সাপের শরীরে কীভাবে প্রাণঘাতী বিষ তৈরি হয়, কী বলছে বিজ্ঞান (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,(টিভি),বিশেষ প্রতিনিধি ,সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪, ১০ আষাঢ় ১৪৩১ : সম্প্রতি দেশের অন্তত ২৮ জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে মারাত্মক বিষধর সাপ রাসেলস ভাইপার। এর দংশনে বাড়ছে মৃত্যুও। বিশেষ করে ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ, রাজশাহীসহ পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকায় এই সাপের উপদ্রবের কারণে জনমনে আতঙ্ক চরমে পৌঁছেছে। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে দেশবাসীর মধ্যেও। মানুষ দেখলে সাধারণ অন্য জাতের বিষধর সাপ পালিয়ে যেতে চেষ্টা করলেও সেখানে এই সাপগুলো অনেকটা আক্রমণাত্মক। কাছাকাছি যখন মানুষ চলে আসে এরা শব্দ করতে থাকে এবং কামড় দিয়ে বসে।

Advertisement

পদ্মার তীরবর্তী মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার এনায়েতপুর চরেই জেঁকে বসেছে রাসেলস ভাইপারের আতঙ্ক। গত তিন মাসে এই সাপের কামড়ে সেখানে মারা গেছেন ৫ জন। স্থানীয়রা পিটিয়ে মেরেছেন অন্তত ৩৫ থেকে ৪০টি সাপ।

ওই চরে ভুক্তভোগীর এক স্বজন জানান, তার বোনজামাই ভুট্টা আনতে গেলে সাপ ছোবল মারে। সেই সাপটি রাসেলস ভাইপার ছিল। পরে তার বোনজামাইকে ফরিদপুর মেডিকেলে নেয়া হয়েছিল। সেখানে অ্যান্টিভেনম দিলেও বিষক্রিয়া থামানো যায়নি। পরে রাজধানী ঢাকায় নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। এমন পরিস্থিতিতে অনেকের মনে জেগে উঠতে পারে প্রাসঙ্গিক একটি প্রশ্ন। রাসেলস ভাইপারের মতো বিষধর সাপগুলো কীভাবে নিজের শরীরে এমন প্রাণঘাতী বিষ তৈরি করে?

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সাপের বিষ হলো একটি অত্যন্ত বিষাক্ত লালা। সাপ তার মাথার পিছনের দিকে চোখের নিচে থাকা অতিক্ষুদ্র গ্রন্থিগুলোতে তৈরি করে এই বিশেষ লালা। এই গ্রন্থিগুলো সাধারণত পেশীবহুল আবরণে আবদ্ধ থাকে।

উৎপন্ন এই বিষ অ্যালভিওলি নামক অপেক্ষাকৃত বড় একটি গ্রন্থিতে জমা হয়। ছোবল দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই গ্রন্থি থেকে অতিসরু নালী দিয়ে সাপ এর ফাঁপা বিষদাঁত (ফ্যাং) দিয়ে শিকারের রক্তনালীতে বিষ ঢুকিয়ে দেয়।

Advertisement

নির্গত এই বিষে ২০ টিরও বেশি বিভিন্ন যৌগ রয়েছে, যা বেশিরভাগই প্রোটিন এবং পলিপেপটাইড। এই বিষ শিকারের স্নায়ুতন্ত্রসহ পেশিকে অকেজো করে দেয়।

বিভিন্ন জেলার কৃষকরা জানান, এই সাপের জন্য ব্যবস্থা নেয়া উচিত। কারণ তারা আতঙ্কে জমিতে কাজ করতে পারছে না। সব সময় তাদেরকে প্রাণভয়ে থাকতে হচ্ছে।

রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপ যাকে বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলেও পদ্মা তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায় আবারও দেখা মিলছে বিষধর এই সাপের। গবেষকরা বলছে, প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে স্বভাব পরিবর্তন করছে রাসেলস ভাইপার।

সাপ ও সরীসৃপ গবেষক বোরহান বিশ্বাস রমন বলেন, সঠিক সার্ভে না করেই বাংলাদেশ থেকে রাসেল’স ভাইপার বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের বিভিন্ন অঞ্চলে এই সাপটি টিকে ছিল। পরবর্তীতে গঙ্গা হয়ে পদ্মা দিয়ে ২০০৯-১০ সালে ভেসে এসে পদ্মার চরাঞ্চলে অবস্থান নেয়। পরে তারা বংশ বিস্তার করে এবং বন্যায় এগুলো বিভিন্ন জেলায় ভেসে যায়।

Advertisement

চন্দ্রবোড়া সাপের দেখা মিলছে যেসব এলাকায়, সেখানকার সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানালেন, সংকট আছে অ্যান্টি ভেনমের। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, অ্যান্টি ভেনেমের কোনো সংকট নেই।

প্রতীকী ছবি।