ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),আইন আদালত প্রতিনিধিসোমবার, ২৪ জুলাই ২০২৩ : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলার আসামি জাহাঙ্গীর আলম। তাকে নিম্ন আদালতের দেয়া ফাঁসির রায় বহাল রেখেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
Advertisement
ফাঁসি বহালের পর আসামি প্রাণভিক্ষা চেয়েছিলেন রাষ্ট্রপতির কাছে। সেই আবেদনও খারিজ হয়েছে। কিন্তু ফাঁসি কার্যকরে কারা কর্তৃপক্ষের প্রস্তুতি ঠেকাতে করেছিলেন রিট। সেই রিটও খারিজ হয়েছে। সেই খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে এবার গিয়েছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে।
যে আইনি প্রশ্নে (আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির না করার অভিযোগ) এই রিট করা হয়েছে তা পূর্বেই নিষ্পত্তি করেছে সুপ্রিম কোর্ট।
এ প্রসঙ্গে রোববার (২৩ জুলাই) আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম বলেন, আপিল ও রিভিউর রায়ে এই আইনগত প্রশ্ন নিষ্পত্তি করা হয়েছে। সেই একই বিষয়ে আপনি কেন বারবার আদালতে আসছেন? তাহলে এই আইনগত বিষয়ে আপিল বিভাগের রায়ে যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে তার কি কোনো মূল্য নাই।
ফাঁসি স্থগিত চেয়ে করা এক আবেদনের শুনানিতে জাহাঙ্গীরের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এস.এন গোস্বামীর উদ্দেশ্যে বিচারপতি এই মন্তব্য করেন। তখন ওই আইনজীবী বলেন, ওই রায় নিয়ে আমি কিছু বলছি না। সংবিধানের ৩৩(২) অনুচ্ছেদ বাস্তবায়ন হয়নি জাহাঙ্গীরের ক্ষেত্রে।
এ পর্যায়ে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম সুপ্রিম কোর্টের রায়ের অংশ বিশেষ তুলে ধরে বলেন, রায়ের এই অংশেই তো বিষয়টির নিষ্পত্তির করা হয়েছে। দেখুন, ভালো করে দেখুন।
আইনজীবী বলেন, আমি কোনো রায় রেফার করছি না। বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম বলেন, মামলায় এই আইনগত বিষয়ের উপর বিচারিক আদালতে তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহন হয়েছে। তারপর তাকে জেরা করেছেন আসামির আইনজীবীরা। এরপর ফাঁসির সেই রায় বহাল রেখেছে হাইকোর্ট। হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছে আপিল বিভাগ।
রিভিউ খারিজ হয়েছে আসামির। এরপরেও যদি বলেন এই আইনগত প্রশ্নের জবাব পাচ্ছি না তাহলে তা দুঃখজনক। এভাবে যদি আপিল ও রিভিউ নিষ্পত্তির পর একের পর এক আবেদন নিয়ে আদালতে আসেন তাহলে সারাবছরই কি এভাবে এই মামলা শুনতে থাকব।
এ পর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলি দুই অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট শেখ মো. মোরশেদ ও ব্যারিস্টার মেহেদী হাছান চৌধুরী বলেন, উনি (জাহাঙ্গীরের আইনজীবী) বললেই হলো যে রায়ে জবাব নাই। আমরা তো স্পষ্টতই দেখতে পাচ্ছি রায়ের মধ্যে এ বিষয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে এবং তার জবাবও দেয়া রয়েছে।
তারা বলেন, রাষ্ট্রপতির প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হয়েছে। এরপর ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করতেই দুই দফায় হাইকোর্টে রিট করেছেন আসামির স্বজনরা। ফাঁসি বহালে আপিল বিভাগের রায়কে জাস্টিফাই করার জন্য হাইকোর্টে রিট করার কোন সুযোগ নাই। কিন্তু আসামিরা সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছেন।
Advertisement
এরপরই বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ফাঁসি স্থগিত চেয়ে আসামির ভাইয়ের করা আবেদনের উপর ‘নো অর্ডার’ দেন। তখন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী শেখ মো. মোরসেদ বলেন, মাই লর্ড আবেদরও আবেদন রয়েছে।
আসামিরা ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়াকে যাতে আর বিলম্ব করতে না পারে সেই জন্য এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের আদেশ দরকার। এ কারনে বিষয়টি শুনানির জন্য সেখানে পাঠিয়ে দেন। তখন চেম্বার আদালতের বিচারপতি আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০৬ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারের ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হয় অধ্যাপক তাহেরের মরদেহ। এই মামলার চার্জশিটে বলা হয়, ড. তাহের জীবিত থাকলে কখনোই পদোন্নতি পাবেন না-এমন ধারণা থেকেই ষড়যন্ত্র ও খুনীদের প্রলোভন দিয়ে তাকে খুন করান মিয়া মো. মহিউদ্দিন।
এরপর তার পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক খুনিরা ড. তাহেরকে হত্যা করে লাশ ম্যানহোলে ফেলে দেন। ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল চারজনকে ফাঁসির আদেশ দেয়। হাইকোর্ট ২০১৩ সালে মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীরের ফাঁসি বহাল রাখেন। সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন দেয়া হয় নাজমুল ও সালামকে।
আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন। রায়ে বলা হয়, এই হত্যাকান্ড ছিলো নিষ্ঠুর প্রকৃতির। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মেধাবী শিক্ষককে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তা দেশের মানুষের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। এই হত্যাকান্ড ছিলো নজিরবিহীন মহা অপরাধ।
এই রায় পুনঃবির্বেচনা চেয়ে তিন আসামির করা রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগ। রিভিউ খারিজের আদেশ কারাগারে পৌছলে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চান আসামিরা। সেই প্রাণভিক্ষার আবেদনও নাকচ হয়ে যায়। নাকচের সেই চিঠি গত ৬ জুলাই রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌছে।
জেল কোড অনুযায়ী চিঠি হাতে পাওয়ার ২১ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে যে কোন ফাঁসি কার্যকরের নিয়ম রয়েছে।
এই চিঠি পৌছার পরই ফাঁসি স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন খুনী জাহাঙ্গীরের ভাই। এতে ফাঁসি কার্যকরের প্রস্তুতি থেমে যায়। তবে কোন সারবত্ত্বা না থাকায় রিটটি গতকাল সোমবার সরাসরি খারিজ করে দেন বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী ও বিচারপতি মো. আলী রেজার দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ।
আদালত বলেন, ফাঁসি বহাল রেখে আপিল বিভাগ যে রায় দিয়েছেন সেখানে আমাদের হাত দেওয়ার কোন সুযোগ নাই।
এর আগে গত মে মাসে খুনী মহিউদ্দিনের স্ত্রী ও জাহাঙ্গীরের ভাই ফাঁসি ঠেকাতে হাইকোর্টে আরেকটি রিট করেন। ওই রিট খারিজ করে বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বিচারপতি মো. বশিরউল্লাহর দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেন, এ ধরনের ফৌজদারি মামলায় আপিল বিভাগ কর্তৃক আপিল ও রিভিউ পিটিশন নিষ্পত্তির পর রিট আবেদন করার কোন সুযোগ নেই।