই লম্পট আমাকে গাড়ি চাপা দিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন।’
আরেক শিক্ষার্থীর মা কালবেলাকে বলেন, ‘উজ্জ্বল অত্যন্ত জঘন্য লোক। আমার মেয়ের সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করে শারীরিক সম্পর্ক করেছে। নিজের মেয়ের কথা এখন বললেও নিজের গায়েই লাগবে। কাউকে কিছু বলতেও পারছি না।’
চৈতি (ছদ্মনাম) নামের আরেক শিক্ষার্থী কালবেলাকে বলেন, ‘আমি যখন ফাস্ট ইয়ারে ভর্তি হই, তখনই উজ্জ্বল স্যার আমাকে টার্গেট করেন। নানাভাবে সেক্সুয়ালি হ্যারেজমেন্ট করতেন।’
Advertisement
হাতেনাতে আটক:
মোহাম্মদপুর মহিলা কলেজের এক ছাত্রী জানান, ‘প্রভাষক উজ্জ্বল আমাকে অনেকদিন ধরেই বিরক্ত করতেন। আমার বান্ধবীর সঙ্গেও একই কাজ করেছেন। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আমাকে তার সঙ্গে দেখা করতে বলেন। সেখানে যাওয়ার পর আমাকে হোটেলে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। আমি যেতে না চাইলে হাত ধরে জোর করে নিয়ে যেতে চান। তখন আমি চিৎকার করলে স্থানীয় মানুষজন এসে তাকে আটক করেন।’
পরবর্তী ঘটনার একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একটি চেয়ারে বসা প্রভাষক উজ্জ্বলকে একটি মেয়ে চড়-থাপ্পড় মারছেন। একপর্যায়ে পায়ের জুতা খুলে তাকে পেটাতে থাকেন। এ সময় ওই ছাত্রী উচ্চকণ্ঠে বলছিলেন, এই শিক্ষক তার বান্ধবীসহ অনেকের জীবন ধ্বংস করে দিয়েছেন।
উজ্জ্বলের অপকর্ম সম্পর্কে মোহাম্মদপুর মহিলা কলেজের এক শিক্ষক কালবেলাকে বলেন, ‘অনেক মেয়ে অধ্যক্ষ স্যারের কাছে অভিযোগ নিয়ে গেছেন। তবে স্যার এসব অভিযোগ তেমন গুরুত্ব দেন না।’
যোগাযোগ করা হলে মোহাম্মদপুর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আমিনুল হক কালবেলাকে বলেন, ‘আমাদের কলেজে এমন কিছু ঘটেনি। এমন কোনো অভিযোগ থাকলে আমরা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব।’
Advertisement
জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহফুজুল হক ভূঞা কালবেলাকে বলেন, ‘উজ্জ্বল এবং ওই ছাত্রী—দুজনই থানায় এসেছেন। দুপক্ষের কাছ থেকেই অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’