৫ লাখে মাদক ব্যবসা আর ২ লাখে ডিবির ওসিকে বদলি করান তিনি! (ভিডিও)

SHARE

রাজশাহীর চারঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুল আলমের দাপট, মন্ত্রী ছাড়া আর কারো কথাই শুনেন না তিনি। ফাইল ছবি/সংগৃহীত

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),রাজশাহী প্রতিনিধি ,রোববার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ : মাত্র পাঁচ লাখ টাকা দিলে অবাধে মাদক ব্যবসা করতে দেবেন রাজশাহীর চারঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুল আলম। শুধু তাই নয়, আরও দুই লাখ টাকা দিলে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার ওসিকে বদলির ব্যবস্থা করবেন তিনি। এক ‘মাদক ব্যবসায়ীর’ স্ত্রীর সঙ্গে বসে আলাপচারিতার এমন অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়েছে।

Advertisement

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে ওসি তার কোয়ার্টারের শয়নকক্ষে ডেকে নিয়ে সাহারা বেগম (২৮) নামের ওই গৃহবধূর কাছে ৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। এ ঘটনার পর থেকে ভয়ে বাড়ি ছাড়া ওই গৃহবধূ। এ বিষয়ে (১৬ সেপ্টেম্বর) শনিবার রাজশাহী এসপি বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগের অনুলিপির সঙ্গে ৬ মিনিটি ৪৪ সেকেন্ডের ওসির একটি অডিও রেকর্ড পাঠানো হয়েছে।


সাহারা বেগম চারঘাট থানার চামটা গ্রামের আব্দুল আলিম কালুর স্ত্রী। মাদক মামলায় গ্রেফতার হয়ে কালু বেশ কিছুদিন ধরে কারাগারে আছেন। জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি তাকে গ্রেফতার করেছিলেন।
লিখিত অভিযোগে তিনি বলেছেন, গত ১৩ সেপ্টেম্বর থানায় চাঁদাবাজির অভিযোগ করতে গেলে সাহারা বেগম ও তার ছেলে রাব্বিকে নিজের শয়নকক্ষে ডেকে নেন ওসি মাহবুবুল আলম। প্রথমে তাদের কাছ থেকে ওসি মোবাইল ফোন নিয়ে নেন। এরপর কথা বলতে শুরু করেন ওসি।

ফাঁস হওয়া ওই অডিও রেকর্ডে ওসি মাহবুবুল আলমকে বলতে শোনা যায়, ‘নির্বাচন করতে মন্ত্রী আমাকে গাইবান্ধা থেকে এখানে নিয়ে এসেছেন। আমি তার কথা ছাড়া কারও কথা শুনি না।’ এরপর চারঘাট এলাকায় গিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের ধরে মামলা দেয়ার জন্য জেলা ডিবির ওসির সমালোচনা করেন তিনি। বলেন, ‘দুই লাখ টাকা দেন, কালকেই ডিবির ওসিকে বদলি করে দিব।’
এরপর গৃহবধূ সাহারা বেগমকে ওসি বলেন, ‘আপনার স্বামী আমার অনেক ক্ষতি করে গেছে (ওসির বিরুদ্ধে এসপি অফিসে অভিযোগ করেছিলেন)।

Advertisement

এবার আপনার পরিবারের কাউকে ধরলে ১০ লাখ টাকার নিচে ছাড়াতে পারবেন না।’ এরপর ওসি বলেন, ‘এখনো তোমার গায়ে আচড় দেইনি। বহুত ফাঁকি দিয়েছো। কালকে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে আসবা। এখন সেরকম সময় নয় যে কেউ পয়সা খায় না। সবাই পয়সা খাচ্ছে। এমন কেউ বাদ নেই যে পয়সা খাচ্ছে না। পুরো জেলা পয়সা খাচ্ছে। এখানে আমার থানা চালাতে মাসিক অনেক টাকা লাগছে। আমি স্যারকে কথা দিয়ে এসেছি। স্যারের এখন কি কি লাগবে পাঁচ লাখ টাকা… সাত লাখ টাকা লাগবে। আমি বলেছি আমি চেষ্টা করবো। স্যারকে বলেছি, এখানে মাদক ছাড়া কিছু নেই।’

জেলা ডিবির ওসি আতিকুর রেজা সরকার আতিকের সমালচনা করে অডিওতে আরও বলতে শোনা যায়, ‘নির্বাচনের আগে শুভকে ধরতে পারবো না। কথা সব ভেঙে বলবো না। কথা সব হয়ে গেল; যদি আতিকের বদলি চাও দুই লাখ টাকা দাও। কালকেই আতিকের বদলি হয়ে যাবে।’

সাহারা বেগম বলেন, আমার স্বামী র্দীঘদিন ধরে পুলিশ ও র‌্যাবের সোর্স হিসাবে কাজ করেন। চারঘাট এলাকায় তার সোর্সের মাধ্যমে অনেক মাদক র‌্যাব-পুলিশ আটক করেছে। গত ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে তিনি সদস্য পদে নির্বাচন করেন। এরপর থেকে এলাকার মুক্তার, শুভ ও সাব্বিরের সাথে আমার স্বামীর বিরোধ বাধে। এর জের ধরে আমার স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করায় তারা।
জানতে চাইলে ওসি মাহবুবুল আলম বলেন, আমার কাছেও অডিওটা এসেছে। কিন্তু কিভাবে হয়েছে আমি জানি না। এরপর ওসি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে কল দেয়া হলেও তিনি আর ফোন ধরেননি।

Advertisement


রাজশাহীর পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান বলেন, কিছুক্ষণ আগে অডিওটা আমি পেয়েছি। এখনই বিষয়টি নিয়ে কথা বলছি। গুরুত্বর কিছু পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।